পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : যে কোনো সময় আবার জ্বলে উঠতে পারে পুরান ঢাকার কোনো না কোনো কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখা। সে আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারে মানবদেহ, স্বপ্ন কিংবা সংসার। জ্বলন্ত আগুনের উপর বসবাস আমাদের, কখন জ্বলে ওঠে সে চিন্তায় একটু আরামে রাতের বেলায় ঘুমও আসে না দু’চোখে। কথাগুলো বললেন পুরান ঢাকার আগা সাদেক লেনের বাসিন্দা মোহাম্মদ জোহারুল কবির। পুরান ঢাকার অলিগলিসহ প্রধান প্রধান সড়কে যুগ যুগ ধরেই গড়ে উঠেছে রাসায়নিক পণ্যের বৈধ-অবৈধ গুদাম। সেসব গুদাম নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর একরকম হিসাব, আর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর হিসাব অন্যরকম। বাস্তবিক অর্থে কারো সাথে কারো হিসাবের মিল নেই। হিসাবের দুস্তর ফারাকের মধ্যেই বৈধ-অবৈধ রাসায়নিকের গুদাম নিয়ে বছরের পর বছর বাণিজ্য করছে সুবিধাবাদীরা।
এ অবস্থার মধ্যেই জনদাবির প্রেক্ষিতে পুরান ঢাকার এসব জ্বলন্ত আগুনের সুপ্ত কুন্ডলীগুলো সরাতে ১ র্মাচ থেকে অভিযান শুরু হওয়ার কথা ছিল। ওইদিন পরিবহন ধর্মঘট থাকার কারণে প্রয়োজনীয় পুলিশ না পাওয়ায় এ অভিযান শুরু করা যায়নি বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার ইনকিলাবকে বলেন, ১ মার্চ থেিেকি রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ রাসায়নিকের গুদাম অপসারণের লক্ষে অভিযান শুরু করার কথা ছিল। ওইদিন রাজধানীসহ সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট থাকার কারণে আমরা প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স পাইনি। যে কারণে আমাদের ওইদিনের অভিযান স্থগিত করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন থেকে এ অভিযান আবার শুরু করা হবে। কোন দিন থেকে শুরু করা হবে সেটা ঠিক এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। মেয়র মহোদয় দেশের বাইরে থাকার কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। গতকাল মেয়র দেশে এসেছেন, আমরা তার সাথে কথা বলে দিন ঠিক করে নেব।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ এ উচ্ছেদ অভিযানে একযোগে মাঠে নামবে পাঁচটি সংস্থা। এর আগে তালিকার কাজ শেষ করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। তারাই রাসায়নিক ব্যবসা ও গুদাম বৈধ করার বৈধ কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরান ঢাকায় রয়েছে ২৫ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন বা রাসায়নিক পণ্যের গুদাম। এসবের মধ্যে ১৫ হাজার আছে খোদ বাসা-বাড়িতেই। মাত্র আড়াই হাজার গুদামকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে সিটি করপোরেশন। বাকি ২২ হাজারের বেশি গুদামই অবৈধ। ২০০ ধরনের ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের ব্যবসা চলে সেসব গুদামে।
জানা গেছে, পুরান ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক ভবনের নিচতলার পার্কিং স্পেস ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক গুদাম হিসেবে। কিছু বাড়িতে রাসায়নিক পণ্যের কারখানাও আছে। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক গুদামের অগ্নিকান্ডে ১২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। এ ছাড়া দগ্ধ হয়েছিল আরো শতাধিক মানুষ। এ ঘটনার পর নিমতলী থেকে কিছু গুদাম ও কারখানা সরানো হলেও পুরান ঢাকার অন্য এলাকা থেকে খুব বেশি সরেনি।
পুরান ঢাকার এসব গুদামে রয়েছে গিøসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রোস, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোইলসহ ভয়ঙ্কর রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ। এসব রাসায়নিক সামান্য আগুনের স্পর্শ পেলেই ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। এতে করে পুরান ঢাকার মানুষ মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছেন। গত কয়েক বছরে রাসায়নিক সংশ্লিষ্ট কারণে রাজধানীতে যতগুলো অগ্নিকান্ড ঘটেছে, তার সবই ঘটেছে পুরান ঢাকায়। সর্বশেষ গত শনিবার ইসলামবাগে একটি প্লাস্টিকের গুদামে অগ্নিকান্ডে তিনজন পুড়ে মারা যান।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, নিমতলীর অগ্নিকান্ড স্মরণকালের ভয়াবহ ঘটনা। এ ঘটনার পরও পুরান ঢাকায় অগ্নিকান্ডজনিত প্রাণহানির ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিদিন সেখানকার কোনো না কোনো রাসায়নিক কারখানা ও গুদামে কর্মরত শ্রমিকরা দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে আসেন। এদের মধ্যে প্রতিদিন একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বেনু বলেন, আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেয়ার দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। আমরা চাই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এবারের উদ্যোগ সফল হোক।
পুরান ঢাকার নিমতলী, বংশাল, আগা সাদেক লেন, আলাউদ্দিন রোড, চকবাজার, লালবাগসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বহুতল ভবনের গাড়ি পার্কিং স্পেস বা নিচতলায় রাসায়নিক গুদাম রয়েছে। এসব ভবনের অন্যান্য ফ্লোরে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকছেন মধ্যবিত্তরা। এদের অনেকেই ছোট চাকরি অথবা ব্যবসা করেন। এ ছাড়া ছোট-বড় কোম্পানির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিছু ফ্লোর। একাধিক ভবনে উপরের বিভিন্ন ফ্লোরে প্লাস্টিকের কারখানা দেখা গেছে।
জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, ইসলামপুর ও ইসলামবাগসহ আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করে আবাসিক ভবনে গড়ে ওঠা ঝুঁঁকিপূর্ণ চার শতাধিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করেছে। এসব গুদাম ও কারখানার অধিকাংশেরই বৈধ কাগজপত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নেই।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২৪ জন সদস্য চারটি ইউনিটে ভাগ হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অনুসন্ধান করে এ তালিকা তৈরি করেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, কেমিক্যাল গোডাউনের ৯৮ ভাগই অবৈধ। মাত্র দুই ভাগ গোডাউনের অনুমোদন রয়েছে। সেসব গোডাউন রয়েছে বুড়িগঙ্গার ওপারে। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস চাইলেও এসব গোডাউন উচ্ছেদ করতে পারে না। উচ্ছেদ করতে হলে পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও বিস্ফোরক পরিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তা প্রয়োজন।
বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল ইসলাম বলেন, ঝুঁঁকির কথা মাথায় রেখে পুরান ঢাকায় নতুন করে কোনো কেমিক্যাল গোডাউনের লাইন্সেস দেয়া হচ্ছে না। পুরনো লাইসেন্সও নবায়ন করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, অনেক কেমিক্যাল ব্যবসায়ী কেরানীগঞ্জের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় গোডাউন তৈরি করেছেন। বাকি যেসব ব্যবসায়ী এখনো পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় আছেন, তাদের সরিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
কামরুল ইসলাম জানান, মেয়র সাঈদ খোকনের ইচ্ছাতেই পুরান ঢাকা থেকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের দোকান ও গুদাম উচ্ছেদের পরিকল্পনা। এ জন্য মেয়র সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সমন্বিত বৈঠক করে একটি তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। সেমতে ফায়ার সার্ভিস কিছুদিন আগে চার শতাধিক দোকান ও গুদামের তালিকা তৈরি করে মেয়রের কাছে পাঠান। কিন্তু সেখানে কিছু গড়পড়তা থাকায় পুনরায় তালিকা করার জন্য বলেন। সেই তালিকা ধরেই এই উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত। এর আগে উচ্ছেদের দিনক্ষণ ওই সমন্বিত সভায় নির্ধারণ করার পর তা অভিযানের আগেই সরিয়ে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে মেয়র আহŸানও জানিয়েছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের তালিকা প্রসঙ্গে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল বলেন, যাচাইবাছাইকৃত চ‚ড়ান্ত তালিকা পাঠানো হয়েছে। তালিকায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের দোকান ও গুদাম ঘরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ দোকান ও গুদামের সংখ্যা হচ্ছে ২১টি। সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস থেকে যাদের কোন বৈধ অনুমোদন নেই। এ ছাড়া মোটামুটি ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে ৭৪টি। যাদের মধ্যে কিছু অংশের ট্রেড লাইসেন্স আছে, কিছু অংশের তাও নেই। আবার কারো ফায়ার লাইসেন্স আছে, কারো আবার নেই। তালিকায় দেখা গেছে, কারো এই লাইসেন্স আছে তো ওই লাইসেন্স নেই। তাই এগুলোকে উচ্ছেদ করা হবে। তাদের অনেকেরই যে সকল লাইসেন্স আছে, সেগুলোরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাই তাদেরকে অবৈধই বলা চলে বলে জানান কামরুল ইসলাম। তিনি ফায়ার সার্ভিসের পূর্বের দেয়া তালিকার সংশোধনের পর তা চার শতাধিক থেকে ২৭০টিতে নেমে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডেও অবৈধ রাসায়নিকের দোকান ও গুদাম আছে সেগুলোর তালিকা চ‚ড়ান্ত করে পরবর্তীতে সেখানে অভিযান চালানো হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে পুরান ঢাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাবে ডিএসসিসিসহ সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।