রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
রেবা রহমান, যশোর থেকে : ৩০ লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র আধুনিক চিকিৎসাস্থল যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (আড়াইশ শয্যা হাসপাতাল) সেবার মান একেবারে নিচে নেমে গেছে। চরম অনিয়ম ও অব্যবস্থার কারণে যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা। হাসপাতালের সামনে ও আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাপ্রার্থীদের ভিড় বাড়ছে। সেখানে অনেকে হচ্ছেন প্রতাড়িত। অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। নিয়মনীতির বাইরে সকল ক্ষেত্রে যে যার মতো অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। দেখার কেউ নেই। প্রাইভেট হাসপাতালের অনুমতি দেয়ার দায়িত্ব যাদের, তারা অনুমতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন। সেক্ষেত্রে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। গোটা স্বাস্থ্য খাতকে একটি শক্তিশালী চক্র নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারি হাসপাতালে সরকারের সরবরাহকৃত ওষুধ পর্যাপ্ত, হাসপাতালের আধুনিক ভবন আছে, পর্যাপ্ত ডাক্তার আছেন, বেড আছে, নার্স আছেন, আছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবকিছুই। কিন্তু নেই শুধু উপযুক্ত চিকিৎসা। সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশ আগে থেকেই হাসপাতালে দুর্নীতি চলে আসছে। বিশেষ করে আন্ত ও বহির্বিভাগে রোগী দেখার টিকিট বিক্রির টাকা ও আল্ট্রাসনোসহ বিভিন্ন খাত থেকে আদায়কৃত অর্থ লুটপাটের অভিযোগ আছে। সরকার যদি আয়ের খাতগুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করে তাহলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। হাসপাতালে সকল ক্ষেত্রে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা হলে চিকিৎসাপ্রার্থীরা উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা পেতেন। সেবার মান বাড়ত। একই সাথে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হতো। বিশেষ করে হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে ডিউটি করে উপরিআয়ের পথ বন্ধ হতো ডাক্তারদের। তবে কিছু ডাক্তার যাদের মানবিক গুণাবলী ও দায়িত্ববোধ আছে তারা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার চেষ্টা করেন বলে আউটডোর ও ইনডোরের চিকিৎসাপ্রার্থীরা জানিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে কর্মরত তালিকায় থাকা ৮৪ জন ডাক্তারের মধ্যে সিংহভাগই প্রাইভেট ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করেন। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতালে মাঝেমধ্যে রাউন্ড দেয়া নামকাওয়াস্তে চেম্বারে বসার বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন রোগী চিকিৎসকের অবহেলায় মারা যাওয়ার ঘটনার পর থেকে সরকারি হাসপাতালমুখী হতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে চিকিৎসাপ্রার্থী মানুষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চেষ্টা তো কম করছি না। চিকিৎসা ভালো হলে কেন রোগীরা ক্লিনিকমুখী হচ্ছে এর জবাবে কয়েকজন ডাক্তার বললেন, কিছু সমস্যা তো আছেই। অভিযোগ, হাসপাতালের একশ্রেণির ডাক্তার, কর্মচারী ও দালালরা হাসপাতালটি নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের পক্ষ থেকে রোগী এলেই কানে কানে বলে দেয়া হচ্ছে, পয়সা একটু বেশি খরচ হলেও উন্নত চিকিৎসা পেতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিকে যান। সহজ সরল মানুষ সেটিই করছেন। যশোর সরকারি হাসপাতালটিতে প্রতিদিন আউটডোর ও ইনডোর মিলে গড়ে ৩/৪শ’ রোগী আসেন। তাদের সবার ভাগ্যে চিকিৎসা জোটে না। ভর্তি রোগীরাও উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী হাসপাতালে ঢোকামাত্রই দালালদের খপ্পরে পড়ছেন। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে কলারম্যানের ভ‚মিকা পালন করছে হাসপাতালের দালালরা। এ খবর ডাক্তাররা রাখেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেন না। যশোরের ঝিকরগাছা এলাকা থেকে আসা রোগী বিলকিস বেগম ও তার স্বামী ইদ্রিস আলীর সাথে কথা হলো। তারা বললেন, এতদূর পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এলাম। ভাবলাম ভালো চিকিৎসা পাব। কিন্তু ডাক্তার সাহেবরা খুব ব্যস্ত। একজন ডাক্তার বলে দিলেন, ভালো চিকিৎসা পেতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিকে যান। চিকিৎসাপ্রার্থীদের কথা, সরকার প্রতি মাসে সরকারি হাসপাতালটিতে লাখ লাখ টাকা দিচ্ছে। অথচ চিকিৎসাপ্রার্থীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অনিয়ম, অব্যবস্থা ও দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। উপযুক্ত সেবা না পাওয়ায় চিকিৎসাপ্রার্থীদের মধ্যে প্রচÐ ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ হাসপাতালে যাবতীয় চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও রয়েছে। রয়েছে উন্নতমানের ওষুধ। সরকারি ডাক্তারদের অধিকাংশই প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দায়িত্ব পালনসহ দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন ব্যক্তিগত কাজে। এটি যশোরেই সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ অঞ্চলের মধ্যে যশোর একটা গুরুত্বপূর্ণ জেলা। যেটি এ অঞ্চলের মধ্যবর্তী ও নিকটবর্তী স্থান হওয়ায় শুধু যশোর নয়, ঝিনাইদহ, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, মাগুরা, শালিখা, নড়াইল জেলা ও উপজেলার বাইরে সাতক্ষীরা জেলা এলাকারও অনেক রোগী আসে। হাসপাতালের একজন স্টাফ নাম প্রকাশ করতে নিষেধ করে বললেন, রোগীদের অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু তিনি হাসপাতালের সাধারণ স্টাফ হওয়ায় ‘ডাক্তার স্যারদের’ কিছুই বলতে পারেন না। তার দেয়া তথ্য প্রতিদিন শত শত রোগী হাসপাতালে আসে। টিকিট নেয়া হয় ৫ টাকা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে অনেক রোগী ফিরে যান। হাসপাতালে ডিউটিরত অবস্থায়ও যদি প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক থেকে কোনো ডাক্তারের জরুরি ডাক পড়ে তাহলে হাসপাতালে রোগী অপেক্ষায় থাকলেও তড়িঘড়ি সেখানে চলে যান। বর্তমানে হাসপাতালটিতে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ওয়ার্ডের পরিবেশ খুবই নোংরা। সুইপার, আয়া ও ওয়ার্ড বয়রা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ আছে। রোগীদের সরবরাহকৃত খাবারের মান খুবই নি¤œ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, দায়িত্বে অবহেলা, রোগীদের ওষুধ দেয়ার বদলে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেয়াসহ অসংখ্য অনিয়ম রয়েছে হাসপাতালটিতে। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে যশোরের নিকটবর্তী ও যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় ছোটখাটো রোগেও আক্রান্ত রোগীদের একটা অংশ ছুটছেন ভারতে। অথচ বাংলাদেশে চিকিৎসা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে উন্নত। যাবতীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতিও রয়েছে। রয়েছে উন্নতমানের ওষুধ। অনেক ওষুধ ভারতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অথচ জমিজমা বিক্রি করে কিংবা ধারদেনা করে অনেকেই ছুটে যান চিকিৎসার জন্য ভারতে। প্রতিদিন বেনাপোল, দর্শনা ও ভোমরা সীমান্তপথে ভারতে যাতায়াতকারীদের মধ্যে বলা যায় সিংহভাগই হচ্ছে চিকিৎসাপ্রার্থী। হাসপাতালটিতে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন নেই। এনালগ এক্সরে মেশিন আছে ৩টি। যার দুটিই অচল। হাসপাতালের গেটের সামনে প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে ৭টি। আর হাসপাতালের আশেপাশে রয়েছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৯টি। এসব হাসপাতালে কি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। শুধু যশোর সরকারি হাসপাতাল নয়, জেলায় মোট ৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এর মধ্যে চৌগাছা, অভয়নগর ও কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। বাকি ৪টি ৩১ শয্যার। প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৫ থেকে ২০ জন ডাক্তারের প্রয়োজন। আছে মাত্র ৪/৫ জন করে। নার্স, আয়া, সুইপার ও ওয়ার্ড বয়সহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জনবল সংকট এখন চরমে। সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থা অনিয়মের পাশাপাশি মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ ও রোগী ধরার ফাঁদ পাতা দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ চিকিৎসাপ্রার্থীরা। দালালরা সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যেতে পারলে নির্দিষ্ট অংকের কমিশন দেওয়া হয়। একইভাবে যে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে প্রাইভেট হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা করা হলে সেখান থেকে দিনশেষে ডাক্তারের কাছে কমিশন চলে যায়। হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভরা বিভিন্ন উপঢৌকন নিয়ে তাদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশন করার জন্য ধরনা দেন। তাদের ভিড়ে রোগীরা ডাক্তারের দেখা পান না সহজে। যশোরের গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থার দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের, তারাও রয়েছেন একরকম জেগে ঘুমিয়ে। কখন যে ঘুম ভাঙবে আর কখন চিকিৎসাপ্রার্থীরা উপযুক্ত চিকিৎসা পাবেন তা কেউ বলতে পারছে না। সবকিছুই চলছে গতানুগতিক। এর অবসানের দাবি যশোরের চিকিৎসাপ্রার্থীদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।