Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সীমা-সাক্কুর জন্য ফ্যাক্টর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অর্ধ লক্ষাধিক ভোট

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে অর্ধ লক্ষাধিক সংখ্যালঘু ভোটারের সমর্থন হেভিওয়েট দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা নাকি বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর প্রতীকে পড়বে তা নিয়ে দুই দলেই কষছে হিসাব মিলানোর অংক। ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসতে আরও ২৫ দিন বাকি। এরই মধ্যে সিটির দুই লক্ষাধিক ভোটারের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৫৫ হাজার ভোটের হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুই মেয়র প্রার্থী সীমা ও সাক্কুর এখন বড় টার্গেট সংখ্যালঘু ভোটের দিকে। এবারের নির্বাচনে ভোটের সমীকরণে শেষ পর্যন্ত সীমা-সাক্কুর জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে সংখ্যালঘু ভোট। তবে নগরীর আমজনতা মনে করছেন নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট যে বেশি টানতে পারবে নগরকর্তা হওয়ার সম্ভাবনাটা তারই বেশি।    
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়াডের্র দেড় শতাধিক এলাকায় হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছেন প্রায় ৫৫ হাজার। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৭৪ জন ভোটারের মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভোটার ছিল প্রায় ৪৭ হাজার। পাঁচ বছর পর এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৩৮৪ জন। সেই সাথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটার বেড়ে প্রায় ৫৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট বেশি। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট ব্যক্তি ইমেজ বা এলাকাভিত্তিক সম্পর্কের কারণে আওয়ামী লীগ ঘরনার প্রার্থীর বাইরে অন্য প্রার্থীরাও পেয়ে থাকত। কিন্তু এবারের হিসেবের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। কেননা সংখ্যালঘু বা হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট আওয়ামী লীগের প্রার্থীই পেয়ে থাকেন এমন প্রবাদ এদেশে চালু রয়েছে। আর এবারে যেহেতু স্থানীয় সরকারের এ সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক রয়েছে সেখানে তো সংখ্যালঘুর ভোট নৌকার দিকে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে কুমিল্লা সিটিতে হিন্দুদের একটি অংশের সমর্থন রয়েছে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে। জাতীয়তাবাদী হিন্দুদল নামে একটি সংগঠনও হয়েছিল কুমিল্লায়। বর্তমানে ওই সংগঠনের অস্তিত্ব না থাকলেও হিন্দুদের অনেকেই ধানের শীষের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন এমন দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের। রাজনৈতিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। তাই নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট বিএনপি প্রার্থীর জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে আগামী ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ, আন্তর্জাতিক সংগঠন মাইনরিটি রাইটস কমিশন ও স্থানীয় সংগঠন মাইনরিটি রাইটস ফোরামসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন নড়েচড়ে ওঠেছে। নির্বাচনের সময় আরেকটু ঘনিয়ে এলে ওইসব সংগঠনের নেতাদের কদরও বাড়বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের কাছে। দুই দলই তাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোটের জন্য সংখ্যালঘু সংগঠনের নেতাদের কাছে টানার চেষ্টা করবেন।
সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে গাংচরের ঋষিপট্টি, শুভপুর, নুরপুর, সাহাপাড়া, ঘোষপাড়া, সুজানগর, টিক্কারচর, সুইপার কলোনী, রবিঘোষপাড়া, হরিজনপাড়া, নমশূদ্র পাড়া, বৈরাগীপাড়া, তেলিকোনা, গোয়ালপট্রি, ছাতিপট্রি, গঙ্গাগঞ্জ, কাপড়িয়াপট্রি, ডিগাম্বরীতলা, অমূল্য পুকুরপাড়, নানুয়া দিঘীরপাড়, রানীর দিঘীপাড়, মুন্সেফবাড়ি, দেশওয়ালপিট্রি, ঠাকুরপাড়া, বৌদ্ধপাড়া, বাগানবাড়ি, মদিনা মসজিদ রোড, রাণীর বাজার, ঠাকুরপাড়া শশ্মান এলাকা, গোবিন্দপুর, ঝাউতলা খ্রিস্টানপাড়া, নজরুল এভিনিউ, তালপুকুরপাড়, মুন্সেফ কোয়ার্টার, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, সদর দক্ষিণের রাজাপাড়া, রায়পুর, ল²ীপুর, দয়াপুর, তারাপাইয়া, বাউবন্দ, রাজেন্দ্রপুর, মহেশপুর, উনাইসার, রামনগর, দক্ষিণ গোপিনাথপুর, বড় দুর্গাপুর, শ্রীমন্তপুর, মঠপুষ্কুরিণী, নন্দনপুর, জয়পুর, মনিপুর, লালমাই ও সালমানপুরসহ আরও কিছু এলাকা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ভোটার অধ্যুষিত। এসব এলাকাকে ঘিরে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে নিয়ে এখন থেকেই ভোটের হিসাব-নিকাশ শুরু করেছেন দুই দলের নেতা-কর্মী সমর্থকরা। দলীয় ভোটের বাইরে সাধারণ শ্রেণির ভোট ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট কীভাবে আয়ত্তে আনা যাবে এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মহলেই হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। বিএনপির মাথায় চিন্তা একটাই সংখ্যালঘু প্রায় ৫০ হাজার ভোট যদি আওয়ামী লীগের নৌকায় পড়ে তাহলে ভোটের হিসাব-নিকাশের সমীকরণটা কঠিন হয়ে পড়বে বিএনপি প্রার্থীর জন্য। অন্যদিকে সংখ্যালঘু ভোটের একটিও যাতে নিজেদের হাতছাড়া না হয় এজন্য পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুুত থাকতে আওয়ামী লীগ থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মাইনরিটি রাইটস ফোরামের সভাপতি অধ্যক্ষ তাপস কুমার বকসি বলেন, এবারের কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোট আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা পাবে। কেননা তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পাচ্ছেন। আর নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। আর সবচেয়ে বড় কথা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভোটাররা যে কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ। অন্যদিকে কুমিল্লা নগরীর হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ ক’জন বিশিষ্ট ব্যক্তি জানান, সংখ্যালঘু বা হিন্দু সম্প্রদায়ের সব ভোট আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাবে এমন ধারণা সঠিক না। বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুও পাবেন। কেননা গত পাঁচ বছর তিনি মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালীন হিন্দুসহ সংখ্যালঘু অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ বা আনুষ্ঠানিকতার কারণে এক ধরনের আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সাক্কুর কাছে কোনো কাজের জন্য গিয়ে খুশি হয়ে ফিরেছেন এমন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান লোকজন রয়েছে যারা ভোটের সময় সাক্কুকে ভোট দেবেন। এটা সাক্কুর ব্যক্তি ইমেজের কারণেই হয়তো পাবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ