রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে : কৃষক মুন্সি মিয়ার দিন বেশ সুখেই কাটছিল। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ সবই ছিল তার। কিন্তু রাক্ষুসে শঙ্খনদীর এক ছোবলে নিঃস্ব হয়ে গেছেন মুন্সি মিয়া। নদী ভাঙনের শিকার মুন্সি মিয়া পরিবারের দু’বেলা ভাতের ব্যবস্থা করতে এখন দিনমজুরের কাজ করেন। শঙ্খের ভাঙনে এমন শিকার হয়েছেন আরো অসংখ্য মুন্সি মিয়া। জানা যায়, খর স্রোতা শঙ্খনদীর ভাঙন কয়েক বছরে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। অসময়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় শঙ্খের তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার জুঁইদন্ডী লামার বাজার, খুরুসকুল গোদারপাড়, সোলতান আহমদ চৌধুরী হাট, সাপমারা খালের মুখ ও চর জুঁইদন্ডী এলাকার কয়েকশ’ পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। পাশাপাশি এসব এলাকার প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক একর আবাদি জমিসহ স্কুল, মাদরাসা, হাট-বাজার, মসজিদ, কবরস্থান, শ্মশান নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের কারণে ভিটেবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকশ’ ঘরবাড়ি। বর্তমানে ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শত শত দুস্থ পরিবার। গত মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে খুরুসকুল গোদারপাড় থেকে লামার বাজার হয়ে চর জুঁইদন্ডী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন ও মানুষের দুর্দশার চিত্র দেখা গেছে। লামার বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মন্নান (৩৫) বলেন, গত ৫ বছরে জুঁইদন্ডী গ্রামের দুই-চতুর্থাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুই বছর আগে নদী ভাঙনে আমার পুরান বাড়ি ও ফসলি জমি শঙ্খের পেটে চলে যাওয়ার পর পাশের নতুন বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকি। এখন এ বাড়িও এ বছর শঙ্খের ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে। ভিটেমাটি হারানো আহমদ ছফা (৬৫) বলেন, আমরা আজ নিঃস্ব। অতি দুঃখ-কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করলেও আমাদের খোঁজ নেয়ার জন্য কেউ আসেন না। অথচ নির্বাচন আসলে নদী ভাঙনকে পুঁজি করে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে আর কারো খবর থাকে না। সূত্র আরো জানায়, শঙ্খের তীব্র ভাঙনে গত পাঁচ বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শান্তিরহাট, জুঁইদন্ডী আনোয়ারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, লামার বাজার, খুরুসকুল গোদারপাড়, সাপমারা খালের মুখসহ অসংখ্য মসজিদ-মন্দির, কবরস্থান, ঘরবাড়ি ও ১০ সহস্রাধিক একর আবাদি জমি। এছাড়া নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম মোহছেন আউলিয়া সড়কের দুই পয়েন্টে প্রায় এক কিলোমিটার অংশ। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এলাকাবাসীর যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে সোলতান আহমদ চৌধুরী হাট, গোদারপাড়, উত্তর জুঁইদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনোয়ারুল উলুম মাদরাসা, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, দক্ষিণ জুঁইদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি, কবরস্থান, মসজিদ হুমকির মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে ভেসে গেছে ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া প্রতিরক্ষা বাঁধ। এখানে জোয়ার এলে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। বেড়িবাঁধ ভাঙার শব্দে কাঁপন ধরায় নদী পাড়ের মানুষের মনে। ভিটেবাড়ি হারিয়ে অনেকেই বাধ্য হয়েছেন অন্যত্র চলে যেতে। আবার অনেকে বেড়িবাঁধের কিনারায় ঝুপড়িঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ এ সময়ে ঘর হারানো এসব পরিবারকে পুনর্বাসনেরও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বর্ষা মৌসুমের আগে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও সিসি ব্লক ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করা না হলে আনোয়ারার মানচিত্র থেকে জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এব্যাপারে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কায়ছার উদ্দিন বলেন, ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে জুঁইদন্ডী লামার বাজার এলাকায় এক কিলোমিটার ও খুরুসকুল গোদারপাড়ে ৫১০ মিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ সিসি বøক ডাম্পিং করা হবে। তাছাড়া প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জুঁইদন্ডীর চারপাশে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। সম্প্রতি এসব কাজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আশা করছি আগামী মাসেই কাজ শুরু হবে। উত্তর জুঁইদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সোমা চৌধুরী জানান, এ বছরই প্রতিরক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা না হলে স্কুল ভবন জোয়ারের পানিতে ভেসে যাবে। এতে করে শত শত শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান চৌধুরী খোকা বলেন, শঙ্খের ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। লবণাক্ততার কারণে কয়েকশ’ একর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। অভাব-অনটনে তারা দিনাতিপাত করছেন। ভাঙন প্রতিরোধে সহসা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাউবোসহ ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে জানান, ভূমি প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের একান্ত প্রচেষ্টায় আনোয়ারা উপক‚ল সুরক্ষায় সম্প্রতি ২৪০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প একনেক অনুমোদন দিয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই খুব শিগগির কাজ শুরু হবে। এব্যাপারে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।