Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সোনামসজিদে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি নব্য কোটিপতিদের দখলে

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা শাহাবাজপুর ইউনিয়ন ৫নং উত্তর হরিরামপুর মৌজায় সোনামসজিদ স্থলবন্দর সংলগ্ন বালিয়াদিঘীর চারপাড়ের কোটি কোটি টাকার সরকারি খাস সম্পত্তি ও সায়রাত মহল স্থানীয় নব্য কোটিপতিরা দখল করে বালিয়াদিঘীর চারপাড়ে বড় বড় অট্টালিকা গড়ে তুলে রাখলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ ওইসব খাস সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারেনি আদৌ। ১৯৪৭ সালের তৎকালীন ভারতবর্ষ বিভক্তির সময় থেকে শাহবাজপুর ইউনিয়নের বালিয়াদিঘী এলাকায় প্রায় ৯১ দশমিক ৬৭ একর সম্পত্তির মধ্যে ৫২ দশমিক ৬৭ একর খাস সম্পত্তি ও সায়রাত খাস খতিয়ানের অধীনে থেকে যায়। ১৯৫০ সালের জমিদারি উচ্ছেদ আইনের প্রজাস্বত্বে জমিদারের উক্ত জমি তৎকালীন সরকারের খাস খতিয়ান অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত সোনামসজিদ এলাকাটির পরিবেশ ছিল জঙ্গল। কিন্তু সেই সময়ে কিছু পরিবার ভারত বিভক্তির কারণে উদ্বাস্তু ওই খাস সম্পত্তির উপরে খড়ের ঘর তুলে বসবাস করতে থাকে। বর্তমানে ওইসব পরিবার খাস সম্পত্তির ওপর পাকা ঘর নির্মাণ করেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর আরও বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই ৫২ দশমিক ৬৭ একর খাস সম্পত্তি ও সায়রাত মহলের উপরে জোর জবরদস্তি করে পাকা ঘর নির্মাণ করে সম্পত্তি দখল করে নেয়। কিন্তু সায়রাত মহল হওয়ায় অনেকেই ওই সম্পত্তি বন্দোবস্ত করতে পারেনি। তবুও কয়েকটি পরিবার ১৯৭৩-৭৪ সালে রাজস্ব বিভাগকে কাগজপত্র ভুল বুঝিয়ে বন্দোবস্ত নেয়। এরমধ্যে হাজী কুতুবুদ্দিন নামে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তিও হাল ২৬০ দাগে ২৬ শতাংশ ও ২৫৯ দাগে ৯ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত করে। ১৯৬২ সালের এসএ রেকর্ডে ৫৩ নং দাগে উক্ত সম্পত্তি খাস খতিয়ানে রেকর্ড হয়। ১৯৭২ সালের আরএস রেকর্ডের সময়ে ২১৭টি দাগে ঐ সমস্ত পরিবারের দখলকৃত সম্পত্তিকে জবর দখল বলে সেটেলমেন্ট পর্চায় উল্লেখ্য রয়েছে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে অদ্যাবধি ৬২ বছরেও কোন সরকারই এই খাস সম্পত্তি/সায়রাত মহল থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কিন্তু ১৮ মার্চ ২০০২ তারিখে ৬৭২ নম্বর স্মারকে জেলা প্রশাসন থেকে এসডিএম ৮০১/ঢওও/৭৩-৭৪ বন্দোবস্ত কেশ বাতিল করে ১৭জন অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়। ৩০ দিনের মধ্যে ঐ সমস্ত দখলদারেরা নির্মিত বাড়ি ঘর সরিয়ে না ফেললে পরবর্তীতে অবৈধভাবে নির্মিত ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হবে। এছাড়াও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব দপ্তর থেকে অবৈধ দখলদারদের তালিকা চেয়ে শাহাবাজপুর ইউনিয়ন তহসিল অফিসে জরুরিপত্র পাঠান। পত্র প্রাপ্তির পরে ১৩৮টি দাগে প্রায় ৪শ’ পরিবারের তালিকা তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ১৩৮ জন অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেও অজ্ঞাত কারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সূত্র মতে জানা যায়, একটি জালিয়াতি চক্র বালিয়াদিঘীর চারপাড়ের ৫২ দশমিক ৬৭ একর খাস সম্পত্তি নিজের নামে বন্দোবস্ত নেয়ার জন্য বড় ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এছাড়াও সোনামসজিদ এলসি স্টেশনের কাষ্টমস বিভাগের নিজ নামীয় রেকর্ডভুক্ত প্রায় ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। আদালত থেকে কাষ্টমসের পক্ষে ডিগ্রী পেলেও অজ্ঞাত কারণে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারছে না। অপরদিকে ১৯৯২ সালে সোনামসজিদ এলসি স্টেশন চালু হওয়ার পর থেকে এলাকার জমির মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭২ সালের জরিপের সময় কাষ্টমস নামীও সম্পত্তি ভুলক্রমে সরকারের ১নং খাস খতিয়ানে চলে যায়। ১৯৭৩-৭৪ সালে কাষ্টমস এর নামীয় খাস খতিয়ানে চলে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে আলহাজ্ব আব্দুর রহমান ৪০ শতাংশ স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত করে নেন। ১৯৭২ সালের আগে ১ একর ৪৪ শতাংশ সম্পত্তি যার দাগ নং ০৪ এবং খতিয়ান নং ০২ (এসএ রেকর্ড মোতাবেক) কাষ্টমস বিভাগের নামে ছিল। কাষ্টমসের নিজস্ব সম্পত্তি হওয়া সত্তে¡ও এক শ্রেণির জালিয়াতি চক্র শিবগঞ্জ রাজস্ব দপ্তরের সাথে যোগসাজস করে সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিয়ে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট তুলে দখল নিয়েছে। ১৯৯৫ সালে স্থানীয় কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পত্তির ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য পাওয়ার পর আদালতে মামলা দায়ের করে। প্রয়োজনীয় তদবিরের অভাবে মামলার রায় কাষ্টমসের বিপক্ষে চলে যায়। কিন্তু কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপিল করেননি বলে জানা গেছে। অন্যদিকে সম্পত্তি বন্দোবস্তকারীরা স্থানীয় হওয়ায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কিছু সম্পত্তি একটি ক্লাবকে অলিখিতভাবে হস্তান্তর ও ৩ কাঠা সম্পত্তি একজন প্রভাবশালী সিএন্ডএফ এজেন্টের কাছে বিক্রি করে দেয়। অদ্যাবধি সরকারি এসব সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য কোন ব্যবস্থা আদৌ গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা গেছে কাষ্টমসের সম্পত্তি বন্দোবস্তকারী আব্দুর রহমানের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দলিল ৬৭২ নং স্মারকের ১৮ মার্চ ২০০২ তারিখে বাতিল করা হয়েছে, যার বন্দোবস্ত কেশ নম্বর এসডিএম ৮০১/ ঢওও/৭৩-৭৪ এবং সেই সাথে কাষ্টমসের ৯,১০,১১,১২,১৩ হালদাগের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। রাজস্ব দপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান ১৯৭৩-৭৪ সালে রাস্তার পাশের খাদ (নয়নজুলি) বন্দোবস্ত করে, যা বন্দোবস্ত আইনের বহির্ভূত বলে রাজস্ব দপ্তর জানায়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন শিবগঞ্জ উপজেলা কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ আবদুস সামাদের নেতৃত্বে উত্তর হরিরামপুর মৌজার ১২ ও ১৩ নম্বর দাগের উপর অবৈধভাবে নির্মিত ৬টি দ্বিতল ভবন, ১টি গুদাম ঘর, ২টি বাড়িসহ ৪০টি ছোট-বড় দোকান উচ্ছেদ করা হলেও খাস সম্পতির উপর অবৈধভাবে নির্মিত ১৫টি দ্বিতল ভবন থেকে যায়। পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের চাপের মুখে ঐসব অবৈধ দখলদারকে খাস সম্পতি থেকে আদৌ উচ্ছেদ করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। সোনামসজিদকে স্থল বন্দর ঘোষণা করায় অনেক গুরুত্ব বেড়েছে এবং বর্তমানে স্থলবন্দরের এলাকা আরো সম্প্রসারণ করার জন্য ২০একর জমি প্রয়োজন। ইতিমধ্যে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ আরো ২০ একর জমি নেয়ার জন্য স্থানীয় ভ‚মি অফিসকে চাহিদা দিলেও স্থানীয় ভ‚মি অফিস কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি। অথচ স্থলবন্দর সংলগ্ন উত্তর হরিরামপুর মৌজায় বহু সরকারি খাস জমি বেদখল রয়েছে। এ ব্যাপারে শাহাবাজপুর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের তহসিলদার মবিদুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০১৫ সালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে ৪শ’ দখলদারকে উচ্ছেদের জন্য তালিকা প্রেরণ করা হয়েছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ