Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যাসের দাম কমাতে হবে : মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দাম বৃদ্ধি প্রতিবাদে সারা দেশে ২ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন
নতজানু সরকারের সকল চুক্তি দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যাচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার : গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদের দেশব্যাপী দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই কর্মসূচিতে সরকারের গণবিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকার নতজানু হয়ে বিভিন্ন চুক্তি করছে, সেসব চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।  
তিনি বলেন, আমরা এই অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে বলতে চাই, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না, গ্যাসের মূল্য কমাতে হবেÑ এটা সকলের দাবি। এ ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে গিয়ে তাদেরকে উজ্জীবিত করে তুলতে হবে, সরকারের গণতন্ত্র বিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী যেসমস্ত পদক্ষেপ তার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।  
তিনি বলেন, আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাব, আসুন এখন সময় হয়েছে আমাদের জেগে উঠার, প্রতিবাদ করার, সোচ্চার হওয়ার। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এই সরকারকে আমরা বাধ্য করব একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন দিতে। যার মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণের কর্মসূচিতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমবেত হয়। তাদের হাতে ‘গ্যাসের দাম বাড়ল কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই,’ ‘গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল কর, করতে হবে’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ডে সেøাগানের পাশাপাশি ‘গণতন্ত্র এনেছি, গণতন্ত্র আনব’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘খালেদা জিয়ার মামলা, নিতে হবে তুলিয়া’, ‘তারেক রহমানের মামলা, নিতে হবে তুলিয়া’ ইত্যাদি সেøাগানও দেয় নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে মহিলা দলের কর্মীরাও অংশ নিচ্ছে, যাদের হাতে ছিল গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানানো নানা প্ল্যাকার্ড। দুই ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে বেশি সময় নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু সেøাগান  ও করতালি দিয়ে সময় অতিবাহিত করে।
অবস্থান কর্মসূচির সময় দুই পৃষ্টার একটি লিফলেটও বিতরণ করা হয়, যার শিরোনাম ছিলÑ ‘আসুন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই’।২০১৬ সালে ৫ জানুয়ারি নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের পর এটি বিএনপির প্রাকাশ্য প্রথম কর্মসূচি।
সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমা রহমান, মীর নাসির, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, আবদুল মান্নান, আহমেদ আজম খান, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ, নিতাই রায় চৌধুরী, হোসেন, কবীর মুরাদ, আতাউর রহমান ঢালী, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আজিজুল বারী হেলাল, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, তাইফুল ইসলাম টিপু, শহীদুল ইসলাম বাবুল, শরীফুল আলম, রফিক শিকদার, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ড. খন্দকার মারুফ হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ছিলেন।
অঙ্গসংগঠনের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, সাইফুল ইসলাম নিরব,  মোরতাজুল করীম বাদরু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, অবদুুুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, এম এ মালেক, আবুল কালাম আজাদ, সুলতানা আহমেদ, শায়রুল কবির খান, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়, এই সরকার বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে শক্তি নয়। তারা আজকে নতজানু হয়ে বিভিন্ন চুক্তি করছে, সেসব চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্যে, একদলীয় শাসনকে পাকাপোক্ত করার জন্যে তারা একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে। সর্বশেষ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক। যেখানে গ্যাস কোম্পানিগুলো মুনাফা করছে, এমন কোনো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি যাতে করে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে।  
বিশিষ্টজনেরাও বলেছেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই সরকারকে জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, সে কারণে তারা একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে।
পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছে, গতকাল-পরশু (মঙ্গল-বুধবার) যে নাটক পরিবহন সেক্টারে দেখাল। সরকারের মন্ত্রীরা উসকানি দিয়ে ধর্মঘট করিয়ে জনগণের যে দুর্ভোগ হয়েছে, তাতে একজন শ্রমিকেরও মৃত্যু হয়েছে। এই সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের জীবনকে দুঃসহ করে তুলেছে।
বিরোধী দলকে সমাবেশ ও কথা বলতে না দিয়ে সরকার ‘গণতন্ত্রের পরিসর’ সঙ্কুচিত করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আমাদের কথা বলতে দেয়া হয় না, আমাদের সভা করতে দেয়া হয় না। আমরা বার বার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও আমাদের পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করবার জন্য অনুমতি  চেয়েছিল, আমাদের দেয়া হয়নি। আমাদের বিভিন্ন জেলায় সম্মেলন করতে দেয়া হয় না। আমাদের সভা-সমিতি করতে দেয়া হয় না। এই সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিরোধী সরকার এবং তাদের জনগণের সাথে কোনো সম্পর্ক নাই।  
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে বিএনপিকে বাদ দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে এ দেশে নির্বাচন হবে, এদেশের মানুষ কোনোদিনই তা মেনে নেবে না।  
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ গণতন্ত্র আওয়ামী লীগের বাক্সে বন্দি, মানুষের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগের বাক্সে বন্দি। এই সরকার নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমরা বলতে চাই, যদি আবার এই সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো গায়ের জোরে নির্বাচনের নামে তামাশা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তাহলে জনগণ আর কখনো বরদাশত করবে না।  
আমরা বলতে চাই, আর বেশি দিন সরকার তার পেটুয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে জনগণকে আর ঘরে আটকিয়ে রাখতে পারবে না। বিএনপির নেতৃত্বে, দেশনেত্রীর নেতৃত্ব আমরা রাস্তায় নেমেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনের দাবি আদায় করবই ইনশাআল্লাহ।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা অনেকেদিন যাবত ঘরে বসে কথা বলেছি। আজকে ঘরে ছেড়ে আঙ্গিনায় এসেছি। আমরা ইচ্ছা করলে রাজপথে গিয়ে মিছিল করতে পারি। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আমরা প্রস্তুত। এ যাত্রা মাফ করলাম। এর পরের থেকে অনুমতি নিয়ে নয়, ঘরে নয়, রাজপথে নামব। এই সরকারের বাঁধা দেয়ার কোনো অধিকার নেই। জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত নয়, তাদের কোনো আদেশ-নির্দেশ মানার জন্য জনগণ প্রস্তুত নয় এবং জনগণ এই সরকারের কোনো আদেশ-নির্দেশ মানবে না।
তাই বলব, যত তাড়াতাড়ির সম্ভব পদত্যাগ করুন, দল-নিরপেক্ষ সরকারের কাছে কিভাবে ক্ষমতা দেবেন, সেই চিন্তা করুন। নির্বাচন দিন, নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা করবেন না। একদিকে কোর্টের বারান্দায় আমরা ঘুরব, আর আপনারা হেলিকপ্টারের ঘুরে বেড়াবেনÑ এটা বেশি দিন মেনে নেয়া হবে না।  
এ ছাড়া অবস্থান কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাসের দাম দুই দফায় বাড়ানোর ঘোষণা দেয় যা ১ মার্চ থেকে প্রথম দফায় বিদ্যুতের দাম বেড়েছে।  
বিইআরসির ঘোষণা অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে, যা এতদিন ছিল যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য মাসিক বিল ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা হবে।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল করেছে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা।
এদিকে মঙ্গলবার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বে-আইনি ঘোষণায় দায়ের করা এক রিট মামলায় হাইকোর্টের  একটি বেঞ্চ দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ওপর ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।


মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জেলা বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচী চলে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত।
নারায়ণগঞ্জে পুলিশের বাধা উপেক্ষা
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচীতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। অবস্থান কর্মসূচীর ব্যানার কেড়ে নেয় এবং মাইকের তার ছিঁড়ে ফেলে পুলিশ। এসময় জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদের সাথে পুলিশের বাক-বিতন্ডা হয়। নেতা-কর্মীরাও উত্তেজিত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে পুলিশ ব্যানার ফেরত দেয়। বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচী পালনকালে গতকাল সকাল ১০টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডে এ ঘটনা ঘটে।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুর জেলা বিএনপির উদ্যোগে পুরান বাজার রেন্ট্রিতলা শহীদ মিনারে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এক অবস্থান কর্মসূচী পালিত হয়।
মেহেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুর জেলা বিএনপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণে কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুন।




 

Show all comments
  • আমিনুল ইসলাম ৩ মার্চ, ২০১৭, ২:৫৭ এএম says : 0
    এই দাবিতে বিএনপির আরো কঠোর আন্দোলন চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • ফাহাদ ৩ মার্চ, ২০১৭, ২:৫৮ এএম says : 0
    তার এই দাবির সাথে আমরা সাধারণ জনগণ একমত পোষণ করছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ