Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ধামরাইয়ে প্রতি বছর ৩০ লাখ টন কৃষি জমির টপ সয়েল জ্বলে ইটভাটায়

প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ৪ মার্চ, ২০১৭

মো. আনিস উর রহমান স্বপন, ধামরাই (ঢাকা) থেকে : ঢাকার উপকণ্ঠে ধামরাইয়ে বৈধ-অবৈধ ইটভাটায় জ্বলছে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। প্রতি বছর এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে প্রায় ৩০ লাখ টন মাটি। এ মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফসলি জমি থেকে। এতে দেখায় যায় ফসল উৎপাদন দিনদিন কমে যাচ্ছে। আর ইটভাটার গর্ভে যাচ্ছে ফসলি জমির টপসয়েল (জমির উপরিভাগ ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উর্বর মাটি)। নগদ টাকার প্রলোভনে জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এদিকে জমির উপরের মাটি কেটে নেওয়ায় উর্বরতা কমে গেছে। আর কৃষিবিদরা আশঙ্কা করছেন এভাবে জমির উপরিভাগ কেটে নিলে দিনদিন ফসল উৎপাদনের মাত্রা হ্রাস পাবে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাটি সরবরাহ ট্রাকের কারণে গ্রামের পাকা-আধাপাকা রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে এ সড়কগুলো। উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ আবাসিক এলাকায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন জমিতে ও মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আর এসব সড়কের পাশেই ইট তৈরি করার জন্য স্ত‚পাকারে মজুদ করা হয়েছে মাটি। স্থানীয়রা জানায়, অধিকাংশ ইটভাটার মালিক এলাকার প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধি হওয়ায় আবাদি কৃষি জমির উপর লোকালয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি ইটভাটায় ইট পোড়ানো হলেও প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। আবার গোপনে মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান সিকদার জানান, ধামরাইয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৬৫টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটায় ৬৬৬ হেক্টর জমি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গত বছর ৬১৫ হেক্টার জমিতে ছিল ইটভাটা। এবছর ৫০ হেক্টর নতুন জমিতে অর্থাৎ ফসলি জমিতে নতুন ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। এ বছর ৩৩৪ হেক্টর আবাদি কৃষি জমির টপসয়েল নিয়ে গেছে এসব ইটভাটায়। এসব ইটভাটার অধিকাংশ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স নেই। ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ জানান, সারা উপজেলায় ১৬৫টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে বৈধ কাগজ রয়েছে ৭০টি ইটভাটার। প্রতিটি ভাটায় জমি লেগেছে গড়ে প্রায় ৩৫ বিঘা। এছাড়া এক ইটভাটার মালিক জানান, প্রতিবছর গড়ে প্রতিটি ইটভাটায় ন্যূনতম ৬০ লাখ ইট তৈরি করা হয়। প্রতিটি ইটের ওজন প্রায় ২ কেজি। এতে দেখা যায়, ১৬৫টি ইটভাটায় প্রতিবছর ৯৯ কোটি ইট তৈরি করা হয়। প্রতিটি ইটের ওজন ৩ কেজি হলে ১৯৮ কোটি কেজি মাটি লাগছে ৯৯ কোটি ইট তৈরি করতে। প্রতি বছর ২৯ লাখ ৭০ হাজার টন মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। যা গ্রামের সাধারণ কৃষকদের আবাদি কৃষি জমি থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে দিনদিন কমে আসছে আবাদি জমি। আবাদি জমির ফসলসহ কেটে নিচ্ছে মাটি। আগামী ৫ বছর পর ধামরাই উপজেলায় খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান সিকদার। সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ইটভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী নিষিদ্ধ এলাকা (বিশেষ করে আবাসিক, সংরক্ষিত ও বাণিজ্যিক এলাকা, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, কৃষি আবাদি জমি, বন ও বাগানকে বোঝানো হয়েছে) থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার ও এলজিইডি নির্মিত সড়কের আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। বিদ্যমান আইনে আবাসিক ও কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করলে পাঁচ বছর কারাদÐ ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ডে আর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় না রাখলে এক বছর কারাদÐ ও এক লাখ টাকা অর্থদÐের বিধান রাখা হয়েছে। তবে সরকারের এসব আইনের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি এসব ভাটা স্থাপনে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, যেসব ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই ওই সব ইটভাটায় সংশিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ