পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রথমবারের মতো আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়েছে। নতুন ইসিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। এছাড়া অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, সাবেক সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সচিব আনিছুর রহমান। প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। নতুন নির্বাচন কমিশন আজ বিকালে সুপ্রিম কোর্ট লাউঞ্জে শপথ নেয়ার কথা রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে ১০ জনের নাম সুপারিশের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে এর প্রধান করা হয়। এ ছাড়া সার্চ কমিটির অন্য পাঁচ সদস্য হন বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। নাম বাছাই করতে গত ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনটি বৈঠক করে সার্চ কমিটি। এসব বৈঠকে অংশ নেয়া বিশিষ্টজনরা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যোগ্য ব্যক্তিদের কিছু নাম প্রস্তাব করেন। সার্চ কমিটির কাছে মোট ৩২২ জনের নাম জমা পড়ে। এরপর তারা কয়েকটি বৈঠক করে ওই ৩২২ জন থেকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সার্চ কমিটি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে ১০ জনের এ তালিকা হস্তান্তর করেন।
এবারই প্রথম আইনের অধীনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে। এর আগে দু’বার সার্চ কমিটি গঠন করে ইসিতে নিয়োগ হলেও তখন আইন ছিল না। ২০১৭ সালে তখনকার সার্চ কমিটি যেদিন প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ তুলে দিয়েছিল, সেদিনই নিয়োগের আদেশ হয়েছিল। সর্বশেষ ইসির মেয়াদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। স্বাধীনতার পর এবারই আইন অনুযায়ী প্রথম ইসি গঠিত হলো। এ জন্য গত ২৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল
সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনাকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল সাংবাদিকদের কাছে দেয়া তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য দলকে নির্বাচনে আনা। আপেক্ষিক হলেও নির্বাচনকে সার্বজনীন রূপ দেয়া। নতুন নির্বাচন কমিশনের চেষ্টা থাকবে বিএনপির মতো দলকে যাতে নির্বাচনে আনতে পারে। আমাদের চেষ্টা থাকবে সবাইকে আস্থায় নেয়া। তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে নির্বাচন কমিশন এককভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে না। অনেকগুলো স্টেকহোল্ডার থাকে। সকলেই যদি সহযোগিতা করেন, রাজনৈতিক পরিবেশ যদি অনুকূল থাকে তাহলে কিন্তু আমাদের সফলতা আসবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল ৩ মার্চ ২০১৪ তারিখে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি একই মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ২০১৫ তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হিসেবে পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল ১৯৫৬ সালের ২১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে এলএলবি (অনার্স) এবং ১৯৭৮ সালে এলএলএম ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্তির সনদ লাভ করেন এবং ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। তিনি পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক পরিচালিত ১৯৮১ সালের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (জুডিশিয়াল) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং বিচার বিভাগীয় সার্ভিসে নিয়োগের জন্য যোগ্য হন। তিনি ১৯৮১ সালে মুন্সেফ (সহকারী জজ) হিসেবে যোগদান করেন। তিনি নিয়মিতভাবে চাকরির পরবর্তী উচ্চ পদে উন্নীত হন এবং অবশেষে ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ পদে উন্নীত হন। এছাড়াও তিনি সচিব, বাংলাদেশ আইন কমিশন চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। শ্রম আদালত এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড জুডিশিয়াল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. কাজী হাবিবুল আউয়াল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব ও উপসচিব হিসেবে ডেপুটেশনে কাজ করেছেন। ২০০০ সালের ডিসেম্বরে তিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং উইংয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০৪ সালে আইন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব নিযুক্ত হন। এরপর তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২৮ জুন ২০০৭ তারিখে সংসদবিষয়ক সচিব এবং ১৭ ডিসেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২৪ এপ্রিল ২০১০ তারিখে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগদানের আগে এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা
অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাস করা রাশিদা সুলতানার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে তিনি বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন।
আহসান হাবীব খান
২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খানকে তিন বছরের জন্য বিটিআরসির কমিশনার পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। এর আগেও তিন বছরের জন্য বিটিআরসির স্পেকট্রামের মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বিটিআরসিতে একটি প্রকল্পে এক বছরের জন্য মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এই সেনা কর্মকর্তা। আহসান হাবীব ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ইসির সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই। সবাই মিলেই কাজ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সর্বশেষ ১০ জুন ২০১৯ তারিখে সচিব হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মো. আলমগীর ১৯৮৬ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময় দেশে ও বিদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ)-এর প্রশাসক ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশ-বিদেশে বহু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনে মো. আলমগীর ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স এবং ১৯৮৩ সালে একই বিষয়ে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। মো. আলমগীর ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ তারিখে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের কাছে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আইন ও বিধি অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করব। সংবিধান যেটুকু ক্ষমতা দিয়েছে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। শপথ নেয়ার পর সবাই মিলে বসেই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে, অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করব।
মো. আনিছুর রহমান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব হিসেবে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে যোগদান করেছিলেন। এরপর ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি এক বছরের অবসরোত্তর ছুটিতে যান।
আনিছুর রহমান শরীয়তপুর জেলায় ৩১ ডিসেম্বর ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১৯৮৫ ব্যাচের সদস্য আনিছুর রহমান ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ সালে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিজীবনে তিনি সহকারী কমিশনার, উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কাজ করে মাঠ ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, অর্থ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব এবং উক্ত মন্ত্রণালয়ে ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল হতে সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মো. আনিছুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ হতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
নির্বাচন কমিশনের সবাই সরকারের সুবিধাভোগী -ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
নতুন নির্বাচন কমিশনের সবাই বর্তমান সরকারের সুবিধাভোগী উল্লেখ করে বিএনপি এ নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ যেসব নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকেই গত দশ বছরে এই সরকারের সুবিধাভোগী। সুতরাং এই সরকারের সুবিধাভোগীদের দিয়ে কমিশন করলে তো আগে যা ছিল তাই হবে। বিপরীতে তো কিছুই হবে না। তাই আমরা মনে করি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছি এই সরকারের অধীনে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক না কেন তারা কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। আর এই সরকার এবং এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশনই আমরা মানি না। এই দাবিতে আমরা এখনো অনড় আছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।