Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধরলার ভাঙন প্রতিরোধে স্বেচ্ছাশ্রমে পাইলিং

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে তিন গ্রামের ১৪ থেকে ১৫শ’ পরিবার একত্রিতভাবে শুরু করেছে স্বেচ্ছাশ্রমে পাইলিং। এজন্য আশপাশের প্রায় ২৫ গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার বাঁশ। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক মানুষ পর্যায়ক্রমে পাইলিং-এর কাজে সহযোগিতা করছে। আর এজন্য বাড়ি বাড়ি চাল-ডাল সংগ্রহ করে কর্মক্লান্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন গৃহিনীরা। সরকারি উদ্যোগ না থাকায় ভাঙনকবলিত কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের নানকার এলাকায় চলছে এই পাইলিং-এর কাজ। ইতোমধ্যে ৩শ’ মিটার পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে। নানকার গ্রামের ভাঙনকবলিত কৃষক হবিবর রহমান জানান, গত ২/৩ বছরে আমার ৫০ বিঘা ফসলি জমি, পাকা বাড়ি ধরলা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার বাড়িতে ৪টা হাল ছিল। এখন আমি ফুফাতো ভাইয়ের হাত-পা ধরে তার জায়গায় ঠাঁই নিয়েছি। জমা-জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে নি:স্ব^ হবিবর রহমান দুচোখ মুছতে মুছতে বলেন, আমার বাড়িতে ৩ জন কাজের লোক ছিল। এখন আমাকে পরের বাড়িতে কামলা দিতে হচ্ছে। কথাগুলো বলে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকলেন তিনি। তার স্ত্রী আঞ্জুমানআরা জানান, ‘নেকানেকি করি কি হইবে। হামার কপাল পুড়ি গেইচে, তাক কি ফেরৎ পামো!’ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল, এই এলাকায় প্রায় ১২ কিলোমিটারজুড়ে চলছে ভাঙন। এখন ভাঙন না থাকলেও তার চিহ্ন বহন করছে গোটা তীরজুড়ে। শুধু নানকার নয়, এর সাথে সাতভিটা, কাইম বড়াইবাড়ী, নন্দদুলালের ভিটা, জগমোহনের চর, পাঙ্গারচর, সর্দারপাড়াসহ প্রায় ১০টি গ্রামজুড়ে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও বৃক্ষরাজি। নানকার ও নন্দদুলালের ভিটা এলাকার ছানছার আলী (৭০), ফিচারী (৭২), লোকমান (৫৬), আব্দুল হাকিম (৫২), মেহেরবান (৩৮) ও ছকিনা (৪৫) জানান, গত ২/৩ বছরে এই এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে একরের পর একর ফসলি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে নন্দদুলারের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। মাত্র ২০ ফিট দূরেই প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা নদী। তারা অভিযোগ করেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে রিলিফ আর বাড়ি ভাঙার তালিকা নিয়ে লোকজন চলে যায়, কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এলাকার মানুষ রিলিফ চান না। তারা ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের সহযোগিতা চান। নন্দদুলারের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মালেক জানান, আড়াইশ’ শিক্ষার্থী নিয়ে এই দ্বিতলবিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আগামী বছর টিকবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। অনেক দেন-দরবার করেও সরকারিভাবে কোনো প্রটেকশনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে আমরা হতাশ। পাইলিং কাজের উদ্যোক্তা মজিবর রহমান (৪৬) জানান, প্রতি বছর ভাঙনের সময় আমরা চেয়ারম্যানসহ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের জানাই। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ নেয় না। তারা চাল দেয়, টাকা দেয় কিন্তু ভাঙন ঠেকানোর জন্য আশ^াস দিলেও কাজ করে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেও কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় আশপাশের লোকজনকে ডেকে পাইলিং-এর কাজের কথা বলি। এতে সাতভিটা, নানকার ও কাইম বড়াইবাড়ি গ্রামের ১৪/১৫শ’ পরিবার এই কাজের জন্য আগ্রহ দেখায়। তাদেরকে নিয়েই আমরা কাজটা শুরু করেছি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর বাম ও ডানতীরে ভাঙনকবলিত এলাকার জন্য প্রকল্প তৈরির কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ভোগডাঙ্গায় যারা ভাঙন প্রতিরোধে অস্থায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করছে, তাদেরকে কারিগরি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ