Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ডাক্তার না হয়েও দিচ্ছেন চিকিৎসাসেবা

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভাসহ উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ফার্মেসি। ওইসব ফার্মেসির অনেক মালিক নিজের নামটি লিখতে কলম ভাঙে অথচ ডাক্তার সেজে ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। রোগ মুক্তি নয় ওষুধ বিক্রি যেন তাদের মুখ্য উদ্দ্যেশ্য। অনেক সময় এমবিবিএস ডাক্তারগণ রোগীর অবস্থা বুঝে নামিদামি কোম্পানির ওধুষ প্রেসক্রিপশনে লিখলেও ওইসব অর্ধশিক্ষিত, অপ্রশিক্ষিত ওষুধ বিক্রেতারা বেশি লাভের আশায় ডাক্তারের লেখা ওষুধ পরিবর্তনও করে দিচ্ছেন অহরহ। তারা নিজেরা ডাক্তার সেজে ওষুধ ও প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন। তাই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকাজনকভাবে। ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করে অকালে মৃত্যু হয়েছে এমন নজিরবিহীন ঘটনাও গোদাগাড়ীতে ঘটছে। কয়েক বছর পূর্বে গোদাগাড়ীর রেলওয়ে বাজার নামক স্থানে কথিত মইদুল ডাক্তারের ক্লিনিকে ডাক্তার ছাড়াই এক মায়ের অপারেশন করায় ওই মায়ের মৃত্যু হয় এবং এর প্রতিবাদে ক্লিনিক ভাঙচুর করা হয়। কথিত ডাক্তার মইদুলকে গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ গ্রেফতার করলেও পরবর্তীতে তাকে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়। ফার্মেসির মালিকগণ ওষুধকে মনে করেন খাদ্যদ্রব্য, আলু, পটল কিংবা বেকারি পন্য। বিক্রি করতে পারলেই হয়। অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রেখে বিক্রি করা হচ্ছে দেদার। এমনকি কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যের ওপর ওভার রাইটিং করে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কলম দিয়ে লিখে বিক্রি করা হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনার খবর পৌঁছামাত্রই গোদাগাড়ী পৌরসভার ড্যাংপাড়া পাঁচমাথার মোড়, হাটপাড়া, সুলতানগঞ্জ, মহিশালবাড়ী, সিএন্ডবি, রেলবাজার, মাওলানার গেট, উপজেলার রেলগেট, হাজীরমোড়, হরিসংকরপুর, পিরিজপুর, বিদিরপুর, প্রেমতলী, কুমুরপুর, রাজাবাড়ী, কাঁঠালতোলা, কামারপাড়া, বাসুদেবপুর, বালিয়াঘাটা, কাঁকনহাট, ২৪ নগর প্রভৃতি এলাকার ২ শতাধিক ফার্মেসির মালিক দোকান লাগিয়ে পালিয়ে যায় বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। যতক্ষণ অভিযান চলে ততক্ষণ দোকান বন্ধ থাকে এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের অভিযোগ যেসব ফার্মেসির মালিক দোকান বন্ধ রেখে পালিয়ে যাবে তাদেরকে ২০/২৫ হাজার টাকা জরিমানা করলে ভেজাল, নি¤œমানের ভারতীয় ওষুধ, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ওভার রাইটিং করে বেশি মূল্যে ওষুধ বিক্রি চিরতরে বন্ধ হতো। কোম্পানি ওষুধের দাম বৃদ্ধি না করলেও ফার্মেসির মালিকগণ ইচ্ছামাফিক দাম হাঁকাচ্ছেন। প্রশ্ন করলে ওষুধ বিক্রি নেই বলে তখন ক্রেতা সাধারণ উপায়হীনভাবে কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আইন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ না থাকায় কিংবা শাস্তির বিধান কম হওয়ায় এসব অবৈধ কারবার চলছে দেদার। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন এমবিবিএস ডাক্তার এ প্রতিবেদককে জানান, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা একেবারেই উচিত নয়। ওষুধ বিক্রেতা ও ক্রেতাকে বুঝতে হবে ওষুধ কোনো খাদ্যদ্রব্য নয়, এটি মূলত এক ধরনের বিষাক্ত দ্রব্য। নিয়মমাফিক ব্যবহার না করলে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার স্বীকার হচ্ছে অনেক রোগী। ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া এক রোগের ওষুধ খেতে গিয়ে অন্য একটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। গোদাগাড়ীর বিভিন্ন ফার্মেসিগুলোতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ওষুধ বিক্রির কাজে জড়িতদের শতকরা ৯৫ ভাগেরই ওষুধ সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। ফলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রোগীরা ধারণা পায় না। তারা ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। ক্রেতা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে নাম উল্লেখ করে ওষুধ চাইলে ফার্মেসির মালিকগণ ওষুধ বিক্রি করে থাকেন। আবার অনেক দিনের মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো প্রেসক্রিপশন নিয়ে অনেক রোগী ফার্মেসিতে আসলে প্রেসক্রিপশনের তারিখ ওষুধ সেবন করার সময়সীমা দেখার প্রয়োজনবোধও করেন না বিক্রেতারা। তাদের কাছে আর্থিক বাণিজ্যই যেন মুখ্য বিষয়। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি করেন না ফর্মেসির মালিকরা, সারা দিনে তাদের ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রি হোক আর না হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ