Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে সোনাকান্দায় আখেরি মোনাজাত সম্পন্ন

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এইচ এম ছলিম উল্লাহ খান ও মো. হাবিবুর রহমান, সোনাকান্দা থেকে : কুমিল্লার সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ তা’লীমে হিযবুল্লাহ’র আমীর আলহাজ্ব মাওলানা মাহমুদুর রহমান বলেছেন, আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন আমল কমে যাচ্ছে। যদি আমরা সকলে বেশি বেশি করে নেক আমল করি তাহলে আমাদের ব্যক্তি জীবন সুন্দর হবে এবং আমরা মানব কল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারব। গীবত ও পরনিন্দা একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। এ ব্যাধি সমাজে গীবত মহামারীর মতো রূপ ধারণ করছে। ফলে সাম্য, মৈত্রি, সম্প্রীতি কমে যাচ্ছে।
সমাজের শান্তির জন্য যা নিতান্তই দরকার। তাই শান্তির স্বার্থে গীবতের মতো জঘন্য গুনাহে কবীরা চর্চা করা থেকে আমাদের সকলকে বিরত থাকতে হবে। মাওলানা মাহমুদুর রহমান মঙ্গলবার বাদ ফজর ঐতিহ্যবাহী সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত ২ দিনব্যাপী বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিলে আখেরি মোনাজাতের পূর্বে বয়ান করতে গিয়ে এসব কথা বলেন। পীর ছাহেব বলেন, ওলী আউলিয়াদের দরবার হচ্ছে আত্মশুদ্ধির অন্যতম জায়গা। তাদের দরবারে আসা-যাওয়া করলে ঈমান ও আমল-আখলাক মজবুত হয়। হেদায়েতের পথে চলার দিক-নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়। কালের প্রবাহে নবী প্রেমিকদের কাছে এসব দরবারের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে প্রিয় নবী (সা:)-এর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া একশ্রেণির লোকেরা ওলী-আউলিয়াদের নিয়ে কটাক্ষ করে থাকে। এ ধরনের লোকেরা কখনোই নিজেদেরকে নবী প্রেমিক বলে দাবি করতে পারেন না। তাদেরকে জনগণ এ দেশে ইসলাম বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দেয়া চক্রের এজেন্ট বলে মনে করে। তাদের ব্যাপারে আলেম ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সদা-সতর্ক থাকতে হবে। সুন্নিয়াতের আদর্শের পথ ধরে কাফের-মুশরিকদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদেরকে মজবুত ঈমান ও আমলের উপর অবিচল থাকতে হবে। ইসলামবিরোধী চক্রকে প্রতিহত করতে বাংলার জমিনে সকলকে গভীর সচেতন হতে হবে। প্রতিটি দরবারের ভক্ত, মুরিদ, মু’তাকেদ, আশেক্বীন, মুহিব্বিনসহ সুন্নিয়াতের আদর্শে উজ্জীবিত সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে এ ব্যাপারে লৌহ-কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ইসলামী সমাজ কায়েম করা আমাদের জন্য সহজ হবে বলে বিজ্ঞজন মনে করেন। যেখানে আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলেই অনাবিল শান্তির মধ্যে বসবাস করতে পারব।  
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে পুঁজিবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী ও সা¤্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনে সারা বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থা এক নাজুক পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। এ অবস্থায় আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব, ঈমান ও আমল-আখলাককে ঠিক রাখতে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলেই থাকতে হবে। মুসলমানদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে সমধিক দক্ষতা অর্জন এ ক্ষেত্রে বড়ই প্রয়োজন। তিনি বলেন, কুমিল্লার মাটিতে অসংখ্য বুজুর্গানেদ্বীন শায়িত আছেন। তাদের মিশন ও ভিশন সম্পর্কে আমাদেরকে ব্যাপক জানতে হবে, বুঝতে হবে। তাদের পদাংক অনুসরণ করে ইসলামের খেদমতে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে হবে। এদেশে ইসলাম এসেছে আউলিয়া কেরাম, পীর মাশায়েখ ও আলেম ওলামাদের কঠোর পরিশ্রমের বদৌলতে। যারা এ সত্য অস্বীকার করে তারা এ দেশের মুসলিম উম্মাহর সাথে বেঈমানী করে।
মাহফিলে আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার জাকির হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সরকার, ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। কোরআন ও হাদিস থেকে বয়ান করেন ফতেহাবাদ দরবার শরীফের গদ্দিনশীন পীর অধ্যক্ষ মাওলানা সফিকুল ইসলাম, ডেমরা দারুল নাজাত কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ওসমান গণি ছালেহী, মুফতী মাওলানা শাহ্ আলম, মুফতী মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা মিজানুর রহমান মুনিরী। সোনাকান্দা দারুল হুদা বহুমুখী কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা বেলাল হোসাইন আফসারী ও প্রধান মুহাদ্দিস মাওলানা মোতালিব হোসাইন ছালেহী’র উপস্থাপনায় মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে আগত শাহসূফি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ফারুকী, ফুরফুরা দরবার শরীফের পীর মাওলানা মতিউল্লাহ সিদ্দিকী, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন ভৈরবী, মুক্তারামপুর দরবার শরীফের পীর মাওলানা মেছবাহ উদ্দিন, উবাহাটা দরবার শরীফের পীর মাওলানা সফিকুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ জহুরিয়া দরবার শরীফের পীর মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা অধ্যক্ষ আবু তাহের ছালেহ উদ্দিন ও মাওলানা অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান প্রমুখ।   
আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ তা’লীমে হিযবুল্লাহ’র আমীর আলহাজ্ব মাওলানা মাহমুদুর রহমান। শেষদিনের এই আখেরী মোনাজাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঢল নামে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের আশায় সারা বাংলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মাহফিলে প্রচুর লোক সমাগম হয়। নিজের ও আহল আওলাদের গুনাহ খাতা মাফির জন্য এবং দেশ-জাতির ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ কামনা করে আখেরী মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাতে কান্নার রোল পড়ে যায়। মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি আর আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনিতে মাহফলি ও আশপাশের এলাকার পরিবেশ ছিল লক্ষণীয়। দরবারের আশিকীন, যাকেরীন, মুহিব্বীন ও খলিফাবৃন্দসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম, দেশ-বরেণ্য পীর-মাশায়েখগণসহ সামাজিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীর লোকজন মোনাজাতে উপস্থিত ছিলেন। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ