অর্থনৈতিক রিপোর্টার : চলতি অর্থ-বছরের জন্য ১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা ৩৩ হাজার কোটি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৮ হাজার ৫৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।
সে হিসেবে বাদ দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি ৩ লাখ টাকা। বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে পরিবহন খাতে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরএডিপি এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব  করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলমসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।  
এনইসি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সরকারি তহবিল থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়ানোর  নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বলেছেন, আমি মে মাসে দেখবো কোন মন্ত্রণালয় কত টাকা নিয়েছে আর ব্যয় করেছে কত টাকা। তিনি মন্ত্রীদের পাশাপাশি প্রকল্পের বাস্তবায়ন তদারকির জন্য সচিবদের মাঠ পর্যায়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান। এছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, যেসব মেগা প্রকল্প উচ্চ কারিগরি সম্পন্ন সেসব প্রকল্পে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনগণকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য নিয়োগ দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।  
ব্রিফিং-এ আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, মূল এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা বরাদ্দ ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা সেখান থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। তাছাড়া স্বায়ত্তসাশিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন খাতে বরাদ্দ ছিল  ১২ হাজার ৬৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেখান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। বাদ যাওয়া এ অর্থের ঘাটতি পূরণে প্রধানমন্ত্রী সরকারি তহবিলের অর্থ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ বাড়তি বরাদ্দ পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হবে। কেননা এখনো চাহিদা রয়েছে প্রচুর। তিনি জানান, আগামী মে মাসে আবারও সংশোধিত এডিপি নিয়ে বৈঠক করা হবে। মন্ত্রী বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি অনেক ভালো। সুতরাং সরকারি তহবিলের অর্থ ব্যয় করা সমস্যা হবে না। পদ্মা সেতুর বিষয়ে তিনি বলেন, এটি, স্বপ্নের প্রকল্প হওয়ায় এখানে নির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। পুরো অর্থ-বছরে যা ব্যয় করতে পারবে তাই পদ্মা সেতুর বরাদ্দ হিসেবে ধরা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, নেগেটিভ প্রপাগা-া করে লাভ নেই। দেশের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আমরা সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিনিয়োগই বাড়াতে চাই। এজন্য সরকারি অংশে জিডিপির ৭ ভাগের মতো বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তাই সরকারি তহবিলের বরাদ্দ কমানো হয়নি।
এনইসি বৈঠক সূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে এনইসির যে কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে সংশোধিত এডিপিতে ১৭টি সেক্টরের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে ২৫ হাজার ৩৫৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ১৩ হাজার ৯৭৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১২ হাজার ৭১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে  ১২ হাজার ৩৪৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে বরাদ্দ বাড়তে পারে।
সংশোধিত এডিপিতে বেড়েছে প্রকল্পের সংখ্যা। মূল এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প ছিল ১ হাজার ২৭৮টি। সেখান থেকে ৩০৩টি বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১২৫৫টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৫৪টি, জেডিসিএফ প্রকল্প ৬টি এবং স্বায়ত্তশাসিত  সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত ১৬৬টি প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একবারেই নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ২৭২টি। এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে ৯১০টি অননুমোদিত নতুন প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। মূল এডিপিতে ৩৫৪টি প্রকল্পর সমাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও সে লক্ষ্য কমিয়ে ৩১২টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য ধরা হয়েছে।