Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মজুচৌধুরীহাট রেগুলেটরের গেইট বন্ধ ল²ীপুরে পানির অভাবে বোরো আবাদ ব্যাহত

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম বাবুল (বাবর) ল²ীপুর থেকে : ল²ীপুরের মজু চৌধুরীরহাট রহমতখালী খালের ওপর নির্মিত দুইটি রেগুলেটর (সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা)-এর ২৮টি গেইটের মধ্যে ২৩টি বন্ধ। গেইট বন্ধ থাকায় জোয়ারের পানি আশপাশের খালে পৌঁছে না। পানি না থাকায় কৃষকরা খেতে সেচ দিতে পারছেন না। রোপণ করা যাচ্ছে না ধানের চারা। যে কারণে চলতি মৌসুমে বোরো চাষে ক্ষতির মুখে হাজারো কৃষক। তাছাড়া, বিকল্প বৈদ্যুতিক জেনারেটর না থাকায় জোয়ার-ভাটার সময় রেগুলেটরের সচল থাকা ৫টি গেইট ও যথাসময়ে খোলা ও বন্ধ করা যায় না।
জেলায় চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কি না তা নিয়ে কৃষদের মাঝে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ল²ীপুরে বোরো ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পানি মেলে জোয়ারের পানি থেকে। এখন নদীতে জোয়ার থাকলেও রেগুলেটরের বেশিরভাগ গেইট বন্ধ থাকায় পানি পাচ্ছেন না কৃষক। পর্যাপ্ত পানির অভাবে রোপণ করা যাচ্ছে না ধানের চারা। এতে ল²ীপুরের হাজার-হাজার কৃষক পড়েছেন বিপাকে। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা তাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, ল²ীপুরের মজুচৌধুরীর হাটের মেঘনা নদী সংলগ্ন রহমতখালী খালের ওপর নেভিগেশন লকসহ ১৪ ভেন্টের দুইটি রেগুলেটর রয়েছে। এতে মোট ২৮টি গেইট আছে। মূল রেগুলেটরের ১৪ গেইটের মধ্যে পাঁচটি জোয়ারের সময় খুলে দেয়া হয়। বাকি ৯টি গেটের মধ্যে একটির চেইন বিকল; বাকি আটটি বৈদ্যুতিক লাইন ও মোটরের ত্রæটির কারণে বন্ধ। পুরনো রেগুলেটরের ১৪টি গেইটই বন্ধ। এর মধ্যে তিনটি ভেঙে গেছে। যে কারণে ভাটার সময় মূল রেগুলেটরের সচল গেইটগুলো বন্ধ করলেও পানি ফের নদীতে ঢুকে পড়ে। এতে নদীর জোয়ারের পানি আশেপাশের খালে পৌঁছতে পারছে না। ফলে পানির অভাবে জমিতে লাঙল দিতে পারছেন না কৃষকেরা। এছাড়া সয়াবিন ও শাক-সবজি ক্ষেতেও সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, দুইটি রেগুলেটরের জন্য কোনো গেইট অপারেটর নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের একজন এমএলএস দীর্ঘদিন ধরে গেইট অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছেন। তার একার পক্ষে জোয়ার এলে গেইট খোলা ও ভাটার সময় বন্ধ করা সম্ভব হয় না। রেগুলেটরের প্লাব গেইটে মোটর নেই, চেইনকপ্পা দিয়ে গেট উঠা-নামা করাতে হয়। কিন্তু এ কাজে নির্দিষ্ট লোকবল না থাকায় শ্রমিক এনে গেট উঠাতে ও নামাতে হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক এনে তা করছে না। এছাড়া বিদু্যুৎলাইনে ত্রæটি ও রেডিয়েল গেইট উঠা-নামার মোটর বিকল হলে; মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও মেরামত করা হয় না বলে অভিযোগ কৃষকদের। অযতœ-অবেহলা ও লোকবল সঙ্কটের কারণে একের পর এক গেইট বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ল²ীপুরের হাজার হাজার কৃষক। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেগুলেটরের দুই পাশের গেইটের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। এক পাশের নাম রেডিয়েল গেইট, অন্য পাশের নাম প্লাব গেইট। রেডিয়েল গেইট বৈদ্যুতিক আর প্লাব গেই চেইন বিশিষ্ট। কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরেন্সের তোরাবঞ্জ এলাকা ও পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার ভবনীগঞ্জের চর উভুতি ঘুরে দেখা গেছেÑ খালে পানি নেই। শুকিয়ে আছে খাল। বোরো রোপণ করতে পারছেন না বেশিরভাগ কৃষক। কেউ কেউ বিকল্প উপায়ে পকুর-দীঘি থেকে পানি নিয়ে চারা রোপণের চেষ্টা করছেন। কৃষকরা জানান, বোরো মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার আগে-পরে চার থেকে পাঁচদিন জোয়ার আসে। ওই জোয়ারের পানি খালে ঢুকলে সে পানি পাম্প দিয়ে ক্ষেতে দেয়া হয়। কিন্তু সবগুলো গেইট খোলা না থাকায় পানি খালে পৌঁছায় না।
সদর উপজেলার টুমচর, কালির চর, চর উভুতি, ভবানীগঞ্জ, জকসিন, মিরিকপুর, উত্তর জয়পুর, দত্তপাড়া, তেওয়ারীগঞ্জ, কুশাখালীসহ জেলার পূর্বাঞ্চল এবং কমলনগর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষক নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও বোরো আবাদ করতে পারছেন না। যারা বিকল্প উপায়ে রোপণ করেছেন তারাও সেচ না দিতে পেরে বিপাকে রয়েছেন।
কৃষকরা জানান, মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে জমিতে ধানের চারা রোপণের কথা থাকলেও এখনো চারা রোপণ করা যায়নি। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল জাতের ধানের চারা বীজতলাতেই কুশি ছেড়েছে। যে কারণে ওইসব চারা আর রোপণ করা যাচ্ছে না। উত্তর লরেন্স কৃষি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ও সেচ মালিক- আবদুল গণি জানান, পানি না পেয়ে কৃষকরা হাহাকার করছেন। পানির অভাব না মিটলে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বেন।
ল²ীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বলেন, অভিযোগ পেয়ে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। বিষয়গুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ