পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিলেট অফিস : সিলেটে ২ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শানে রিসালত মহাসম্মেলন গতকাল (৩ মার্চ) শেষ হয়েছে। দেশ-বিদেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, প্রথিতযশা ইসলামী চিন্তাবিদ-শিক্ষাবিদ ও হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। বাদ যোহর বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সমাজ থেকে সকল পঙ্কিলতা দূর করেছিলেন। তাঁর জীবনই আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। আমাদের নেলসন মেন্ডেলা বা মাদার তেরেসার সংগ্রাম দেখার দরকার নেই। রাসূল (সা.) কি করেছেন তা দেখা করা দরকার। রাসূল (সা.) সমাজের অবহেলিত নিপীড়িত মানুষদের মানবিক অধিকার প্রদান করেছেন। সাদা কালোর ভেদাভেদ দূর করেছেন, দাসদের মানুষ হিসেবে সম্মানিত করেছেন। হাবশী কৃষ্ণাঙ্গ বিলালকে কাবার মুয়াযযিন নির্বাচিত করেছেন। বেলাল (রা.)-এর আযাদীর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে দাসত্ব প্রথা এবং বর্ণ প্রথা নিঃশেষ করার জন্য ইসলামের আগমন ঘটেছে। আহলে বায়তের অন্যতম সদস্য হযরত জয়নুল আবেদীন (র.) সহস্রাধিক দাসকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক দাসত্ব প্রথা বাড়ছে। আমার যেন এর অংশ না হই এবং মানুষকে নিষ্পেষণ না করি।
তিনি বলেন, যাদের থেকে আমরা ইসলাম পেয়েছি তাদের থেকে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে সরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আর আমলের ক্ষেত্রে সর্বদা রিয়ামুক্ত থাকতে হবে। শয়তান আমাদের আমলে রিয়া অন্তর্ভুক্ত করে আমলকে বিনষ্ট করতে চায়, রাসূল (সা.)-এর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে হবে। লোক দেখানো থেকে যত দূরে থাকা যাবে আমল কবুল হওয়ার সম্ভবনা তত বেশি হবে। তিনি যুবকদের উদ্দেশে বলেন, হে যুবক! তুমি আসো, সত্যের পথে আসো, আর্তমানবতার পাশে দাঁড়াও, এতিম, বিধবার পাশে দাঁড়াও। তাহলেই ঈমানের সত্যিকার স্বাদ অনুভব করবে।
সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহŸায়ক, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, যুগ্ম-মহাসচিব, মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ও আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খানের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন সায়্যিদ আল হাবিব উবায়দুল্লাহ আল আত্তাস (মক্কা মুকাররামা), ড. শায়খ নাজী বিন রাশিদ আল আরাবী (বাহরাইন), শায়খ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আল কিত্তানী (মিশর), সায়্যিদ আল হাবিব ফয়সল আল কাফ (জেদ্দা), শায়খ মারওয়ান ইবনে সাদাকাহ ওয়াযযান (মক্কা মুকাররামা), জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এম.এ মোমেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আমিনুল হক ভূঁইয়া, মুফতি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, আলহাজ সেলিম উদ্দিন এমপি। আরবী নাশিদ উপস্থাপন করেন বাহরাইনের শায়খ মুহাম্মদ মুহাম্মদ সাঈদ আল কুহেজী ও শায়খ খালিদ সালিহ আহমদ আল কুহেজী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা হবিবুর রহমান, মাওলানা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, ভারতের উজানডিহির পীর ছাহেব সায়্যিদ মোস্তাক আহমদ আল মাদানী, সায়্যিদ জুনাইদ আহমদ আল মাদানী, সায়্যিদ আল হাবীব আব্দুর রহমান আল কাফ (জেদ্দা), দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, হযরত আব্দুল বাতিন জৌনপুরী (র.)-এর খলীফা মাওলানা আনোয়ারুল্লাহ বাতিনী, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী, জালালিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শুয়াইবুর রহমান, মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, সোবহানীঘাট কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারী হাফিয মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা এ.কে.এম মনোওর আলী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, আল হারামাইন হসপিটাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ ওলিউর রহমান, কুমিল্লা ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আব্দুল মতিন, ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুছ, সৈয়দপুর আলিয়া মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ছালেহ আহমদ প্রমুখ।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা আবূ নছর জিহাদী, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ফখরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আল ইসলাহর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মুহাম্মদ নুমান, ফেনী ছাগলনাইয়া ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হুসাইন আহমদ ভুইয়া প্রমুখ। সম্মেলন শেষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা ও আমল সম্পর্কে এক একটি সম্মিলিত ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।
এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) কুমিল্লা-এর পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল কাদির, বিশিষ্ট আলিমেদ্বীন ইকড়ছই সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ছমির উদ্দীন, মৌলভীবাজার কামিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সিদ্দিকী, সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রাক্তন প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রহীম, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, অর্থ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবূ ছালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, স্কুল অব এক্সেলেন্স-এর ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. সৈয়দ শাহ এমরান, ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান তালুকদার, নোয়াখালী ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ হাফিয মাওলানা ওয়াহিদুল হক, ফেনী বিরিঞ্জি ছুফিয়া নূরিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ মোহাম্মদ ইয়াছিন, শহীদ জিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওয়াজিহ উল্লাহ, ফেনী হরিপুর কামালিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল হাশেম, কুমিল্লা ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা সাইদুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শ্রীপুর কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হান্নান, মাওলানা আব্দুল কাদির ছাহেব (ঘোড়াডুম্বুরী), মাথিউউরা সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল আলিম, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আবদুল মুনঈম, বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজ মাওলানা নূরুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মালিক সূফী ছাহেব, মাওলানা শামসুদ্দীন নূরী, আল ইসলাহ ইউকে নেতা আলহাজ ইসমাইল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আউলিয়ানগর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক, ফেনী ছাগলনাইয়া ফাযিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা লুকমান হুসেন, ঢাকা গাউছিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইজহারুল ইসলাম, ঘাটিয়ারা কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম, ফরাযিকান্দি দরবার শরীফের শাহ সুফি রফিকুল ইসলাম রেফায়ী, দাইয়াবীবী আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার কভেন্ট্রি, ইউকে’র প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল হাসান, ঢাকা জেলা লতিফিয়া কারী সোসাইটির সভাপতি মাওলানা আবূ সাদেক মুহাম্মদ ইকবাল খন্দকার প্রমুখ।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মক্কা মুকাররামার প্রখ্যাত বুযুর্গ সায়্যিদ আল হাবীব উবায়দুল্লাহ আল আত্তাস বিভিন্ন আকীদা ও আমল সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) নূর। তিনি সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তিনি কবর শরীফে জীবিত আছেন। অন্যান্য নবীগণও কবরে জীবিত। তিনি বলেন, কবর যিয়ারত শরীআতসম্মত। আমরা মক্কাবাসীগণ প্রতি জুমাবার হযরত খাদিজা (রা.)-এর কবর যিয়ারত করি।
শরীফ মারওয়ান ইবনে সাদাকাহ ওয়াযযান বলেন, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সকল দিক থেকে বৈশিষ্ট্যমÐিত। গুণাবলী, মর্যাদা, আখিরাতে তার অবস্থান ইত্যাদি সবদিক থেকে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি সর্বদা তাঁর উম্মতের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেন। তিনি কিয়ামতের দিন উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন। তাঁর জীবনের কোনো মুহূর্ত অহেতুক ছিল না। তিনি প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর তাফাক্কুর, যিকর ও ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাতেন। তাঁর জীবন আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।