Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এসিল্যান্ডের হস্তক্ষেপে বৃদ্ধ ফিরে পেলেন জমি

মালিক সেজে বিক্রি করল প্রতারক চক্র!

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : ৬০ শতক আয়তনের জমিটির মালিক বৃদ্ধ মনির আহাম্মদ প্রকাশ মনির হোসেন (৯০)। কিন্তু তিনি জানেনই না যে একটি প্রতারক চক্র অন্য একজনকে জমির মালিক সাজিয়ে তার জমিটি বিক্রি করে প্রায় ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে প্রতারক চক্রের দালালের কাছ থেকে এক শিল্পপতি মো. নুরুন্নবী জায়গাটি কিনে রেজিস্ট্রি দলিল মূলে সীতাকুন্ড ভূমি অফিস থেকে নামজারিও করিয়ে নেন! ফলে অসহায় এ বৃদ্ধ নিজের অজান্তেই শেষ সম্বল হারিয়ে বসেন। কিন্তু এতদিন তিনি বিষয়টি জানতেন না। সম্প্রতি বৃদ্ধ মনির হোসেনের এক মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে অনেক টাকার প্রয়োজন হয় তার। এ কারণে তিনি জমিটি বিক্রি করতে উদ্যোগী হওয়ার একপর্যায়ে জানতে পারেন তার জমি ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে অসহায় এ বৃদ্ধ ছুটে আসেন সীতাকুÐ ভূমি অফিসে। এখানে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রুহুল আমিনের সাথে দেখা করে জানান, তিনি তার জমিটি বিক্রি করেননি কিংবা কাউকে দানও করেননি। অথচ এ জমি অন্যের নামে নামজারি হয়ে গেছে। বৃদ্ধের মুখে একথা শুনে বিস্মিত হন এসি ল্যান্ড। এটা কীভাবে সম্ভব হলো তা খতিয়ে দেখতে রুহুল আমিন মনির হোসেনের নামে থাকা বোয়ালিয়া মৌজার (জে.এল নং ৪০) বিএস ৫১৪ দাগের ১০ শতক, ৫১৫ দাগের ৩৩ শতক ও ৫৫৮ দাগের ১৭ শতক জমির নামজারি নথি তলব করেন। নথিপত্রে দেখা যায়, এই জমিটি গত ২৭.০৫.২০১৪ইং সালে সীতাকুÐ সাবরেজিস্ট্র্রি অফিসে রেজিস্ট্র্রি হয়েছিল। রেজিস্ট্রি দলিলে দেখা গেছে, মনির আহাম্মদ নাম দিয়েই জমিটি বিক্রি করা হয়েছে। আর জমিটি ক্রয় করেছেন চট্টগ্রামের পূর্ব নাসিরাবাদ হিলভিউ হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা মরহুম আলহাজ আবুল বশর ভূঁইয়ার পুত্র মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়া। কিন্তু দলিলে মালিকের নাম ঠিক থাকলেও অন্যান্য তথ্যে ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। আসল মালিক মনির হোসেনের মাতার নাম জানব বিয়া ও জন্মতারিখ ০৩.০৮.১৯২০ সাল হলেও দলিলের দাতা মনির হোসেনের (নকল মালিক) মাতার নাম রয়েছে মরহুমা আছিয়া খাতুন এবং জন্মতারিখ ০৮.০৫.১৯৬০ইং। সীতাকুÐের সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিন প্রতিবেদককে বলেন, এসব গড়মিল পাওয়ার পর আমি অসহায় বৃদ্ধের অবস্থা চিন্তা করে সীতাকুÐের সাবরেজিস্ট্রার আশেকুল হকের সাথে কথা বলে নথিপত্র যাচাই করলে দেখা যায় রেজিস্ট্র্রি দাতার স্থানেও অন্য একজনের ছবি লাগানো রয়েছে। এছাড়া দাতার ভোটার আইডি কার্ড নম্বর, মাতার নাম, জন্মতারিখ কোনো তথ্যই সঠিক নয়। ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন বলেন, এরপর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমিটির ক্রেতা শিল্পপতি নুরুন্নবী দালালদের কথায় জমিটি কিনেছিলেন। দালালরা এক ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে নিয়ে আসলে নুরুন্নবী তাকেই আসল মালিক মনে করে কথাবার্তা বলে রেজিস্ট্রি করে কিনে নেন। প্রকৃতপক্ষে এ ক্ষেত্রে নুরুন্নবীর কোনো দোষ ছিল না। ফলে আমি সব কাগজপত্র বুঝে নিয়ে জমির প্রকৃত মালিক বৃদ্ধ মনির হোসেনের নামে পুনরায় জমিটির নামজারি করে দিয়ে নুরুন্নবীর নামে জারিকৃত নামজারি বাতিল করেছি। এতে বৃদ্ধটি তার শেষ সম্বল ফিরে পেল। এদিকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, জমি একবার কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে চলে যাওয়ার পর তা আর ফিরে পেতে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর কথা। বিশেষত নব্বইউর্ধ ঐ অসহায় বৃদ্ধের জন্য তো তা একপ্রকার দুরুহ। বৃদ্ধটি ভূমি অফিসে এসে নিজের কথাও ঠিকমত বুঝিয়ে বলতে পারছিলেন না। তা দেখে তার প্রতি এসি ল্যান্ড স্যারের খুব মায়া হয়। তাই তিনি তাকে তার পক্ষে কথা বলার জন্য কাউকে নিয়ে আসতে বললে বৃদ্ধের পক্ষে তার নাতি এসে সবকিছু খুলে বলেন। তবে প্রকৃত ঘটনার জানার পর আর কোনো কালবিলম্ব করেননি এসি ল্যান্ড। তিনি অতি দ্রæত এব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়ে বৃদ্ধকে তার জমিটি ফিরিয়ে দেয়ায় তাকে প্রাণ ভরে দোয়া করেন ঐ বৃদ্ধ। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট মো. রুহুল আমিন বলেন, বৃদ্ধটিকে দেখে আমার খুবই খারাপ লাগছিল। তিনি ঠিকমত কথাও বলতে পারছিলেন না। তবুও শেষ সম্বল রক্ষায় তিনি ভূমি অফিসে এসেছিলেন। আমার ভালো লাগছে যে, আমি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থেকে অসহায় বৃদ্ধটিকে তার ৬০ শতক জমি ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। এতে যে মানসিক প্রশান্তি তার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ