Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাঁদা না দিলেই প্লটে নির্মাণ করা প্রাচীর ভেঙে দেয় সন্ত্রাসীরা

পূর্বাচল উপশহরে চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয়

| প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল শিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধীনে বরাদ্দকৃত ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লটের জিপিএস পরবর্তী উন্নয়ন কর্মকাÐে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন উপশহরের প্লট মালিকরা। স্থানীয় সংঘবদ্ধ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত চাঁদা না দিলেই খড়গ নেমে আসে তাদের উপর। কেউ কেউ প্লটের প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন বলে দাবি করছেন মূল খরচের ৩ থেকে ৬ গুণ টাকা। অধিক আর্থিক ব্যয় বহনে মালিকরা রাজি না হলেই তাদের প্লটের উন্নয়ন কাজ থেমে যায় তাদের বাধার মুখে। কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নিলেও রাতের আঁধারে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয় তাদের গড়া প্লটের প্রাচীর। ফলে ভেঙে দেয়া হয় তা। তাই নিরাপত্তাহীনতার মাঝে এগিয়ে চলছে পূর্বাচলের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লটের কাজ। রাজউক পূর্বাচল জোনাল কার্যালয় সূত্রে যায়, ইতোমধ্যে রাজউকের ব্যক্তিমালিকানাধীন বেশ কয়েকটি সেক্টরে বাড়ি নির্মাণের নকশা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৬০ ভাগ প্লট বুঝিয়ে দেয়ায় তাদের প্লটের জিপিএস কার্যক্রম পরবর্তী উন্নয়নের কাজ চলছে দ্রæতগতিতে । এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রভিত্তিক উন্নয়নমূলক কাজ সমাধান করছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্বাচল উপশহর এলাকায় ১ থেকে ২৩নং সেক্টর পর্যন্ত প্রায় ১২টি সংঘবদ্ধ চক্র প্লটের কাজ করিয়ে দেয়ার নাম করে বাড়তি টাকা আদায় করছে। এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু চাঁদাবাজ চক্র। তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলেই চলে তাÐবলীলা। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা চাঁদার শিকার হয়ে বাড়তি ঝামেলা মনে করে থানায় অভিযোগ করছেন না। তবে স্থানীয় আদিবাসীদের প্লটের কাজে চাঁদাবাজদের দৌড়াত্ম থাকায় রূপগঞ্জ থানায় রয়েছে শতাধিক অভিযোগ। এসব অভিযোগের বেশিরভাগই চাঁদাবাজি ও প্লটের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাঁধা ও সন্ত্রাসী কর্মকাÐ বিষয়ক বলে জানা গেছে। এমনই এক ঘটনায় গত সোমবার পূর্বাচল উপশহরের ১৭নং সেক্টর পিংলাইন এলাকার ঠিকাদার মোঃ রাসেল তার ২০৬নং রাস্তার ৪২নং প্লটে জিপিএস পরবর্তী সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে যায়। এ সময় ধামছি এলাকার শুক্কুর আলীর ছেলে চিহ্নিত চাঁদাবাজ সুমন (২৮), একই এলাকার সাত্তারের ছেলে রতন (২৬), সাইদের ছেলে রাশিদুল (২৪), আসামের ছেলে মানিক (২৭) আবুর ছেলে কায়েম (২৬) আরজুর ছেলে ফাহিম (২৫)সহ সহ ২৫/৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় তার মামাত ভাই মিঠুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে । মিঠুকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা রূপগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। শুধু তাই নয় দাবীকৃত চাঁদা না দিলে প্লটটির মাটি কেটে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয় চাঁদাবাজের দল। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে একই চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় রয়েছে আরো ৪টি অভিযোগ। এসব অভিযোগের পরও তাদের অপকর্ম না থামায় জিম্মি দশায় পড়েছে স্থানীয় প্লট মালিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ঠিকাদার জানান, পূর্বাচলের যে কোন প্লটের কাজ করতে শুরু করলেই এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজ প্রথমে কাজ চায়। আর এসব কাজের ব্যয় দেখানো হয় স্বাভাবিক খরচের চেয়ে ৪ থেকে ৬গুন বেশি। ফলে তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলেই রাতের বেলায় চালানো হয় হামলা। তাই নতুন নির্মাণ করা প্রাচীর ভেঙ্গে দেয়ায় ভয়ে কোন কোন প্রাচীরের কাজ বন্ধ রাখা হয়। অনেকে বাধ্য হয়েই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও তাদের কাছেই নতি শিকার করেন। ফলে জিম্মিদশাই যেন শেষ ভরসা। অপরএকটি সূত্রে জানা যায়, পূর্বাচলের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লটের উন্নয়ন কাজ করতে সরঞ্জামাদী সরবরাহ, বিদ্যুৎ ও পানি সংকট রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের নামে আকাশছোঁয়া দামের চুক্তি করতে হচ্ছে স্থানীয় একটি চক্রের সাথে। এসব কাজের সাথে প্লট মালিকদের বনিবনা না হলেই চাঁদা সংক্রান্ত অভিযোগ ও হয়রানি শিকার হচ্ছেন তারা। তাছাড়া ইট, বালি ও পাথর সরবরাহের নামেও রয়েছে প্রভাবশালী অপর একটি চক্র। তাদের অধীনে রয়েছে আবার সন্ত্রাসীবাহিনী। পূর্বাচলে পুলিশি টহল কম থাকায় দিন দুপুরে এসব চাঁদাবাজের দল আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব জানান দেয়। পরিত্যক্ত পতিত প্লটেই ঝুপড়ি ঘর করে তাতেই তাদের আস্তানা গড়ে তুলেছেন। এসব আস্তানায় সারাদিন জুয়ার আড্ডা হলেও রাতের বেলায় চলে মাদকসেবীদের আমোদরজনী। অভিযুক্তরা দাবি করেন, তারা কাজের বিনিময় টাকা আদায় করেন। এটা কোন চাঁদা নয়। পূর্বাচলের সকল নির্মাণ সামগ্রী বাড়তি টাকায় কিনতে হয় তাই খরচ বেশি। কাজ না দিলে কেউ কেউ খরচের নামে চাঁদা দাবি করেন বলেও স্বীকার করেন তারা। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, রাজউকের অধীনে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লটের কাজে চাঁদাদাবি সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাইরের ক্রেতা প্লট মালিকরা চাঁদার শিকার হলেও অভিযোগ না করায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। দুএকটি ঘটনায় অভিযোগ হলেও বিচারিক আদালতে তা গড়ায় না। এর পূর্বেই তারা মীমাংসা করে নেয়। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় চাঁদাবাজরা। তবে থানা প্রশাসন তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ