পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ৫ মার্চ হয়ে গেল ১৪টি উপজেলা পরিষদ ও ৪টি পৌরসভা নির্বাচন। টিভি’র সচিত্র প্রতিবেদন ও প্রিন্ট মিডিয়ার খবরে দেখা যায়, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। উপজেলা এবং পৌরসভার ভোটে কোনো কেন্দ্রেই ভোটারের লাইন দেখা যায়নি। দিনের প্রথমার্ধ থেকেই অধিকাংশ কেন্দ্র ছিল ফাঁকা। নির্বাচন কমিশনের প্রতি ‘আস্থাহীনতায়’ ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ না থাকায় স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম হলেও বেশকিছু কেন্দ্রে জাল ভোট, প্রকাশ্যে সিল, কেন্দ্র দখল ও প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। ভোটার উপস্থিতি না থাকলেও দিন শেষে ব্যালট বাক্স ভর্তির অভিযোগের খবর মিডিয়ায় আসে। জাল ভোট দেয়ার অপরাধে ৩ আওয়ামী লীগ কর্মীকে কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। নানা অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি স্থানে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপির প্রার্থীরা। তারপরও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ‘শান্তিপূর্ণ ভোটে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি’। এ যেন সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীনের তৈরি বাঁশিতে ফুঁ দেয়ার নামান্তর। ভোট শেষে ইসি যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। স্থানীয় নির্বাচনে যা খুবই কম। এখন প্রশ্ন হলো কী জবাব দেবেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা? সিইসি হিসেবে শপথ নেয়ার পর তিনি ঘোষণা দেন ‘সব দলকে আস্থায় এনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবো’। সামান্য কয়েকটি উপজেলায় নির্বাচন-উপনির্বাচনের যে চিত্র মানুষ দেখলো তা কী ‘সব দলকে আস্থায় আনার নমুনা!’
মহামান্য প্রেসিডেন্টের সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পরই বিএনপির সিইসি কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে ‘আওয়ামী লীগ অনুসারী’র অভিযোগ তোলে। রাজনৈতিক দল হিসেবে এ অভিযোগ অমূলক নয়। কারণ, বিএনপির এক সময়ের সমর্থক ছিলেন সেই অজুহাতে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক দলের এসব স্ট্যান্ডবাজী। কিন্তু দেশের সাধারণ ভোটাররা চায় ভোটের অধিকার। ‘আমার ভোট আমি দেব/ যাকে খুশি তাকে দেব’ চেতনার বাস্তবায়ন। তারা নির্বিঘেœ ভোট দিতে চান এবং যাকে ভোট দেবেন তারা যেন নির্বাচিত হয়ে জনসেবা করতে পারেন সেটাই তাদের প্রত্যাশা। কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন সেটা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইসি’র নিরপেক্ষতা নিয়ে ছিল সর্বত্রই প্রশ্ন। নতুন ইসি’র প্রতি মানুষ আস্থা রাখতে চায়। কিন্তু ছোট্ট পরিসরে যে স্থানীয় নির্বাচনের চিত্র দেখা গেল তাকে কী আস্থা রাখা যায়?
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি’র শপথ নেয়ার দিন ‘নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে আস্থা অর্জন করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’ অভিমত ব্যক্ত করেন সাবেক সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদা। তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, ছহুল হোসাইন, সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন আহমদ, এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, মুনিরা খান, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, শারমিন মুর্শিদ প্রমুখ। এরা সবাই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে বাধ্যবাধকতা, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর খরচের হিসাব জমা দেয়া বাধ্যতামূলক, নিবন্ধিত আইন মানতে রাজনৈতিক দলগুলোর বাধ্যবাধকতার পিছনে এই ব্যক্তিদ্বয়ের অবদান অনস্বীকার্য। বছরের পর বছর ধরে কখনো চাপ প্রয়োগ করে-প্রস্তাব-আদেশ-উপদেশ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইসির নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য করেন এই বিশেষজ্ঞরা। এরা যখন বলেন ‘আস্থা অর্জন করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’ তখন বুঝতে বাকি থাকে না ইসি’র প্রতি দেশের মানুষের আস্থাহীনতা কোন পর্যায়ে। বর্তমান সিইসি নিজেও সব দলের আস্থা অর্জনের অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু ৫ মার্চের স্থানীয় নির্বাচনের চিত্র কী আস্থা অর্জনের নমুনা!
১৪ উপজেলা ও ৪ পৌরসভার নির্বাচনের চিত্র নিয়ে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলো ছবিসহ খবর প্রকাশ করেছে। কয়েকটি মিডিয়ার খবর এমন ‘বেশকিছু কেন্দ্রে জাল ভোট, প্রকাশ্যে সিল, কেন্দ্র দখল ও প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। জাল ভোট দেয়ার অপরাধে ৩ আওয়ামী লীগ কর্মীকে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি স্থানে নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। সবচেয়ে বেশি অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উপনির্বাচনে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের প্রকাশ্যে সিল মারতে দেখা যায়। এ ছাড়া পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়। অনিয়মের ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করে দেয়া হয়’ (যুগান্তর)। ‘সকাল নয়টা ২৮ মিনিটে কুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ১০টি ভোটকক্ষের মধ্যে ৩ নম্বর কক্ষের সামনে ছয়জন নারী ভোটার। বাকি কক্ষের সামনে কোনো ভোটার ছিলেন না। ঘড়ির কাঁটায় বেলা সোয়া ১১টায় কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বাখরাবাদ গ্যাস আদর্শ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১ নম্বর কক্ষে ভোট পড়েছিল ৩২টি। ওই কক্ষে ভোটার সংখ্যা ৫৩৭। দুপুর ১২টা ২৮ মিনিটে বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ নম্বর কক্ষে ভোট পড়েছে ২০টি। ওই কক্ষে ভোটার ৩২৬ জন। দুটি ভোটকেন্দ্রেই কোনো ধরনের সারি ছিল না। কেন্দ্রগুলো ছিল ফাঁকা। শুধু বাখরাবাদ ও বলরামপুর নয়, কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার অন্তত ১৫টি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের উপস্থিতি তেমনটা চোখে পড়েনি’ (প্রথম আলো)। ‘পাবনার সুজানগরে চেয়ারম্যান ও ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে কোনো কেন্দ্রেই ভোটারদের লাইন চোখে পড়েনি। ঈশ্বরদীতে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনেক কেন্দ্রে ভোটই পড়েনি। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নজিরবিহীন কম। অনেক কেন্দ্রে বিএনপি ও জাপার কোনো এজেন্টই ছিল না। কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে জাপার প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান দুপুর ২টায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। একইভাবে কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কট করে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেন বিএনপি প্রার্থী খ ম বদিউজ্জামান বদি। নিশানবাড়িয়ার রূপচাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জালভোট দেওয়ার অপরাধে জাহিদ খলিফা নামে একজনকে ১৫ দিনের কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত’ (সমকাল)। ‘বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদে উপনির্বাচনে ভোটারদের অনুপস্থিতিতে ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, পোলিং এজেন্টদের মারধর ও পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভোট কারচুপির ও মোটরসাইকেল বহরের ছবি ডিলিট করে দিয়ে পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ক্যামেরা ফেরত দেয়া হয়। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদে উপনির্বাচনে জাল ভোট ও এজেন্ট বের করে দেয়া হয়। বেলা ১১টায় বিবির বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত আবুল হাসানাত চৌধুরী নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে ৭ দিনের সাজা দেন। একই অভিযোগে দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউনিয়নের দিদার মডেল হাইস্কুল ভোট কেন্দ্রে মো. রিপন নামে আওয়ামী লীগের এক সমর্থককে ৫ দিনের কারাদন্ড দেয়’ (সংগ্রাম)। শুধু এগুলোই নয়, দেশের সবগুলো দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন মিডিয়ায় ৫ মার্চে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনের অনিয়মের অভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার ইমেজ কার্যত এখন তলানীতে। কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ ‘দলদাস’ মানসিকতা থেকে ইসির ক্ষমতা কমানোর নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসির ক্ষমতা থেকে কিছু কিছু আইন বাদ দেন। কাজী রকিব ক্ষমতাসীনদের তাবেদারী করে ইসির প্রতি মানুষের শুধু আস্থাহীনতাই সৃষ্টি করেননি; নির্বাচনের প্রহসন করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে কার্যত ধ্বংস করেছেন। সাংবিধানিক ভাবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে সরকারের ইচ্ছাপূরণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। ‘মেরুদন্ড সোজা’ প্রমাণ দিতে জোকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। নতুন ইসি গঠনের পর সিইসিকে নিয়ে বিএনপি যতই বিতর্ক করুক দেশের আমজনতা এবং বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা সিইসি নিজের সক্ষমতা দেখিয়ে ইসি’র হারানো ইমেজ উদ্ধার করে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। সিইসি নূরুল হুদার দৃঢ়চেতা বক্তব্যে মানুষ আস্থাশীলও হন। কিন্তু কয়েকটি উপজেলা-পৌরসভা নির্বাচনে যে চিত্র মানুষ দেখলো তা আস্থাশীল হওয়ার জন্য মোটেই সুখকর নয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে শুধু দেশের রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের দৃষ্টি নয়; আন্তর্জাতিক মহলও দৃষ্টি দিচ্ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, দাতাদেশ ও সংস্থাগুলো ইসির কর্মকান্ডে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। এমনকি তারা ইসির নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে পরোক্ষভাবে সহায়তাও করতে চান। এ অবস্থায় ইসির ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’র সুযোগ নেই। কাজেই ইসির ভাবমর্যাদা উদ্ধারে সিইসি’র অত্যন্ত নির্মোহ হওয়া অপরিহার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।