Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ডলু নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে হচ্ছে ফসলের আবাদ

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস. হাবিব উল্লাহ, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে : অনাদর, দূষণ, দখল, অবহেলা আর ড্রেজিংয়ের অভাবে ডলু নদীর চিরচেনা যৌবন আর নেই। প্রমত্তা এই নদী বেশ কয়েক বছর ধরে পরিণত হয়েছে মরা খালে। দেশের অভ্যন্তরে উৎপন্ন হওয়া অন্যতম খর¯্রােতা এই নদীর স্থানে স্থানে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। আগে শুষ্ক মৌসুমে এই রকম চর জেগে উঠলেও বর্তমানে বর্ষা মৌসুম শেষ না হতেই জেগে উঠেছে এসব চর। এসব চরে চাষ হচ্ছে ধান, বাদামসহ নানা জাতের ফসল। চলতি মৌসুমে কৃষিজ সেচ ও নৌ-চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রতি বছর সামান্য বৃষ্টিতে নদীর পানি ফেপে-ফুলে ওঠে বন্যা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। নদীর নাব্য হ্রাস পেয়ে চর জেগে উঠার পেছনে ব্যপক হারে পাহাড় কাটা, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, নদীর তীরে ব্যাপক হারে বাদাম চাষকেই দায়ী করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ডলু নদীর ড্রেজিং করা না হলে এটি নাব্য হারিয়ে অচিরেই মরা খালে পরিণত হবেÑ মন্তব্য করেছেন অভিজ্ঞ মহল। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেÑ নদীটি এখনো জরিপের আওতায় না আসার কারণে এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডলু নদীর উৎপত্তিস্থল লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বার নাফারটিলা থেকে। সেখান থেকে আর একটি ঠংকাবতী খাল ডলু নদীতে এসে মিসেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে সর্পিল গতিতে এঁকে-বেঁকে নদীটি পশ্চিমমুখী বাঁক নিয়ে লোহাগাড়া-সাতকানিয়ার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিসেছে কর্ণফুলী নদীতে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সমতল, এখানে ব্যাপকভাবে কৃষিকাজ হয়। নদীটির উৎপত্তিস্থল পাহাড়ে হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণে পাহাড় থেকে মাটি ক্ষয় হয়ে ডলু নদীতে পড়ে। ফলে নদীতে বালু, পলি ও এঁটেল মাটির স্তর জমে নাব্য হ্রাস পায়। এছাড়া নদীর দু’পাড়ে ব্যাপক হারে বাদাম চাষের কারণে মাটি ক্ষয় হয়ে দিন দিন নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্য হ্রাস পাচ্ছে। দু’পাড়ের অংশসহ বালুর চর দখলে নিয়েছে স্থানীয়রা। এতে করে ডলু নদীর বুকে স্থানে স্থানে অসংখ্য ছোট-বড় চর জেগে উঠেছে। এছাড়া চাষাবাদের জন্য ডলু নদীর উপর সেচ কাজের নির্ভরশীল হলেও আসন্ন ও চলতি মৌসুমে পানি সংকটের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। নদীর পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছও বিলুপ্ত হতে চলেছে। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও নদীটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নদীর যৌবন ফিরে পেতে নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন ও নদীর তীরে ব্যাপক হারে বাদাম চাষ বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। ডলু নদীর বিভিন্ন পয়েন্টের বাজারঘাট ইজারাদাররা জানান, নদীর বুকে যেভাবে চর জেগে উঠছে তাতে মালামাল পরিবহনে বিঘœ ঘটছে। ডলু নদীর নাব্য পুনরুদ্ধারে ঠংকাবতীর মুখ থেকে শঙ্খমুখ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ড্রেজিং জরুরি বলে মন্তব্য করেন। সামান্য বৃষ্টিতে পানি ফুলে উঠে তলিয়ে যায় নদীর তীরবর্তী এলাকা। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে কয়েক হাজার চাষি ডলু নদীর পানি দিয়ে জমিতে সেচ দেন। প্রতি মৌসুমে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি বছরগুলোতে চাষিরা রবিশস্য ও বোরো চাষে নির্দিষ্ট স্থান থেকে আগের মত পানি পাচ্ছেন না। চাষের পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। গত কয়েক বছরে ব্যাপক হারে নদীর ন্যাব হ্রাস পাওয়ায় মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং কৃষিজ সেচ কাজে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এলাকাবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ