Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দলীয় স্বার্থে আ’লীগ জাতির স্বার্থ বিকিয়ে দিচ্ছে মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতজানু হয়ে আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের স্বার্থে, জাতির স্বার্থ বিকিয়ে দিচ্ছে। চুক্তি হচ্ছে; কোন চুক্তি হচ্ছে, কী চুক্তি হচ্ছে- জনগণ জানে না। তিস্তা নদীর পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছে না এ নিয়ে একটি কথাও সরকার বলছে না। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির দ্বিতীয় ধাপ উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ হলেও প্রথম ধাপের মাধ্যমেই সরকার জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে নেবে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। এই সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের ওপরে স্থগিতাদেশ দেয়ায় উচ্চ আদালতকে সাদুবাদও জানিয়েছেন।   ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস এর উদ্যোগে ‘একুশের চেতনা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, সচেতনভাবে বাংলাদেশের সত্যিকার অর্থে যে জাতিসত্ত্বা, তাকে ধ্বংস করে ফেলছে। দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আমাদের যেগর্ব ছিলো, সেটাকে তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। আজকে নতজানু হয়ে তাদের নিজেদের স্বার্থে, দলীয় স্বার্থে তারা জাতির স্বার্থ বিকিয়ে দিচ্ছে। আজকে পত্র-পত্রিকা খুললে দেখবেন, চুক্তি হচ্ছে। কোন চুক্তি হচ্ছে, তার সাথে কী চুক্তি হচ্ছে- জনগণ জানে না।  
তিস্তা নদীর পানি অভাবে উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তিস্তার পানির অভাবে আমাদের কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছে না। সেই সম্পর্কে সরকার একটি কথাও বলছে না। কেবল তাই নয়, সীমান্তে দেশের নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এই সভ্যতার যুগে কিন্তু একটা কথাও বলা হচ্ছে না। এসব কথা আমদের তুলে নিয়ে আসতে হবে।
দেশ ‘ফ্যাসিবাদের কবলে’ পড়েছে অভিযোগ করে এই থেকে মুক্ত না হলে ‘জাতির অস্তিত্ব’ থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই মূল্য বৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়, এখন গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর কোনো প্রয়োজনই ছিলো না। কারণ যে কোম্পানিগুলো গ্যাস সরবারহ করছে, তারা লাভ করছে, আমাদের ট্যাক্সে টাকা দিচ্ছে। সেখানে তারা (কোম্পানিগুলো) ২২ দশমিক ৭ ভাগ মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।  
তবে আজকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমাদের উচ্চ আদালতে দ্বিতীয় দফায় বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দুই ধাপে গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তার দ্বিতীয় ধাপের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ‘আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে’ দেওয়া ওই গণবিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একুশের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। তারা সেই গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন একদলীয় শাসন আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। সেজন্য তারা সকল পরিকল্পনা সাজিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, মিথ্যাচার, চাতুরতা ও হিপোক্রেসির মাধ্যমে তারা (সরকার) জনগণকে বোকা বানাতে চায়, প্রতারণা করতে চায়। নির্বাচন কমিশন দিয়েছে। সেই কমিশন সাজিয়ে গুছিয়ে এমনভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে, সবাই বলছে সে একজন দলীয় ব্যক্তি। তাকে নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করবে।  
জাসাসের গোড়াপত্তন ও নবগঠিত কমিটির দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবের উদ্দেশই ছিলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যে দর্শন, সেটাকে দেশ ও সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেবে এই জাসাস। আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি, নতুন নেতৃত্ব আরো বড় পরিসরে, সৃজনশীল মেধাবী ব্যক্তিত্ব ও দেশপ্রেমিক সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে এই দর্শনকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।  
তিনি বলেন, যে আবেগ দিয়ে আমরা ভাষা আন্দোলন সফল করেছিলাম, ‘৬৯ গণআন্দোলন সফল হয়েছিলো, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো, সেই আবেগ কেনো জানিনা কোথায় অনুপস্থিত দেখতে পাচ্ছি। এখানেই জাসাসের কাজ। জাসাস সেই আবেগ জাগিয়ে তুলবে, দেশপ্রেমিকদের জাগিয়ে তুলবে, তার অধিকারকে প্রতিষ্ঠার যে যুদ্ধ-সংগ্রাম তাকে সে আরো জোরদার করবে, বেগবান করবে।  
তিনি বলেন, পথসভা, পথনাট্য, জারি গান-এসবের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে দেশের দুঃসময়কে তুলে ধরতে হবে। এই যে নির্মম অত্যাচার, মানুষকে গুম করে হত্যা করা, ইলিয়াসের (ইলিয়াস আলী) ছোট্ট মেয়েটা বাসার দরজার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে তার বাবাকে ফিরে পাওয়ার জন্য- এগুলো আমরা নাটকের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসতে পারি না। আমাদের এভাবে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। এটাই জাসাসের কাজ।
জাসাস সভাপতি অধ্যাপক মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস -চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, দিনকাল ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড.  রেদোয়ান সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় নেতা  সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, জাসাস সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, বাবুল আহমেদ, মুনিরুজ্জামান মুনির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ