Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মাদকে ভাসছে কুড়িগ্রাম : চলছে যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : মাদক ও জুয়ায় সয়লাব হয়ে গেছে কুড়িগ্রাম। জেলার প্রায় ৬০ ভাগ তরুণ-যুবক মাদক ও জুয়ায় আসক্ত বলে তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যের যোগসাজসে মাদকে সয়লাব কুড়িগ্রাম। জেলার ২৬৫ কিলোমিটার সীমান্তের প্রায় অর্ধশত পয়েন্ট দিয়ে অবাধে আসছে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকা মূল্যের মাদক। পানির স্রোতের মত আসা এসব মাদক বিক্রি হচ্ছে শতাধিক পয়েন্টে। সড়ক ও নৌপথে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কমপক্ষে ২০টি পয়েন্টে চলছে জুয়া ও যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য। পুলিশ, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর ও বিজিবি’র নেয়া নানা উদ্যোগেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাদক ও জুয়া। ফলে বাড়ি বাড়ি বেড়েছে অশান্তি ও চুরি। মাদকে জড়িয়ে পড়ছে নারীরাও। বিশেষ করে তরুণ ও যুবকদের নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
কুড়িগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ৬০ ভাগ তরুণ, যুবক মাদকাসক্ত। প্রতিদিন গড়ে কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের মাদক কুড়িগ্রামে প্রবেশ করে। এর সিংহভাগ চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। স্থানীয় ভোক্তারা গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার পিচ ফেন্সিডিল সেবন করে। এছাড়া ইয়াবা, মদ, গাঁজা, হেরোইন সেবীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সড়ক ও নৌ-পথে মাদকের বড় চালান চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ভুরুঙ্গামারীর জয়মনি থেকে পাথরের গাড়িতে ও গবাদি পশুর গাড়িতে মাদক চলে যায় সড়ক পথে। এছাড়া ফুলবাড়ীর গোড়কমন্ডল, বালারহাট, বাংটুরঘাট, কুলাঘাট-লালমনিরহাট হয়ে সড়ক পথে মাদক যায়। ২৫/৩০ জন মাদক সম্রাট পর্দার আড়ালে থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কোথাও কোথাও সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতার মদদ রয়েছে। এছাড়া যাত্রা-জুয়ার নামে মাদক বিক্রি ও সেবন চলে পাঁচগাছির চর, শিয়ালকান্দা, নাখারগঞ্জ, পাটেশ^রী বাজারের নিকট নদীর ধারে, ফুলবাড়ীর ধর্মপুর বাজার ও কাশিপুর এলাকায়। কুড়িগ্রামে ইয়াবার অন্যতম ব্যবসায়ী ড্রাইভার শাহীনকে সম্প্রতি ৫০ হাজার পিচ ইয়াবাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকা সাভারে গ্রেপ্তার করে। তার সহযোগী লিমন, বাবুয়া, চোর শামীম, রববেল, রাসেল, আলম, সামুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ২৯২টি মামলা রুজু করেছে। এতে আসামী করা হয়েছে ৪২৭ জনকে। এরমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ৩৩০ জন। এসময় উদ্ধার করা হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের মাদক।
অনুসন্ধানে ৯ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার চিলমারী উপজেলায় এখন মাদকের ছড়াছড়ি। এখানে মাদকের চালান প্রবেশের প্রধান পথ রৌমারী হতে নদী পথে জোড়গাছ ঘাট, রমনা ঘাট ও ফকিরেরহাট ঘাট। পুলিশি তৎপরতা বাড়লেই মাদক ব্যবসায়ীরা নৌ-পথ পরিবর্তন করে। আর সড়ক পথে মাদক আসছে উলিপুর উপজেলার মাটিয়াল আদর্শবাজার হয়ে চিলমারী সিনেমা হল মোড়। এছাড়া আরো ১০টি ভ্রাম্যমাণ পয়েন্টে মাদকের কেনাবেচা চলে পুলিশকে ম্যানেজ করে। বর্তমানে জোড়গাছ ভদ্রপাড়া এলাকার হুমায়ুন ও মাটিয়াল আদর্শবাজার এলাকার নয়ন প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। পেট্রোল পাম্পমোড় কাউয়াপাড়া এলাকার এরশাদ মাদকের নতুন ব্যবসায়ী। চিলমারীর শেষ সীমান্তে জনৈক বাদশার বাড়ী মাদক সেবিদের নিরাপদ আস্থানা।
নাগেশ^রী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের গাগলা ও দীঘিরপাড়, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের রায়গঞ্জে এবং ভিতরবন্দ ইউনিয়নে চলছে জুয়ার রমরমা ব্যবসা। রাজারহাট উপজেলার নাককাটি, ছিনাই ইউনিয়ন এবং চাকিরপশার এলাকায় জুয়া ও মাদক ব্যবসা চলে অবাধে। কুড়িগ্রাম সদরের আরডিআরএস এবং পাটেশ^রী এলাকায় নদীর তীরে চলছে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া।
উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন এবং বজরা ইউনিয়নের চরে চলছে যাত্রার নামে জুয়া ও মাদক। এছাড়া মাদক কেনাবেচা ও সেবন চলে মুন্সিপাড়া পেট্রোল পাম্প এলাকা, পাঠান পাড়া, পুরাতন সিনেমা হল, উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন এলাকা, হায়াত খাঁ ও পূর্ব মাথা ডাকবাংলা মোড়। এসব মাদক ব্যবসা ও জুয়া পরিচালনার সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যের পাশাপাশি সরকার দলের মদদ রয়েছে।
ভুরুঙ্গামারীতে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বানের পানির মতো আসছে মাদক। পাথরডুবি ইউনিয়নের সদ্যবিলুপ্ত ছিট মহল সেউতি কুরশায় গড়ে ওঠা বাংলা বাজার এখন ইয়াবার বাজার নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বেড়াকুটি বাজারের ২শ’ গজ পূর্বে বাঁশঝাড়ের মধ্যে এবং ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলার সীমান্তবর্তী ধর্মপুর নামক স্থানে প্রতিরাতেই বসছে জুয়ার আসর। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিরাতে থানা পুলিশ ১০ হাজার ও সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের নামে ৫ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। জুয়ার পাশাপাশি নিয়মিত মাদকের আসর বসে এখানে। রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার ১৬টি রুটে মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরমধ্যে ১৩টি স্থলপথ ও ৩টি নৌপথ রয়েছে। স্থল রুটগুলো হচ্ছে খাটিয়ামারী, বোয়ালমারী, চরেরগ্রাম, ফুলবাড়ি, ভুন্দুরচর, গয়টাপাড়া, নওদাপাড়া, ছাটকড়াইবাড়ি, সাহেবের আলগা, উত্তর আলগারচর, খেয়ারচর, রাজিবপুরের মিয়াপাড়া ও নৌরুটগুলো হচ্ছে, ভারতের মানকারচর থেকে কালোনদী দিয়ে ১০৬৬ নং আন্তর্জাতিক পিলার কাছ দিয়ে ভুন্দুরচর এলাকা ধরণী নদী দিয়ে জিন্জিরাম হয়ে ১০৬৭ নং আন্তর্জাতিক পিলার ঘেঁষে চুলিয়ারচর এলাকা এবং ১০৫০ নং আন্তর্জাতিক পিলার ঘেঁষে ভারতের শিশুমারা নদী দিয়ে ব্রহ্মপুত্র হয়ে বাংলাদেশের সাহেবের আলগা দিয়ে প্রতিনিয়ত সিন্ডিকেটের মাধ্যম্যে মাদক পাচার হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ