Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওদের ধারণা তৃতীয় শ্রেণিটা এরকমই হয়

| প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. রেজাউল করিম, দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল) থেকে : আসমানী কবিতায় কবি জসীম উদ্দিনের বর্ণনার রহিমদ্দির বাড়িটির সাদৃশ্য চোখে পড়লো টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন ইউনিয়নের মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ছোট্ট ছাউনি। ভবন ও শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতায় স্থানীয়রা স্কুল ক্যাম্পাসের মাঝেই তৈরি করেছে একটি একচালা ঘর। যেখানে রোদ আর বৃষ্টি কোনটারই ঢুকতে বেগ পেতে হয় না। এর মধ্যেই চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। বিদ্যালয়টির শ্রেণিকক্ষ ও ভবন স্বল্পতায় মনে হচ্ছে এটি শিক্ষা অফিসের অধিনের বাইরে। যেখানে হাতে খড়ি। যেখানকার পরিবেশ দেখে শিশুরা পরিবর্তন করবে সামাজিক পরিবেশ। অথচ প্রথম ধাপেই হোঁচট খেতে হচ্ছে এসব কোমলমতি শিশুদেরকে। ওই কক্ষে নেয়া হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ওরা জানে একচালাতেই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তে হয়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া শিক্ষার্থী রবিন, সাদিয়া, এ্যানি, ইয়ামনি ও সৌরভ বলল, আমরা থ্রিতে পড়ছি। আর কয়টা দিন। ফোরে উঠলেই বিল্ডিংয়ে পড়তে পারবো। ওরা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি বিদ্যালয়টিতে ভবন ও কক্ষ স্বল্পতা। ওদের ধারণা তৃতীয় শ্রেণির জন্যই শুধু এরকম কক্ষ ব্যবহার করা হয়। তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর বিদ্যাপিঠ এই বিদ্যালয়টিতে সাতটি শ্রেণি কক্ষের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ৪টি শ্রেণি কক্ষ। গত তিন বছর আগে একটি পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে ওয়াশবøক তৈরির পর থেকে সৃষ্টি হয় শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতা। প্রাক প্রাথমিকের জন্য একটি কক্ষের মেঝে ব্যবহার করায় উক্ত কক্ষে দ্বিতীয় সিফ্টের কোন পাঠদান করানো যায় না, বললেন কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকামÐলী। বিদ্যালয়টির ৬/৭ ফিটের একটি সিঁড়ি কক্ষও ব্যবহার করা হচ্ছে পাঠদানে। এতেও সংকুলান না হওয়ায় কিছুদিন খোলা আকাশের নীচে পাঠদান কার্যক্রম চালায়। পরে স্থানীয়রা একটি একচালা ঘর তৈরি করে দিয়েছে মাঠের এক কোণে। ওই কক্ষে পাঠদানের অনুপযোগি বললেন, শিক্ষক/শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। এতে ব্যাঘাত ঘটছে পাঠদান কার্যক্রম। খোলা আকাশের নিচে ক্লাশ হচ্ছে না। হচ্ছে একটি কক্ষে। তবে কক্ষ থেকে বাইরের পরিবেশ সহজেই দেখা যাওয়ায় শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীরা মনযোগী থাকছে না। এমন কি শ্রেণি কক্ষে পড়ার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছে পার্শ্ববর্তী সব প্রাইভেট স্কুলগুলোর দিকে। বিদ্যালয়টিতে ৯জন শিক্ষক/শিক্ষিকার পদ থাকলেও প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় সহকারী শিক্ষকের ওপর রয়েছে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ভার। একদিকে প্রধান শিক্ষকের শূন্যতা। অন্যদিকে শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতা। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম খান বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির দেলদুয়ার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছে। তিনি জানান, শ্রেণিকক্ষ বাড়ানোর জন্য বিদ্যালয়ে একটি ভবনের বিশেষ প্রয়োজন। উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বিষয়টি জানানোও হয়েছে। কিন্তু নতুন ভবনের আশ্বাস না পাওয়ায় এভাবেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। এদিকে এই বিদ্যায়টিতে পড়–য়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্রæত বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করে এসব শিশুদের পড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করবে। দেলদুয়ার উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুল ইসলাম জানান, মশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন স্বল্পতা সম্পর্কে আমরা অবগত। এ বিদ্যালয়সহ উপজেলায় ৫টি বিদ্যালয়ে ভবন স্বল্পতা রয়েছে। পাঠদানের বিঘœ ঘটায় আমরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন চেয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও ভবন ধার্য হয়নি। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ