দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুহাম্মদ আবদুর রহীম ইসলামাবাদী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
মাওলানা আরশাদ রাহমানী দীর্ঘকাল যাবৎ জামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে মাওলানা আবদুল হক হাক্কানী মাদ্রাসাটির নায়েবে মুহতামিম ও মাওলানা আরশাদ সাহেব মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফকীহুল মিল্লাত হযরত আল্লামা আলহাজ মুফতী আবদুর রহমান সাহেব (রহ.) উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ‘তানযীমুল মাদারিস দ্বীনিয়া’-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পটিয়া মাদ্রাসায় থাকাকালে তিনি পটিয়া মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ‘ইত্তেহাদুল মাদারিস’ নামক শিক্ষা বোর্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন। চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন।
তিনি ১৯৬৮ সালে বগুড়া জামিল মাদ্রাসা থেকে পটিয়া মাদ্রাসায় প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি পটিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, ফাতাওয়া, মানতেক ও ফালসাফা বিষয়ে তিনি খুবই দক্ষ ছিলেন। ফকীহুল মিল্লাত হযরত আল্লামা আলহাজ মুফতী আবদুর রহমান সাহেব (রহ.) ১৯৮৯ সনে পটিয়া মাদ্রাসা থেকে চলে আসেন এবং জামেয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর ও জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় খ-কালীন বুখারী শরীফের দরস দেন।
কয়েকজন বিজ্ঞ ও প্রবীণ আলেমের পরামর্শে ১৯৯১ সনে তিনি ঢাকায় উচ্চতর ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী রিচার্স সেন্টার বসুন্ধরা’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে এতে ‘তাখাস্সুস ফিল হাদীস, তাফসীর, তাজবীদ, দাওরায়ে হাদীস ও হিফজ বিভাগ সংযোগ করেন। এ লেখকের প্রথম দিকে দু’বছর এ প্রতিষ্ঠানে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়। আধ্যাত্মিক সাধনার নিরলস রাহবার :
১৯৯০ সনে তিনি হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা শাহ্ আশরাফ আলী থানবী (রহ.)-এর খলীফ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক (রহ.)-এর সংস্পর্শে এসে আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোযোগ দেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন।
বসুন্ধরা মাদ্রাসায় তিনি ‘খানেকায়ে এমদাদিয়া আশরাফিয়া আবরারিয়া’ নামে একটি খানেকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতি বছর মাদ্রাসায় ‘দাওয়াতুল হক’-এর কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইজতেমার ব্যবস্থা করতেন। সারা দেশ থেকে বহু আলেম ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা এতে যোগদান করে থাকেন। রমযানে করতেন ইতেকাফের ব্যবস্থা। সকলের পানাহারের ব্যবস্থাও করতেন তিনি।
বসুন্ধরা ইসলামিক রিচার্স সেন্টারে তিনি শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া (রহ.)-এর জীবন ও অবদান বিষয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করতেন। সেখানে শায়খ যাকারিয়া (রহ.)-এর সাহেবজাদা হযরত মাওলানা মুহাম্মদ তালহা কান্ধলভীসহ সাহারানপুরের বুযুর্গগণ তাশরীফ আনতেন। ফকীহুল মিল্লাত হযরত আল্লামা আলহাজ মুফতী আবদুর রহমান সাহেব (রহ.)-এর সাথে শায়খ যাকারিয়া (রহ.)-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
পটিয়ায় হযরত মাওলানা মুফতী আজিজুল হক (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হযরত শায়খ যাকারিয়া (রহ.)-এর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক কায়েম করেন। তাঁরও ইন্তেকালের পর এবং তিনি পটিয়া মাদ্রাসা থেকে চলে আসার পর হযরত শাহ আবরারুল হক (রহ.)-এর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক কায়েম করে ইসলাহ ও সুলূকের কাজ সম্পূর্ণ করে ইজাযত হাসিল করেন। শেষ জীবনে তিনি এ ময়দানে কাজ করেন। শতাধিক আলেমকে তিনি খেলাফত প্রদান করেছেন বলে জানা যায়।
শরীয়া ব্যাংকিং সংস্কারে অনুপম অবদান :
বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের আন্দোলনে প্রথম থেকে তিনি শরিক আছেন। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের শরীয়া কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি ভূমিকা রাখেন। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সকল ইসলামী ব্যাংক এর সাধারণ কমিটির সমন্বয়ে একটি সম্মিলিত সংস্থা গঠিত হয়। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব হযরত মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.), সহ-সভাপতি ছিলেন ফকীহুল মিল্লাত হযরত মাওলানা মুফতী আবদুর রহমান (রহ.)। খতীব সাহেবের ইন্তেকালের পর তিনি এ কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
ইসলামী ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদির ব্যাপারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় সেমিনার ও প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশ-বিদেশের বহু ইসলামী প-িত অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানের বিচারপতি মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী এ পথে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছেন।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের গবেষক আলেমগণের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক-বীমা সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। শায়খুল হাদীস আল্লামা সলীমুল্লাহ খান (পাকিস্তান) ও মুফতী আবদুস সালাম চাটগামী প্রমুখের এ বিষয়ে ভিন্নমত ও গবেষণা রয়েছে। আলেমগণের গবেষণা ও ভিন্নমতে বিরাট উপকার রয়েছে অধিক গবেষণা ও সতর্কতা লাভের জন্য। দেওবন্দী আলেমগণের মধ্যে মুফতী আবদুর রহমান সাহেবই একমাত্র বড় ব্যক্তি যিনি ইসলামী ব্যাংকের সাথে জড়িত হয়েছেন। এ ব্যাপারে গবেষণা করে গেছেন এবং সহযোগিতা করে এসেছেন।
বাংলাদেশের সকল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত। এ ব্যাংক শরীয়ত মোতাবেক পরিচালিত নয়। আন্তর্জাতিক ব্যাংকসমূহের লেনদেনও ইসলামী আদর্শভিত্তিক নয়। বাংলাদেশে যারা ইসলামী ব্যাংকের মালিক এবং যারা এতে কাজ করেন এবং লেনদেন করেন তারা লাভক্ষতি উভয় অবস্থায় কতটুকু শরীয়তের অনুসরন করেনÑ তাও গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতির ক্ষেত্রে তারা অনেক সময় শরীয়তের কড়াকড়ি অনুসরণ অনুকরণ করতে চান না বলে কারো কারো অভিযোগ। এ সকল বিষয়াবলীর পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দেয়া বিজ্ঞ আলেম ও গবেষকগণের দায়িত্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।