পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এহসান আব্দুল্লাহ : ধন্যবাদ আবার আসবেন। এভাবেই ক্রেতাদের বিদায় সম্ভাষণ জানানোর রীতি চলে আসছে সবসময়। তবে ব্যতিক্রম অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। এখানে ক্রেতারাই মুখিয়ে থাকেন স্টলগুলোর প্রতি। তাই বইমেলার বিদায় বেলায় প্রত্যেকের মাঝেই থাকে বিষণœতার ছাপ। এখানে বিক্রেতারা আসবেন বলে অনুরোধ করে না বরং প্রতিটি বইপ্রেমী পাঠকই মেলার প্রতি ছুড়ে দেয় তাদের বিদায় সম্ভাষণ। ধন্যবাদ, আবার আসবোÑ এটিই যেন সবচেয়ে উপযুক্ত হয়ে উঠে সবার কাছে। তাই বইপ্রেমীরা কোনভাবেই হারাতে চান না এই প্রাণের মেলার বন্ধন। অনেকের মতে, মেলার সময় আরো সপ্তাহখানেক বৃদ্ধি করতে পারে বাংলা একাডেমি, এমনটাই আবদার। তবে বইপ্রেমীদের মনে যে অবস্থাই চলুক তা দিয়েতো আর নিয়ম চলে না।
তাই প্রতিবারের মতো এবারও ফেব্রুয়ারী মাস শেষ হতেই সমাপ্তি টানলো বইমেলা। গতকাল মেলার ছিল শেষদিন। তাই মেলা প্রাঙ্গণ ছিল বইপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত। শেষ বেলায় এসে সবাই কিনে নিয়ে গেছেন ব্যাগ ভর্তি বই। লেখক, প্রকাশকরাও গতকাল মেলায় এসেছেন বিদায় বেলার মুহূর্তকে পাঠকদের সাথে সমানভাবে উপভোগ করতে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬:৩০টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২০১৭-এর সমাপনী অনুষ্ঠান। শুভেচ্ছা ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ প্রদান করে একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন আর বই ক্রয়-বিক্রয়ের বার্ষিক অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নেই; এটি পরিণত হয়েছে আমাদের সাংস্কৃতিক জাগরণের উৎসমুখে।
গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ড. জালাল আহমেদ বলেন, গতকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি মোট ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩ শত ৬ টাকার বই বিক্রি করেছে। ২০১৬ সালের তুলনায় এই বিক্রি ২২ লাখ টাকা বেশি। সুতরাং আজকের বিক্রি-সহ বাংলা একাডেমির মোট বিক্রি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে। আমরা জানি, গতবার সমগ্র মেলায় ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে, এবার বইমেলায় মোট ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর (এমপি) বলেন, এবারের গ্রন্থমেলা সার্বিক দিক দিয়ে সফল ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। লেখক-পাঠক-প্রকাশক সকলের সম্মিলিত ভাবনা ও প্রচেষ্টায় আগামীতে মেলায় আরও নতুনত্ব ও ইতিবাচকতা সংযোজিত হবে বলে আমরা আশা করি।
বিশেষ অতিথির ভাষণে মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা আজ দেশের গ-ি পেরিয়ে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে জ্ঞানান্বেষু মানুষের মহামিলনমেলা হিসেবে।
সভাপতির ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মৃতিতে আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা আজ বিশাল বিস্তৃতি লাভ করেছে। গ্রন্থপ্রেমি মানুষের এই মিলনমেলা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে বলে আমরা আশাবাদী।
অনুষ্ঠানে কবি শামীম আজাদ ও লেখক অনুবাদক নাজমুন নেসা পিয়ারিকে বাংলা একাডেমি পরিচালিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ২০১৬ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০,০০০.০০ টাকার চেক, পুষ্পস্তবক, সনদ এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৭, ২০১৬ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭, ২০১৬ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৭ এবং ২০১৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে থেকে নান্দনিক স্টল/প্যাভেলিয়ন সজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭ প্রদান হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল প্রকাশককে ২৫,০০০.০০ টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এবার ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৬৪৬টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। নতুন ৩৬৪৬টি বইয়ের মধ্যে ৮৫৮টি বই মানসম্পন্ন বলে প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
গতকাল মেলার শেষদিনে নতুন বই এসেছে ১৮০টি এবং ৩৪টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।