পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খলিলুর রহমান, সিলেট অফিস : বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপে জানা গেছে, আগামী ২০৫০ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলমান জনগোষ্ঠী হবে। ২০৫০ সাল কিন্তু বেশি দূরে নয়। তাই আমাদের এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে। যাতে মুসলমানরা যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে। মুসলমানরা যাতে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারে সেভাবে প্রস্তুত হতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট আলীয়া মাঠে আন্তর্জাতিক শানে রিসালত মহাসম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আল্লামা সাহেব ফুলতলী শুধু আধ্যাত্মিক শিক্ষা নয়, তিনি যোগ্য আলেম ও যোগ্য নেতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে উনার উত্তরসুরীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন অতি নিকটবর্তী। ওই নির্বাচনে যাতে সবাই একসাথে কাজ করতে পারি, একসাথে চলতে পারি, সেইভাবে আমাদেরকে এগিয়ে চলতে হবে।
এর আগে গতকাল বেলা ১১টা থেকে সিলেটে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শানে রিসালাত মহা-সম্মেলন শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা ময়দানে বেলা ১১টায় সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে হাজারো মুসল্লির উপস্থিতিতে আলীয়া ময়দান মুখরিত হয়ে উঠে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। বাদ যোহর বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। বিদায় হজের সময় তিনি বিনীত ভঙ্গিতে বলেছিলেন, হে মানুষ সকল! আমি যদি তোমাদের কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি তাহালে আজ এর প্রতিশোধ নিয়ে নাও। তোমাদের জন্য আমার পিঠ খুলে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ তো এরূপই। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যারা একই মাযহাব অনুসরণ করি, আমাদের মধ্যেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখতেলাফ লক্ষ্য করা যায়। আমরা যদি আমাদের পূর্বসূরীদের অনুসরণ করি তাহলে এসব এখতেলাফ দূর হয়ে যাবে। তিনি মিলাদ-কিয়াম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সম্বোধন ইত্যাদি বিষয়ে বলেন, এসব আসলে এখতেলাফের বিষয় নয়। বর্তমানে যারা এখতেলাফ করেন তাদের পূর্বসূরীদের জীবন ও লেখায়ও এসব আমলের পক্ষে বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আন্তর্জাতিক শানে রিসালত মহাসম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ও আনজুমানে আল ইসলাহর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খানের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। মাহফিলে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন সায়্যিদ আল হাবিব উবায়দুল্লাহ আল আত্তাস (মক্কা মুকাররামা) শায়খ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আল কিত্তানী (মিসর), শায়খ মারওয়ান ইবনে সাদাকাহ ওয়াযযান (মক্কা মুকাররামা), শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা হবিবুর রহমান, মুফতি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, আরবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব মাওলানা এ কে এম মনোওর আলী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আ খ ম আবু বকর সিদ্দীক, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম মহাসচিব ফরিদগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মহাখালী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিজুল হক মুরাদ প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে আনজুমানে আল ইসলাহর সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, সৎপুর কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ছালিক আহমদ, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ উ ম আবদুল মুনঈম, অধ্যাপক মাওলানা আবদুল হামিদ, সুনামগঞ্জ জেলা আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা আবু তাহির মো. খালিদ, সিলেট মহানগর আল ইসলাহর সভাপতি আলহাজ শাহজাহান মিয়া বক্তব্য রাখেন ।
এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শায়খ নাজী বিন রাশিদ আল আরাবী (বাহরাইন), সায়্যিদ আল হাবীব ফয়সল আল কাফ (জেদ্দা), শায়খ মুহাম্মদ মুহাম্মদ সাঈদ আল কুহেজী (বাহরাইন), শায়খ খালিদ সালিহ আহমদ আল কুহেজী (বাহরাইন), সায়্যিদ আল হাবীব আব্দুর রহমান আল কাফ (জেদ্দা), উজানডিহির পীর ছাহেব সায়্যিদ মোস্তাক আহমদ আল মাদানী, সায়্যিদ জুনাইদ আহমদ আল মাদানী, জালালিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শুয়াইবুর রহমান, মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, সোবহানীঘাট কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারি হাফিজ মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মিসরের শায়খ ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আল কিত্তানী বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা:) আমাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সর্বোত্তম নেয়ামত। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ মানবজাতিকে হেদায়াতের পথ দেখিয়েছেন। তাঁর প্রতি ভালোবাসা ঈমানের দাবি। সাহাবায়ে কিরাম আল্লাহর রাসূলের যথাযথ সম্মান সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এ বিষয়ে তাদের অনুসরণ আমাদের করতে হবে। হাদীসে নববী থেকে দলীল উপস্থাপন করে তিনি বলেন, আজকে যে ধরনের মাহফিল হচ্ছে এ ধরনের মাহফিল সাহাবায়ে কেরাম করেছেন। যারা এটাকে বিদআত বলে তারা মাহরুম। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকে সিলসিলাক্রমে যে তাসাওউফ আমরা লাভ করেছি তা সত্য। সুফিয়ায়ে কিরামের প্রধান চিহ্ন হলো তারা বেশি বেশি আল্লাহর যিকর করেন এবং নবী করীম (সা:) এর প্রতি বেশি দরূদ পেশ করেন। তাসাওউফ ও সুফিয়ায়ে কেরামকে আমাদের আঁকড়ে ধরতে হবে। সলফে সালিহীনের পথ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী সম্মেলনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা:) এর সুমহান মর্যাদা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এসেছেন। তারা আমাদের সামনে আল্লাহর রাসূলের আখলাক, আমল ও আদর্শ তুলে ধরবেন। তাদের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হবে আমরা যে আমল করি, যে আদর্শ লালন করি তা দুনিয়ার সকল প্রান্তের মুসলমানদের আমল। ফলে কোনো সমালোচনায় বিভ্রান্ত হবার সুযোগ আমাদের থাকবে না।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন ইকড়ছই সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ছমির উদ্দীন, মুফতি মাওলানা আবু নছর জিহাদী, সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রাক্তন প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, অর্থ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবু ছালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, স্কুল অব এক্সেলেন্স-এর ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ফখরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, রাখালগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হবিবুর রহমান, মাওলানা আবদুুল কাদির ছাহেব (ঘোড়াডুম্বুরী), সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু জাফর মুহাম্মদ নুমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুল ইসলাম, মাথিউউরা সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল আলিম, বুরাইয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজ মাওলানা নূরুর রহমান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।