পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্মাণের সময়ই বাধা দেয়া উচিত ছিল : অ্যাটর্নি জেনারেল
বিল্ডিং সরিয়ে নিতে ৩ বছর সময় চাচ্ছি : সিদ্দিকুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার : ভাঙতেই হচ্ছে বিজিএমইএ ভবন। রাজধানীর হাতিরঝিলের সৌন্দর্যের বিষফোঁড়া খ্যাত পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন- বিজিএমইএ-এর আলোচিত ১৬তলা এই ভবন ভাঙার আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন গতকাল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে এ ভবনটি রক্ষার সর্বশেষ চেষ্টা রহিত হলো। হাতিরঝিলের জমি দখল এবং নকশাবহির্ভূতভাবে এই বহুতল ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালে বিগত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় পুরানো এয়ারপোর্ট রোডের বিজয় সরণির র্যাংগস ভবন আদালতের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়। আইনি লড়াইয়ে বিতর্কিত ভবনটি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়ে বিজিএমইএ নতুন ভবন নির্মাণ এবং অফিস সরানোর জন্য তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানানো হয়।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রিভিউ খারিজ করে দেন। এর ফলে বিজিএমইএ ভবন এখন ভাঙতেই হচ্ছে। একই সঙ্গে ভবনটি ভাঙতে কতদিন সময় লাগবে তা জানিয়ে একটি আবেদন করতে বলেছেন আদালত। আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি করে এ বিষয়ে আদেশ দেবে আপিল বিভাগ। এর আগে সৌন্দর্যমÐিত হাতিরঝিল প্রকল্পে বিজিএমইএ ভবনকে ‘একটি ক্যান্সার’ বলে আখ্যায়িত করেছিল হাইকোর্ট। আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন কামরুল হক সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটকারীর পক্ষে মনজিল মোরসেদ।
আপিল বিভাগের রিভিউ আবেদন খারিজের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, একটি অবৈধ জিনিস শুরু করার আগেই বাধা দেয়া উচিত। আমি বলব যে পরিবেশবাদীরা এসব নিয়ে কাজ করেন বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শুরু করার সময়ই বাধা দেয়া উচিত ছিল। তারা তো জানতেন। বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন একজন প্রধানমন্ত্রী এবং ভবনটি উদ্বোধন করেছিলেন অপর একজন প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তিনি আরো বলেন, এই ভবনটি দেশের রফতানি বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভবনটি হওয়ার সময়ই পরিবেশবাদীদের উচিত ছিল আদালতের দ্বারস্থ হওয়া। এখন ভবনটি হয়ে যাওয়ার পর এটি ঠিক নয়। চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ে হার হওয়ায় দেশের প্রধান রফতানি পণ্যের শিল্পোদ্যোক্তাদের সমিতি বিজিএমইএ-এর সামনে ভবনটি ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ থাকল না। বিজিএমইএর পক্ষে আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম বলেন, আদালত রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তবে ভাঙার জন্য ওই ভবন খালি করতে কি পরিমাণ সময় দরকার আদালত সে বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। আমরা মৌখিকভাবে তিন বছর সময় চেয়েছি।
এদিকে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ রকম একটা সেক্টর (খাত), যেখানে দেশে-বিদেশে ইমেজের (ভাবমর্যাদা) ব্যাপার আছে, সেখানে আমরা আদালতের কাছে অনুরোধ করছি যে, আমরা সরে যাব, কিন্তু আমাদের যৌক্তিক সময় দেয়া হোক। আমাদের যেন তিন বছর সময় দেয়া হয়। আমাদের পক্ষ থেকে ভবন সরিয়ে নিতে তিন বছর সময় আবেদন করা হবে। তারপর আদালত যে সিদ্ধান্ত দেন সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে ভবন ভাঙার নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ’র আপিল ২০১৬ সালের ২ জুন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ। একই বছর ৮ নভেম্বর আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে বিজিএমইএকে অবিলম্বে ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএকে অবিলম্বে নিজেদের খরচে ওই ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। তারা তা না করলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে। সেক্ষেত্রেও ভবন ভাঙার টাকা তারা বিজিএমইএর কাছ থেকে আদায় করবে। বিজিএমই ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনও রোববার খারিজ হয়ে গেল।
রায়ের অনুলিপি প্রকাশের এক মাসের ব্যবধানে রিভিউ করে বিজিএমইএ। গত ২ মার্চ শুনানির জন্য কার্যতালিকায় থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে সেদিন ‘নট টুডে’ করেন আদালত। সে হিসাবে ২ মার্চ আবেদনটি ফের কার্যতালিকায় এলে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ বিষয়ে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মুনিরউদ্দিন। পরদিন ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। হাইকোর্ট রায়ে বলেছিলেন, এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে।
হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন। পরে এ সময়সীমা বাড়ানো হয়। হাইকোর্টের দেয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলে, একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিজিএমইএর আইনের প্রতি আরো বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। তারা তা না করে আইনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে।
বিজিএমইএ ভবন এভাবে থাকলে পানিবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি ব্যাহত হবে। বিজিএমইএ ভবন ‘জলাধার’ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে নির্মিত, এই ভবনের নকশার অনুমোদন নেই এবং ভবনটি নিচু জমি ভরাট করে নির্মিত, যা রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অনুযায়ী নিষিদ্ধ। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের অভিযোগ ছিল, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে এবং উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক ‘জলাধার’ সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করার মাধ্যমে ওই ভবন তোলা হয়েছে। ভবনটি নির্মাণের সময় অনুমোদিত নকশাও অনুসরণ করা হয়নি বলে জানিয়েছিল রাজউক।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ি খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমি ক্রয় করে। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয়। ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্মাণকাজ শেষে ২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।