Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপরাধীর রাজনৈতিক দায়মুক্তি কাম্য হতে পারে না

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান : রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় ফের মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মামলার মোট সংখ্যা ২০৬টি। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৩৪টি। এ ছাড়া ধর্ষণ, নাশকতা, ঘুষ লেনদেন। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ডাকাতি, অবৈধ অস্ত্র রাখা, কালোবাজারি, অস্ত্র মামলা এমনকি চুরির মামলাও রয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, যেসব মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে দেড় শতাধিক মামলাই আওয়ামী লীগের পরপর দুই মেয়াদের সরকারের আমলে করা। অধিকাংশ মামলাই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা করেছে।

মামলা প্রত্যাহারের এই উদ্যোগের প্রেক্ষিতে সঙ্গতভাবেই কতকগুলো প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রথমত, হত্যা মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক হয় কি করে? ধর্ষণ মামলাই বা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক হয় কিভাবে? ঘুষ লেনদেন, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ অস্ত্র রাখা, কালোবাজারি, অপহরণ, চুরি-ডাকাতির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক কি? দ্বিতীয়ত, সরকারের দুই আমলে যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে সেসব মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা হয় কেমন করে? মামলাগুলোর যারা আসামি তাদের অধিকাংশই সরকারি দলের লোক। সরকার কি তবে নিজ দলীয় লোকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা করেছে? তৃতীয়ত, অধিকাংশ মামলা সরকারি বিভিন্ন সংস্থা করেছে। আবার সেসব মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার সরকারের করা মামলা প্রত্যাহার করে কিভাবে? বলা বাহুল্য, এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। তবে সম্ভাব্য একটা উত্তর এই হতে পারে, সরকার চাইছে তাই মামলা প্রত্যাহারের এই উদ্যোগ। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে একটা খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করানো হয়েছে মাত্র।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা ডিও লেটার দিয়েছেন। মামলা প্রত্যাহারের আবেদন ও এই ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি এক দফা বৈঠক করেই প্রত্যাহারের সুপারিশ করার জন্য একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এ ব্যাপারে আগে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ছিল। ইতোপূর্বে কিছু বহুল আলোচিত মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করার বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় উঠলে ওই আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি বাতিল করা হয়। এখন তাগিদ বা গরজ এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, নতুন করে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা পরিত্যক্ত হয়েছে। এর বদলে মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগে কমিটি গঠন করেছে। রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, বিলুপ্ত কমিটির বিভিন্ন বৈঠকে একাধিকবার নাকচ হওয়া অনেক আবেদন নতুন কমিটি গ্রহণ করে মামলা প্রত্যাহারের তালিকায় স্থান দিয়েছে।
আমাদের দেশের প্রতিহিংসাপরায়ণ ও সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা নতুন কিছু নয়। সাধারণত যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনে আবার যখন ওই দলটি ক্ষমতায় আসে তখন আগের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একইভাবে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে। অনুরূপভাবে যে দলটি ক্ষমতায় আসে সেই দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী সরকারের দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেয়। এটা এক ধরনের রাজনৈতিক প্রথা বা কালচারে পরিণত হয়েছে। অবশ্য এ কথা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, কোনো সরকারের আমলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়ের করা মামলার সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অথচ মামলা প্রত্যাহারের সময় সব ধরনের, যার মধ্যে হত্যা-ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাৎ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির মতো গুরুতর ও স্পর্শকাতর মামলাও রয়েছে, প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এটা বিচার প্রাপ্তির অধিকার ও ন্যায়বিচারের সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এ তথ্য অনেকেরই জানা, বিগত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় ৭ হাজার ১৯৮টি মামলা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছিল। এরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মামলা ছিল হত্যা মামলা। ইতোমধ্যে এসব মামলার বেশিরভাগই আদালত থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মহাজোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় ওই সব মামলার মধ্যে সরকারি দল ও মহলের লোকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর লোকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। মামলাগুলো বরং জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপি ও তার শরীক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার সূত্রে তাদের বহু লোককে গ্রেফতার করে জেলে ভরে রাখা হয়েছে।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও এই ধরনের নজির স্থাপিত হয়। ওই সরকারের আমলে ৫ হাজার ৮৮৮টি মামলা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ৯৪৫টি মামলা থেকে কিছু আাসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একই কায়দায় মামলা দায়ের করা হয়। বলা যায়, মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা একটা রাজনৈতিক নেচারে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা উপযুক্ত যাচাইবাছাই সাপেক্ষে প্রত্যাহার করে নেয়ার সুযোগ বা ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু এই উছিলায় হত্যা-ধর্ষণ ইত্যাদির মতো মামলাও প্রত্যাহার করে নেয়া হবে, সেটা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
কোনো সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করতে পারে, এটা মানা যায় না এ কারণে যে, তা সুস্থ ও স্বচ্ছ রাজনীতির পরিচয় বহন করে না। এটা প্রতিহিংসার রাজনীতির একটা প্রকাশ বা সাক্ষ্য। ভালো হয় যদি কোনো সরকারই এ ধরনের মামলাবাজিতে লিপ্ত না হয়। যেহেতু এ ধরনের প্রবণতা বিদ্যমান সুতরাং এমন পথ বা উপায় থাকা বাঞ্ছনীয় যাতে প্রকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করে মামলার যারা শিকার তাদের হয়রানি মুক্ত করা যায়, অব্যাহতি দেয়া যায়। কোনটা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা, আর কোনাটা নয়, সেটা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি দলনিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। বিচার বিভাগীয় কমিটিও করে দেয়া যেতে পারে। তাতে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা থেকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা অব্যাহতি পাবে। অপরদিকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার সাথে অন্য কোন মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ রহিত হবে।
সরকার যখন তার বা সরকারি সংস্থার দায়েরকৃত মামলা নিজেই প্রত্যাহার করে নেয়, তখন এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সরকারের অনুগত ও পছন্দের লোকদের শাস্তি থেকে বাঁচাতেই এটা করা হয়েছে। এতে সরকারের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিচারপ্রার্থী মানুষের এ অবস্থায় হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আমরা আইনের শাসনের কথা বলি, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকারের কথা বলি, অথচ এ ধরনের মামলা প্রত্যাহার আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকারের পরিপন্থী, সেটা আমলে নিতে চাইনে। দেশে বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এনিয়ে সচেতন মানুষ ও মানবাধিকারবাদীদের উদ্বেগের অবধি নেই। দেশে যে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐসহ বিভিন্ন অপরাধের সয়লাব চলছে, তার মূলে রয়েছে বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির সুযোগ। বিচার যদি বিলম্বিত হয়, সুবিচার যদি নিশ্চিত না হয়, আইনের ফাঁক-ফোকর ও দায়মুক্তির সুযোগে যদি অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, তবে অপরাধ বৃদ্ধিও আইনশৃংখলার অবনতি অবশ্যম্ভাবী। আজকে দেশে নাগরিকদের কোনো নিরাপত্তা নেই। অপরাধী চক্র এবং আইনশৃংখলাবাহিনীর অপরাধ প্রবণ ব্যক্তিদের দৌরাত্ম্যে মানুষ দিশাহারা। বিচার যদি নিশ্চিত হতো, আইনের শাসন যদি সর্বক্ষেত্রে সমানভাবে বলবৎ থাকতো তাহলে এ ধরনের নাজুক অবস্থা কখনোই সৃষ্টি হতো না।
আইন তার আপন পথে বা আপন গতিতে চলবে, এ ধরনের জনপ্রিয় ও লোকরঞ্জন মূলক কথা আমরা প্রায়ই ক্ষমতাসীনদের মুখ থেকে শুনে থাকি। কিন্তু এ কথার অন্তঃসারশূন্যতাও আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। আইন তার নিজস্ব ধারায় ও গতিতে চললে মানবাধিকারের যথেচ্ছ লংঘন এবং অপরাধের এই ভয়াবহ বিস্তার হওয়ার কথা নয়। মানুষের মধ্যে আইন ভাঙার, আইনকে বেতোয়াক্কা করে অপরাধ করার যে প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তাতে শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তার প্রত্যাশা আকাশ-কুসুম কল্পনা মাত্র। এ অবস্থায় একটা দেশ চলতে পারে না। দেশ ও সমাজকে অপরাধ ও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত করতে হলে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
মামলা হলে বিচার হবে, মামলার আসামীদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, বিচার-ফয়সালা কবুল করে নিতে হবে। এটাই স্বাভাবিক। মামলা মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত, না সত্য, বিচার প্রক্রিয়ায় সেটাও সাব্যস্ত হয়ে যায়, বা হয়। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করাই সর্ব বিবেচনায় উচিত ও সঙ্গত। মামলা যদি মিথ্যা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, বিচার প্রক্রিয়াতেই তা নির্ণীত হওয়া সম্ভব এবং সে ক্ষেত্রে আগামীরা বেকসুর খালাস পেতে পারে। যেহেতু মিথ্যা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আসামীরা অহেতুক হয়রানির শিকার হয়, মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে কারণে যারা মিথ্যা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে তাদের বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। প্রচলিত আইনে এ ধরনের প্রতিকার লাভের সুযোগ আছে। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যবাদী মামলা বলে কোনো মামলা তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বড় জোর এ ধরনের অভিযোগ সম্বলিত মামলার ক্ষেত্রে দ্রæত বিচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই সঙ্গে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এটা সম্ভব হলে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরের প্রবণতা হ্রাস পাবে। ব্যক্তির দায়েরকৃত মামলার ক্ষেত্রেই নয়, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে তাদেরও মামলা দায়েরের প্রবণতা হ্রাস পাবে। ইতোপূর্বে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হাজার হাজার মামলার বাদীদের কারো বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, মন তথ্য আমাদের কাছে নেই। বস্তুত তারা সম্পূর্ণ দায়মুক্তি লাভ করেছে। এ রকম দায়মুক্তি ঘটলে মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা দায়ের প্রবণতা কমার বদলে বরং বাড়তে থাকবে।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা দরকার। মামলা যে তরফেই হোক, দায়ের করা হলে তা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় হয়ে যায়। আদালতের বাইরে মামলা চলবে, না প্রত্যাহার করা হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার অন্য কারো থাকার কথা নয়। হলে আদালতের অধিকার ও স্বাধীনতা ক্ষুণœ হয়। আইন যদি তার পথে চলতে না পারে, আদালতের কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া যদি ব্যাহত হয়, তাহলে বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা বিনষ্ট হয়। বিচারহীনতার ধারা-প্রবণতা শক্তিশালী হয়। অতএব, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার নয়, বরং এ ধরনের মামলা যাতে দায়ের হতে না পারে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় বিপুল সংখ্যক মামলা প্রত্যাহারের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা একাধারে বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক। সরকারের দায়ের করা মামলা সরকার প্রত্যাহার করে নিয়ে তার দলীয় বা অনুগত লোকদের রেহাইয়ের ব্যবস্থা করে দেবে, সেটা মেনে নেয়া যায় না। সরকারেরই তার অবস্থান, মর্যাদা ও স্বার্থে, এ উদ্যোগ পরিহার করা উচিত। সেটা যদি না করে তবে বিচার বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। তার স্বাধীনতা ও এখতিয়ার সুরক্ষা করতে ভূমিকা নিতে হবে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সরকার সরাসরি বাস্তবায়ন করে না, আদালতের মাধ্যমেই করে। এখানে আদালতের হ্যাঁ করার যেমন এখতিয়ার আছে, তেমনি না করার এখতিয়ারও আছে। যেহেতু অধস্তন আদালতের ওপর নির্বাহী বিভাগ বা সরকারের প্রভাব রয়েছে সুতরাং অধস্তন আদালত সরকারের ইচ্ছের বাইরে সচরাচর যায় না। মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে এই না যাওয়াটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। বিষয়টি উচ্চ আদালতের দেখা দরকার। উচ্চ আদালত বা বিচার বিভাগই সরকারের এ ধরনের ইচ্ছা ও উদ্যোগ রুখে দিতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ