Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমতে পারে ইন্টারনেটের মূল্য

| প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


মার্কেট জরিপে কাজ করছে ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান : যুক্ত হচ্ছে নতুন ১৫০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ
ফারুক হোসাইন : বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মূল্য কমাতে কাজ শুরু করেছে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দিলেই কমে যেতে পারে ইন্টারনেটের মূল্য। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যয় বেশি উল্লেখ করে এ সেবা আরও কম খরচে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই সেবা কম মূল্যে দেয়ার জন্য উপায় খুঁজছে সংশ্লিষ্টরা। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি ব্রিটিশ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের ইন্টারনেট মার্কেট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কাজ দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ইন্টারনেট মার্কেট এই সেবায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় ও গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিবে। প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই নতুন করে ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণ হবে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ পঞ্চম সাবমেরিন ক্যাবলে (বাংলাদেশের দ্বিতীয়) সংযুক্ত হওয়ায় নতুন করে আরও ১৫০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাবে। নতুন এই ব্যান্ডউইথ যুক্ত হলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার মান এবং মূল্য অনেকাংশেই কমে যাবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এর আগেও ইন্টারনেট সেবার খরচ কমাতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে তা পৌঁছেনি। বরং ইন্টারনেট সেবার মূল্য ও গতি নিয়ে সব সময় অভিযোগ করে আসছেন গ্রাহকরা। কাক্সিক্ষত মূল্যে ইন্টারনেট সেবা এবং নির্দিষ্ট গতি না দেয়ার জন্য অপারেটরদেরই দায়ী করে আসছেন তারা। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মূল্য বেশি বলে অনেকে অভিযোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইন্টারনেট সেবা কম খরচে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সে আলোকে বাংলাদেশের বাজার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। তারা মার্কেট পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমা দিবে যে, কত কম মূল্যে আমরা এই সেবা দিতে পারি। তাদের প্রতিবেদন জমা দিলেই ইন্টারনেটের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
গ্রাহকদের পক্ষ থেকে ইন্টারনেটের উচ্চ মূল্য দাবি করা হলেও মোবাইল ফোন অপারেটরদের পক্ষ থেকে ভিন্ন তথ্য বলা হচ্ছে। তারা বলছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও মালয়েশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের গড় মূল্য বা ট্যারিফ কম। আবার শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার গ্রাহকরা বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা কম মূল্যে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পেলেও ওই সব দেশে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য মোবাইল অপারেটরদের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয় না। কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতে অপারেটররা নিজেরাই ট্রান্সমিশনের জন্য ফাইবার লাইন বসাতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি স্তরে ইন্টারনেট ভ্যালু চেইনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আয় ভাগাভাগি করে নিতে হয় অথবা খরচ বহন করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ বিষয়ে এনটিটিএন অপারেটরদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। এ ছাড়া ওই সব দেশের রেগুলেটরি ফ্রেইমওয়ার্ক মোবাইল অপারেটরদের স্পেকট্রাম ট্রেডিং এবং নিজস্ব ইন্টারনেট গেটওয়ে পরিচালনার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে। কিন্তু বাংলাদেশে এই অনুমতি নেই। দেশে অ্যাভারেজ রেভিনিউ পার ইউজার (এআরপিইউ) বা গ্রাহকপ্রতি গড় রাজস্ব আয়ও বিশ্বে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে মোবাইল অপারেটরদের ওপর আরোপিত শুল্ক বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন (ফ্লোর) এবং সর্বোচ্চ চার্জ (সিলিং) নির্ধারণ করে দেয়নি। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভয়েস কলের মতো ইন্টারনেট সেবায় সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ চার্জ নির্ধারণের বিষয়ে এখনো কাজ শুরু করেনি মন্ত্রণালয়। তবে পরবর্তীতে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এর আগে এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহ্জাহান মাহমুদ বলেছিলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন চার্জ নির্ধারণ নিয়ে এখনো কাজ হয়নি। তবে আইটিইউ (ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন)-এর সহায়তায় ইন্টারনেট সেবার কস্ট মডেল প্রস্তুতের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
মোবাইল অপারেটরদের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রতি এমবি (মেগাবাইট) ইন্টারনেটের গড় মূল্য/ট্যারিফ এখন প্রায় ২৫ পয়সা, যা গত দুই বছর আগেও ছিল ৬০ পয়সার মতো। একটি মোবাইল অপারেটরের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি মেগাবাইট ইন্টারনেটের মূল্য যদিও ২৫ পয়সার মতো কিন্তু এই প্রতি মেগাবাইট ইন্টারনেট সেবা গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে অপারেটরভেদে খরচ হয় ৫০ থেকে ৯০ পয়সার মতো। নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও স¤প্রসারণ, ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও স¤প্রসারণ, তরঙ্গ, লাইসেন্স ও বিটিআরসির ভাগ, মজুরি ও মালামাল এবং ডিলার কমিশন, সিম ট্যাক্স ভর্তুকি এসব খরচ ইন্টারনেটের দাম বাড়িয়ে দেয়। এসব কারণে  গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য আরো সাশ্রয়ী করার জন্য সরকার কয়েক ধাপে সাবমেরিন ক্যাবল থেকে পাওয়া ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য কমিয়ে দিলেও তাতে সুফল মেলেনি। অপারেটরদের তথ্য, গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে মোট যে খরচ হয় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের খরচ তার মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি গিগাবাইট ইন্টারনেট গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে কোনো অপারেটরের যদি সর্বমোট খরচ হয় ২০০ টাকা, তার মধ্যে সাবমেরিন ক্যাবল থেকে পাওয়া ওই ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের খরচ পড়বে এক টাকা মাত্র।
বিভিন্ন দেশের ইন্টারনেটের মূল্য থেকে জানা যায়, ক্যাম্বোডিয়ায় ইন্টারনেটের দাম সবচেয়ে কম। দেশটিতে প্রতি এমবি ইন্টারনেটের গড় মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ পয়সা। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কায় প্রতি এমবি ইন্টারনেটের গড় দাম ১৬ পয়সা, পাকিস্তানে ১৮ পয়সা, বাংলাদেশে ২৫ পয়সা, ভারতে ২৬ পয়সা, মিয়ানমারে ৩২ পয়সা, অস্ট্রেলিয়ায় ৪০ পয়সা, নেপালে ৪৮ পয়সা, মালয়েশিয়ায় ৫৪ পয়সা, জার্মানিতে ৬৬ পয়সা, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯৯ পয়সা ও যুক্তরাষ্ট্রে এক টাকা ৩৭ পয়সা।



 

Show all comments
  • MD mostafig ৬ মার্চ, ২০১৭, ১০:১৩ এএম says : 0
    আমার টাকার কিনা এমবি মেয়াদ শেষ হবার পর চলে যাবে কেন? এটা একটা ধোকা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইন্টারনেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ