Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মঞ্জুরির ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়েছে অসংখ্য আমের গুটি

নরসিংদীতে গাছে গাছে ভরা মুকুল

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : ‘মাঘে বোল, ফাল্গুনে গুটি, চৈত্রে কাটিকুটি, বৈশাখে আটি, জ্যৈষ্ঠে দুধের বাটি’। এ তত্ত্বকথাগুলো বিখ্যাত জ্যোতিষ ও গণিতজ্ঞ বাঙালি নারী খনার বচন। এই বচনটিতে আমের প্রাকৃতিক ফলন প্রক্রিয়ার সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ফলরাজ আম সম্পর্কিত খনার এই বচনটি বাঙালি সমাজের যুগযুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে। ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে রয়েছে ব্যাপক প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। রয়েছে বহুবিধ ফলের সমাহার। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে এদেশের গাছে গাছে বিভিন্ন ফুল ও ফল। এখন ফাল্গুনের প্রথম ভাগ। বাংলাদেশের গাছে গাছে আমের ভরা মুকুল মঞ্জুরির ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়েছে সবুজ আমের গুটি। আম বাগানের গাছে গাছে এ এক অপরূপ দৃশ্য। আম প্রিয় শিশু-কিশোররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কবে কাঁচা আম খাবার উপযোগী হবে। কবে চাকু দিয়ে কেটে কাঁচা আম খাওয়া যাবে। এক সময় দেশে প্রচুর পরিমাণ আমের ফলন হতো। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে উন্নত জাতের আমের আদি নির্বাস ভারতের আসাম থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত। বাংলাদেশের সাথে আসামের সীমানা থাকায় সেখান থেকে বাংলাদেশে আম চাষ সম্প্রসারিত হয়। তখন থেকেই বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে আমগাছ ছড়িয়ে পড়ে। বেসরকারি হিসাব মতে সে সময় বাংলাদেশে বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টন আম উৎপাদিত হতো। আমের এত প্রাচুর্য ছিল যে, মানুষ নিজের গাছে আম খেয়েই শেষ করতে পারতো না। তখন কাঁচা আম কেটে খাবার অস্ত্র ছিল ঝিনুক। নদীতে প্রচুর সংখ্যক ঝিনুক পাওয়া যেতো। সে ঝিনুক কুড়িয়ে এসে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে পাথরে ঘষে ধার দিয়ে আমের বাকল ছিলানো হতো। এরপর বাঁশের পাতলা ‘লেইল’ দিয়ে কেটে মানুষ আম খেতো। এভাবে কাঁচা আম কেটে খাওয়া ছিল শিশু ও কিশোর বয়সে বিশাল আনন্দ। এখন লোহার ছুরি দিয়ে কাঁচা আম কেটে খাওয়া হয়। এক সময় আম গাছের মালিকানা থাকলেও আমের কোন মালিকানা ছিল না। গাছের নিচে কাঁচা আম ঝরে পরে পচে যেতো। খাবার লোক ছিল খুবই কম। এখন কারো গাছ থেকে বা গাছের নিচে পড়ে থাকা আমও কেউ ধরতে পারে না। তবে এখনো বাড়ি বাড়ি আম গাছ আছে। কমবেশি আম হয় সব গাছেই। কাঁচা আম অত্যন্ত প্রিয় বাঙালি সমাজে। কুটি কুটি করে আম কেটে লবণ মেখে খাওয়া, কাঁচা আমের ভর্তা করে খাওয়া, কাঁচা আমের আচার করে খাওয়া, কাঁচা আম দিয়ে ডাল রান্না করে খাওয়া, কাঁচা আমের অম্বল রেধে খাওয়া বাঙালি সমাজের যুগযুগের ঐতিহ্য। কাঁচা আম দিয়ে যত প্রকার খাবার তৈরি হয়। অন্য ফল দিয়ে তত প্রকার খাবার তৈরি করা যায় না। গুটি থেকে শুরু করে পাকা আমের আটি পর্যন্ত চুষে খায় বাঙালিরা। এক সময় বাজারে কাঁচা আম, পাকা আম কোটাই বিক্রি হতো না। এখন চৈত্র মাসের প্রথম দিকে বাজারে কাঁচা আম আমদানি হয়। তখন এক কেজি কাঁচা আম বিক্রি হয় এক থেকে দেড়শ’ টাকা। এরপরও বাঙালিরা বাজার থেকে কাঁচা আম কিনে নিয়ে আনন্দ পায়। প্রথম কাঁচা আম বা কাঁচা আমের যেকোন প্রকার খাবার বাঙালি পরিবারে এক নতুন আনন্দের সৃষ্টি করে। কাঁচা আমে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খনিজ লবণ ও খাদ্য শক্তি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, কাঁচা আম শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে, স্মৃতি শক্তি বাড়ায়, চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে। হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে কাজ করে। পটাশিয়ামের অভাব পূরণ করে। কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণ আইড়ল থাকায় রক্ত স্বল্পতা দূরীভূত করে। ঠা-া জাতীয় রোগ প্রতিরোধ করে। কিডনি সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। লিভারকে সুস্থ রাখে। অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের চামড়া উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখে। আমে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমে বেশি পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ থাকে। বেশি বেশি কাঁচা আম খেয়ে শরীর সুস্থ রাখার জন্য বাঙালিকে আর একটি মাস অপেক্ষা করতে হবে। গাছে গাছে আমের মুকুল মঞ্জুরির ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়েছে অসংখ্য আমের গুটি। এসব গুটি বড় হয়ে বাঙালির রসনা তৃপ্ত করতে একেবারে কম হলেও ২০/২২ দিন সময়তো লাগবেই। আর এই সময়টুকুর জন্য আমরা যার যার আম গাছের দিকে তাকিয়ে থাকি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ