বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বরিশাল ব্যুরো : চরমোনাই বার্ষিক মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে গতকাল দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আগত ওলামা-মাশায়েখদের উপস্থিতিতে বিশাল ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওলামা সম্মেলনে সউদী আরব, ওমান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিবর্গের আগমনে মাহফিলে উপস্থিত মুসুল্লীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। চরমোনাই পীর ছাহেবের আমন্ত্রণে মাহফিলে যোগ দিতে গতকাল সকালে সউদী রাজকীয় সরকারের একটি প্রতিনিধি দল চরমোনাইতে আসেন। প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন সউদী সরকারের ধর্ম মন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ইবরাহীম ইবনে আব্দুল আজীজ আয যায়েদ, সর্বোচ্চ উলামা কাউন্সিলের সদস্য ও মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাদ বিন তুর্কী ইবন মুহাম্মাদ আল খাচলান, রিয়াদ জামিউল ইখলাসের সম্মানিত ইমাম ও খতীব মুহাম্মদ সালেহ মুহাম্মাদ আস সামেরী, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ জাইফুল্লাহ আল মাতিরী, সালেম সাইদ ইবনে সালেহ আব্দুল আযীযসহ সউদী রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তাগণ। চরমোনাই মাহফিল ময়দানে পীর ছাহেব মুফতি সৈয়দ মো: রেজাউল করীম, নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মো: ফয়জুল করীম ও আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মো: মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে লাল গালিচা সংবর্ধনা প্রদান করেন। পরে মেহমানবৃন্দ জামিয়ার কার্যালয়, কুরআন শিক্ষা বোর্ড অফিস ও মাহফিলের প্যান্ডেলসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে মুসুল্লীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইবরাহীম ইবনে আব্দুল আজীজ আয যায়েদ জানান, তিনি সউদী বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজীজ-এর পক্ষ থেকে এসেছেন। তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, চরমোনাইর পুরো ময়দান জুড়ে যেন নূর চমকাচ্ছে। তিনি ঈমানী এই দলের সাথে থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এখানে আসতে পেরে তিনি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, আমাদের নীতি হলো বিশ্ব মুসলিমের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি পীর ছাহেবের পরিবারকে পবিত্র পরিবার উল্লেখ করে তাকে মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আয়োজক এবং আসার ব্যবস্থা করে দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। চরমোনাইর এই দ্বীনি মারকাযের সাথে সউদী সরকারের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
সাদ বিন তুর্কী ইবন মুহাম্মাদ আল খাচলান তার বক্তব্যে বলেন, পঙ্গপালের মতো অসংখ্য মানুষ দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্যে নয়, শুধুমাত্র আল্লাহকে পাওয়ার জন্য এখানে ছুটে এসেছেন। তিনি সকল মুমিনকে একটি দেহের ন্যায় উল্লেখ করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি ঈমান, নামাজ, ইলম ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠারও জোর দেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর পীর ছাহেব চরমোনাইর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে বিশ্ববরেণ্য ওলামা-মাশায়েখসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম বক্তব্য রাখেন। বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিমের প্রতিনিধি হিসেবে আসেন নায়েবে মুহতামিম আব্দুল খালেক সাম্বলী, শায়খে সানী আল্লামা কমর উদ্দিন, নাজেমে তালীমাত আল্লামা ইউসুফ তাওলুভী, সাবেক নাজেমে তালীমাত আল্লামা মুজিবুল্লাহ। গতকালের এ মাহফিলে মক্কা শরীফের বাসিন্দা বিশ্ববরেণ্য মাশায়েখ আল্লামা আব্দুল হাফিজ মক্কী (রহ.) এর ৭ ছেলে উপস্থিত ছিলেন। তন্মধ্যে ১ ছেলে তার বক্তব্যে তাদের মৃত বাবার জন্য দোয়া কামনা করেন। উল্লেখ্য, মরহুম আব্দুল হাফিজ মক্কী গত বছর মাহফিলে এসে বক্তব্য রেখেছিলেন।
ওমানের মাসকাট উলুমে শরইয়্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার খালিদ ইবনে মুহাম্মাদ সালেম আবদালী তার বক্তব্যে বলেন, যারা কুরআনের বিরোধিতা করবে তারা ধ্বংস হবে। মুসলমানদেরকে কুরআন প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। দেওবন্দের আল্লামা আব্দুল খালেক সাম্বলী বলেন, যুগে যুগে কাদিয়ানীসহ বাতিলগোষ্ঠী চেষ্টা করেছে মানুষকে আলেমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে, কিন্তু তারা সফল হয়নি। তাই আলেমদেরকে সতর্ক থেকে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
বক্তারা চরমোনাইকে বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বের সহিহ দাওয়াতী মারকায হিসেবে অভিহিত করেন। বিদায়ের পূর্বে সউদী মেহমান ভালবাসার নিদর্শনস্বরূপ সউদী বাদশাহর পাঠানো নানাপ্রকার সম্মানজনক উপহার সামগ্রী পীর ছাহেব মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীসহ পরিবারের সকল সদস্যের হাতে তুলে দেন।
গতকাল চরমোনাইর মাহফিলে দেশের শীর্ষ ওলামাদের মধ্যে তেজগাঁও মাদরাসার মুহাদ্দিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমাদ, বরিশাল মাহমুদিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগের শায়খুল হাদীস মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ, মাওলানা আব্দুস সাত্তার (পীর সাহেব গালুয়া), মাওলানা মুফতী ওয়ালিউল্লাহ (পীর সাহেব বরগুনা) উপস্থিত ছিলেন। বিকেল এবং রাতেও ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দের শীর্ষ ওলামাসহ দেশী-বিদেশী ওলামায়ে কেরামগণ বয়ান পেশ করেন। মাহফিলের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ (রবিবার) সকাল ১১টায় ছাত্রদের উদ্যোগে ছাত্র-গণজমায়েত ও সোমবার সকাল ৮টায় আখেরী মুনাজাতের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক এ মাহফিলের সমাপ্তি ঘটবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।