Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেল কর্মকর্তার অঢেল সম্পদ

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার শামসুল হক। মধ্যম সারির সরকারি কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব ধরবে না ক্যালকুলেটরে। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য কোটি কোটি টাকা। দুই দশকের চাকরিজীবনে বাংলাদেশ রেলের এই কর্মকর্তার সম্পদের হিসেব দেখলে যে কারোর চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের প্রকল্পে দুর্নীতি আর নিয়োগবাণিজ্য করেই তার উত্থান।
সূত্রমতে, শামসুল হক কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করে বাংলাদেশ রেলওয়েতে উপ সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। পদন্নোতি পেয়ে হন সহকারী প্রকৌশলী। বর্তমানে খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পে কর্মরত। অনুসন্ধানে জানা যায়, শামসুল হক মাঝারি মানের সরকারি চাকরিজীবী হলেও তার সম্পদ কোটি কোটি টাকার। ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় রয়েছে বিলাসবহুল সাতটি ফ্লাট-বাড়ি। কুষ্টিয়ায় পাঁচতলা অভিজাত মার্কেট ও ঢাকার মোহাম্মাদপুরের টোকিয়ো স্কোয়ার শপিংমলে দোকানসহ রয়েছে একাধিক বাণিজ্যিক ভবন। ব্যাংকের লকারে আছে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান অলঙ্কার। দামি প্রাইভেটে করেন চলাফেরা। অভিযোগ আছে, রেলের টাকা অনিয়ম আর নিয়োগবাণিজ্য করেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার কোর্টপাড়ার রাজু আহাম্মেদ রোডের ২০/৭ নম্বর আলিশান ঐশি মঞ্জিলে বসবাস করেন শামসুল হক। এই বাড়িটি প্রায় বিঘাখানেক জায়গার ওপর নির্মিত। চারিদিকে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা বাড়ির ভেতর আভিজাত্যের ছাপ। আধুনিক ভবনের সামনের ফাঁকা জায়গায় আয়েশী বিনোদনের জন্য খরচ করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা। বাড়িটি শামসুল হকের স্ত্রী শাহিন আক্তারের নামে।
শুধু ঐশি মঞ্জিল নয়, কুষ্টিয়া শহরে আরো একাধিক বাড়ি রয়েছে শামসুল হক দম্পতির। কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড়ে মৎস্য ভবনের বিপরীত পাশে আছে ৬ কাঠা জমিসহ আরো একটা বাড়ি। একতলা বাড়ির সামনে অনেকখানি ফাঁকা জায়গা। বাড়িটি ভাড়া দেয়া। কাস্টম মোড়ের মুরাদ নামের একজন বাড়িটি দেখাশোনাসহ ভাড়া আদায় করেন। এই বাড়িটিও শামসুল হকের স্ত্রীর নামে।
শামসুল হকের গ্রামের বাড়ি মিরপুর উপজেলার পোড়াদহের সুগন্দি বালিয়াসিসা গ্রামে। সুগন্দি বালিয়াসিসা প্রাইমারি স্কুলের অপর পাশে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল দুইতলা বাড়ি। বাড়ির নিচতলায় বসবাস করেন শামসুল হকের সেজো ভাই শরকত আলী। বাড়িটি তিনিই দেখাশুনা করেন।
গ্রামের স্থানীয়রা জানান, রেলের ইঞ্জিনিয়ার শামসুল বাড়িটি তৈরি করেছেন। বিভিন্ন উৎসবের সময় সেখানে তিনি থাকেন। গ্রামের বাড়ি হলেও শীতাতপ যন্ত্রসহ নানা অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে।
কুষ্টিয়ার কোর্ট স্টেশনের সামনের রোডে অবস্থিত পাঁচতলা বিশিষ্ট আলিফ লাম মার্কেট। বিলাসবহুল এই বাণিজ্যিক ভবনটি শামসুল হক এবং তার স্ত্রী শাহিন আক্তারের নামে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলিফ লাম মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, ৫ কাঠা জমির ওপর পাঁচতলা মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখান থেকে প্রত্যেক মাসে শামসুল হকের স্ত্রী শাহিন আক্তার ওরফে শাবানা ম্যাডাম প্রতি মাসে ৬৫ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করেন।
কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ার গোশালা রোডে ঢুকতেই ডান পাশে ১০তলা কেআরএল টাওয়ার। এই টাওয়ারের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার (৩এ, ৪এ) দুইটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক শামসুল হক। ফ্লাটের দলিল করা হয়েছে স্ত্রী শাহিন আক্তার ও দুই সন্তান এর নামে।
কেআরএল টাওয়ারের বাসিন্দারা জানান, ফ্লাট দু’টি ভাড়া দেয়া রয়েছে। মাঝে মাঝে তারা এসে ভাড়া নিয়ে যান। দেশের অন্যতম কাপড়ের হাট কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ বাজার। প্রতি হাটে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় এই কাপড়ের বাজারে। গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারে দুইতলা বিশিষ্ট মার্কেট রয়েছে শামসুল হকের। সেখানে তানিয়া গার্মেন্টস নামের দোকান রয়েছে। মার্কেটটি শামসুল হকের স্ত্রী শাহিন আক্তার ও দুই সন্তানের নামে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পোড়াদাহ বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মার্কেটটি কিনেছেন শামসুল হক। সে কোটি কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে নিউজ করে লাভ নেই। (দাবা) টাকা দিলেই সাংবাদিকরা ম্যানেজ হয়ে যায়।
নিজ গ্রাম পোড়াদহ সুগন্দি বালিয়াসিসা গ্রামের মাঠে ১০ বিঘা জমি আছে শামসুল হকের। জমির দলিল শামসুল হক ও তার স্ত্রীর নামে।
এ তো গেল কুষ্টিয়ার সম্পদ। শামসুল হক ঢাকায় গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। অভিজাত শপিংমলে রয়েছে একাধিক দোকান। বিলাসবহুল টাওয়ারে আছে একাধিক ফ্লাট। ঢাকার মোহাম্মাদপুর এলাকার জাপান গার্ডেন সিটির ১০ নম্বর বিল্ডিংয়ের ৩০২ নম্বর ফ্লাটের মালিক শামসুল হক। এই ফ্লাটের মালিকানা শামসুল হকের নিজের নামে। জাপান গার্ডেন সিটির ১৫নং বিল্ডিং এর ৬০৪ নম্বর ফ্লাট শামসুল হকের স্ত্রী শাহিন আক্তারের নামে।
ঢাকার মোহাম্মাদপুরে টোকিয়ো স্কয়ার শপিংমলের নিচতলায় রয়েছে দোকান। টোকিয়ো স্কয়ার শপিং মলের ১৪৩ নম্বর দোকেনের মালিক শামসুল হক। মিস কিউটি নামের দোকানটি শামসুল হকের স্ত্রী শাহিন আক্তারের নামে।
শামসুল হক ও তার স্ত্রী শাহিন আক্তার দম্পত্তি চলাফেলা করেন বিলাসবহুল প্রাইভেট কারে।
প্রিমিও এফ মডেলের দামি (ঢাকা মেট্রো গ ২৩-০২৭৬) কারটি শামসুল হকের স্ত্রী শাহিন আক্তারের নামে।
শামসুল হক ও তার স্ত্রী লেনদেন করেন ৭টি ব্যাংকে। ইসলামী ব্যাংক পোড়াদাহ, কুষ্টিয়া ও ঢাকা শাখায় ৪টি, সোনালি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় ৩টি হিসাব খোলা আছে তাদের। পোস্ট অফিসে রয়েছে ডিপোজিট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা, ইসলামী ব্যাংক ঢাকা-মোহাম্মাদপুর শাখা, আইএফআইসি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় শাহিন আক্তার ও শামসুল হকের নামে ব্যাংক হিসাব রয়েছে। অপরদিকে সোনালি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা, পূবালী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় শামসুল হক এর স্ত্রী শহিন আক্তার নামে ব্যাংক এক্যাউন্ট রয়েছে। পোস্ট অফিস, কুষ্টিয়া শাখায় ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে।
একটি সূত্রের দাবি, শতাধিক ভরি সোনার গহনা আছে সোনালি ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার লকারে।
এ ব্যাপারে শামসুল হকের সাথে একাধিকবার মোবাইলের যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। অবশেষে কুষ্টিয়া কোর্টস্টেশনের গেটম্যানের কক্ষে পাওয়া যায় শামসুল হককে। কিভাবে এতো সম্পদের মালিক প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টাও করেন।



 

Show all comments
  • Nur- Muhammad ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:৩২ এএম says : 1
    এই লুন্ঠনকারীদের কি বিচার হবে না। এই লুন্ঠনকারীকে দ্রুত গ্রেফতার করুন। জনগণের টাকা উদ্দার করুন। তাকে গ্রেফতার করা যত দেরী হবে, দেশের তত ক্ষতি হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মুহাম্মদ মুছা ৭ মার্চ, ২০১৭, ৯:১০ এএম says : 0
    দুর্নীতি বাজদের কঠোরভাবে দমন করতেহবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Ismail hossain ৭ মার্চ, ২০১৭, ১০:০৮ এএম says : 0
    এই লুন্ঠনকারীদের কি বিচার হবে না। এই লুন্ঠনকারীকে দ্রুত গ্রেফতার করুন। জনগণের টাকা উদ্দার করুন। তাকে গ্রেফতার করা যত দেরী হবে, দেশের তত ক্ষতি হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:৪৬ পিএম says : 1
    জনাব মোঃ ইসমাইল হোসেন, ধন্যবাদ।অশেষ ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sarder Akther ৭ মার্চ, ২০১৭, ২:১৬ পিএম says : 0
    এদের সৌদীর মতো বিচার হওয়া উচিত চুরির দায় হাতের কবজি কেটে দেয়া তা হলে মানুষে জানতে পারবে সে একটা বড় চোর ছিলো
    Total Reply(0) Reply
  • Md Meraj ৭ মার্চ, ২০১৭, ২:১৭ পিএম says : 0
    দুদক কি নিরুপায়, নাকি ম্যানেজ হয়েছে,,,
    Total Reply(0) Reply
  • Hafizur Rahman ৭ মার্চ, ২০১৭, ২:১৭ পিএম says : 1
    কি বুলার আছে আমাদের,উপর মহল কি দেখেনা
    Total Reply(0) Reply
  • এস, আনোয়ার ৭ মার্চ, ২০১৭, ৫:২২ পিএম says : 0
    একেতো সরকারী পাতি কর্তা তার উপর আবার রেলওয়ের। অঢেল সম্পদ তার থাকবে নাতো কি আমার মতো ভুখানাঙ্গাদের থাকবে.? এক কালের যোগাযোগ মন্ত্রী অলিকে বলতে শুনেছিলাম, চুরি বন্ধ করতে পারলে সোনার তৈরী রেল লাইন বসানো যেতো।
    Total Reply(0) Reply
  • এস, আনোয়ার ৭ মার্চ, ২০১৭, ৫:৫৫ পিএম says : 0
    রেলওয়ের একজন পাতি-কর্তার অবস্থা যদি এই হয় তবে সব জাতি-কর্তাদের অবস্থা গুলি কেমন একটু খুঁটিয়ে দেখা জরুরী বলে মনে করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • MAMOON ৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:৩৮ এএম says : 1
    Justice is the key to safe country.
    Total Reply(0) Reply
  • sumon ৮ মার্চ, ২০১৭, ১০:৩৯ এএম says : 0
    Government is silent in railway management. Why?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ