দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুফতী পিয়ার মাহমুদ : কবরস্থ মৃত ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে উপকারী ও প্রিয় বস্তু হলো দুনিয়াবাসীর পক্ষ হতে তার জন্য প্রেরিত দোয়া, ইস্তিগফার ও বিভিন্ন ইবাদতের সওয়াব। তারা সর্বদা এই অপেক্ষায় থাকে, দুনিয়াতে রেখে যাওয়া তার প্রিয়ভাজনরা তার জন্য কখন ইসালে সওয়াব করবে। ইসালে সওয়াব করা হলে এটি তার নিকট দুনিয়া ও দুনিয়ার সমুদয় বস্তু হতেও প্রিয় হয়। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- “সমাধীস্থ প্রতিটি মৃত ব্যক্তি তার বাবা-মা, ভাইবেরাদর ও বন্ধু-বান্ধবের পক্ষ হতে দোয়া ইস্তিগফারের জন্য এভাবে অপেক্ষা করতে থাকে যেভাবে পানিতে ডুবন্ত ব্যক্তি অন্যের সাহায্য কামনা করে। যখন সে দোয়া প্রাপ্ত হয় তখন এই দোয়া তার নিকট দুনিয়া ও দুনিয়ার সমুদয় বস্তু হতে প্রিয় হয় এবং আল্লাহ তাআলা দুনিয়াবাসীর দোয়ার বদৌলতে তাকে দান করেন পাহাড়সম প্রতিদান। আর মৃত্যুদের জন্য জীবতদের হাদিয়া হলো তাদের জন্য দোয়া ইস্তিগফার করা। (মিশকাত : ২০৬) অন্য এক বর্ণনায় সাহাবী আবু হুরায়রা রা. বলেন, মহানবী সা. ইরশাদ করেন-“মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সকল প্রকারের আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিন প্রকার আমলের সওয়াব তখনও পৌঁছতে থাকে। ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. উপকারী ইলম, ৩. নেক সন্তান। (মেশকাত : ৩২) তিরমিযী শরীফের এক বর্ণনায় ইবনে আব্বাস রা. বলেন- এক ব্যক্তি (হযরত সাদ রা.) রাসূলুল্লাহর সা. খিদমতে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা ইন্তেকাল করেছেন, আমি যদি তার জন্য সদকা করি তাতে কি তিনি উপকৃত হবেন এবং এর সওয়াব তিনি প্রাপ্ত হবেন? জবাবে মহানবী সা. ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ, তিনি উপকৃত হবেন এবং এর সওয়াব তিনি প্রাপ্ত হবেন। একথা শুনে উক্ত সাহাবী বললেন, আমার একটি বাগান আছে। আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমার উক্ত বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম।” তিরমিযী : ১/৮৫। উসমান ইবনে আফ্ফান রা. বলেন, “মহানবী সা. যখন কোন মাইয়েতের দাফনকার্য সম্পন্ন করতেন তখন সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ইস্তিগফার কর এবং তার জন্য অটল অবিচলতার দোয়া কর। কারণ এখন তাকে সওয়াল-জওয়াব করা হবে। আবু দাউদ : ১/৭৫।
উপরোক্ত হাদিসগুলোর দ্বারা একথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইসালে সওয়াব তথা কোন আমলের সওয়াব কোন মৃত ব্যক্তির জন্য পৌঁছালে তা প্রাপ্ত হয় এবং এর দ্বার সে সীমাহীন উপকৃত হয় ও তার কবরের আযাব-গযব মাফ হয়। শুধু তাই নয়, একাধিক হাদিসে একথাও আছে যে, ইসালে সওয়াব করলে ইসালে সওয়াবকারী নিজেও উপকৃত হয় এবং সীমাহীন নেকির অধিকারী হয়। যেমন হযরত আলী রা.-এর বর্ণনায় এসেছে- মহানবী সা. ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি কোন কবরস্থানের পাশ দিয়ে অতিক্রম কালে ১১ বার সূরা ইখলাছ পাঠ করে মৃতদের বখশে দেয় তাকে মৃতদের সংখ্যা পরিমাণ সওয়াব দেয়া হয়। সূরা ইয়াসিন পাঠ করে বখশে দিলেও এমন সওয়াব পাওয়া যায়।” (দারাকুতনী ও তবারানী শরীফ সূত্রে ফাতওয়া শামী : ১/৮৪৪; তাহতবী আলাল মারাকী : ৩৪২) আবু হুরায়রার রা. সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি কবরস্থানে গিয়ে সূরা ফাতিহা সূরা ইখলাছ ও সূরা তাকাছুর পাঠ করে তার সওয়াব কবরস্থ মুমিন নর-নারীর জন্য ইসালে সওয়াব করে তার এ সকল কবরবাসী সুফারিশকারী হবে।”
(দারাকুতনী : ৪/৮২) হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত নবী করীম সা. ইরশাদ কনে “যে ব্যক্তি স্বীয় মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ করে সে তাদের পক্ষ থেকে তো হজ আদায় করলই পাশাপাশি তাকে অতিরিক্ত দশটি হজের সওয়াব দেয়া হবে।” (দারাকুতনী সূত্রে ফাতওয়া শামী : ২/৬০৭) শেষোক্ত হাদিসের দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় ইসালে সওয়াব করলে অনেক সময় মৃত ব্যক্তির চেয়ে ইসালে সওয়াবকারী নিজে বেশি উপকৃত ও লাভবান হয়। স্মর্তব্য : ইসালে সওয়াবের নির্দিষ্ট কোন পন্থা বা পদ্ধতি নেই। কুরআন খতম, সূরা ইয়াসিন, ইখলাছ, তাকাছুর ইত্যাদি যে কোন সূরা পাঠ করে কিংবা দরুদ, নফল নামাজ, রোজা, যাকাত, সদকা, হজ ইত্যাদিসহ যে কোন নফল ইবাদতের মাধ্যমেই ইসালে সওয়াব করা যায়। রদ্দুল মুহতার : ১/৮৪৪; হিন্দিয়া : ৫/৩৯৪; মিরকাত : ৪/৮২; ফাতওয়া রহীমিয়া : ৭/৯৪-৯৫। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।