Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আস্থা ফেরানোর পরীক্ষায় ইসি

হঠাৎ ই-ভোটিং বিতর্ক

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয়/ অদ্য ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা’ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার এই পঙ্ক্তিই বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জুঁতসই উদাহরণ। কাজী রকীবউদ্দিন ইসিকে বিতর্কিত করে হন ‘ছিইছি’। ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা পূরণের ভূমিকা থেকে ‘ইসির ইমেজ ডুবানোয়’ রকিব উদ্দিনকে মানুষ ‘ইয়েস উদ্দিন’ বলতেন। আজ্ঞাবহ মানসিকতায় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানকে ডুবানোয় ইমেজ এখন তলানিতে। বর্তমানে ধ্বংসের মুখোমুখি কার্যত দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা। দেশের ভোটারতো বটেই; জাতিসংঘ, উন্নয়ন সহযোগী দেশ, দাতা সংস্থা, সুশীল সমাজ, নির্বাচন নিয়ে কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠান সবার কাছে নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ। ভাবমূর্তির তলানি থেকে ইসিকে তুলে আনা সময়ের দাবি। দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন সিইসি কে এম নুরুল হুদা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এটা একটা বড় দায়িত্ব। সব দলকে আস্থায় এনে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে চাই। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতা চাই’। সিইসি এই বক্তব্যে দৃঢ় থাকলেই নির্বাচন কমিশনের হারানো ইমেজ ফিরে পাওয়া সম্ভব। যার জন্য শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়; বরং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ইসিকে সহায়তা করা সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের নৈতিক দায়িত্ব।
বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি, আগামী দিনের রাজনীতি, গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকার, আইনের শাসন, সবকিছু নির্ভর করছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর। নতুন নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ কর্মকান্ডই নির্ভর করছে আগামী দিনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। দেশ-বিদেশের মানুষ তাকিয়ে রয়েছে তাদের দিকে। বাংলাদেশের মানুষ পারে না পৃথিবীতে এমন দুরূহ কাজ নেই। ’৭১ সালে মাত্র ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে: বিশ্বের বহু দেশে জাতিসংঘের অধীনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের সেনা-পুলিশের সাফল্য প্রসংশনীয়। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী বিশ্বের দেশে দেশে কাজ করে সাফল্য দেখিয়েছেন। বৃটেনসহ অনেক উন্নত দেশের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন আমাদের দেশের অনেক মানুষ। নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই সকলে ভারতের সাবেক সিইসি টি এন সেশনের নাম উল্লেখ করেন। সেশন ভারতে নিরপেক্ষভাবে সিইসি’র দায়িত্ব পালন করে ‘ইতিহাস’ হয়েছেন। সেশনের আগেও সুকুমার সেন নামে এক বাঙালি সিইসি হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতিহাসে নাম লেখান। ১৯৫৩ সালে ভারতের সিইসি হিসেবে সুকুমার সেন ছিলেন আন্তর্জাতিক নির্বাচন কমিশনের সভাপতি। তার নেতৃত্বেই ১৯৫৩ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে গণভোট হয়। নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করে তিনি ইতিহাসে নাম লেখান। সুকুমার সেন, সেশনরা ইতিহাসে নাম লেখাতে পারলে আমাদের সিইসি কে এম নুরুল হুদা পারবেন না কেন? রাজনৈতিক দর্শন মানুষের থাকতেই পারে। তার গায়ে যতই রাজনৈতিক দলের রঙ দেয়া হোক; সাংবিধানিক পদের গুরুত্ব বুঝে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করলে তিনিও ইতিহাসে নাম লেখাতে পারবেন- এ বিশ্বাস দেশের মানুষের আছে।
নতুন ইসি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই আসন্ন অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং সিস্টেম চালুর কথাবার্তা চলছে। সরকারের নীতি-নির্ধারকদের অভিপ্রায়ের পর পরীক্ষামূলকভাবে মেশিনের মাধ্যমে ভোট নেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। ডিজিটাল ভোটিং মেশিন তৈরি করা হচ্ছে। এই ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত করলে পরবর্তী কাজ শুরু হবে। প্রশ্ন হলো নতুন ইসির সামনে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ? নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি উদ্ধারে নিরপেক্ষ নির্বাচন, নাকি পরীক্ষামূলকভাবে ই-ভোট চালু? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ই-ভোট উন্নত প্রক্রিয়া। তবে বর্তমান সিইসির প্রধান দায়িত্ব ইসির ইমেজ উদ্ধার করা। কাজী রকিবদের অপকর্মে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। আগে সেই গ্রহণযোগ্যতা ফিরিয়ে আনুক; অতঃপর ই-ভোট নিয়ে গবেষণা।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে যখন সার্চ কমিটি গঠন করা হয়; তখন সবার মধ্যে প্রশ্ন ছিল- কীভাবে এবং কোন ধরনের ব্যক্তি নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে। বিতর্কের মধ্যে নতুন ইসি গঠিত হয়েছে। সর্বজনগ্রহণযোগ্য কিছু ব্যক্তির নাম তালিকায় থাকলেও কম পরিচিত ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠিত হয়েছে। সঙ্গত কারণে সংক্ষুব্ধ বিএনপি সিইসির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ তোলে। জনতার মঞ্চের নেতা বলে তার গায়ে রঙ লাগায়। ২০০৬ সালে বিচারপতি এম এ হাসানের বিরুদ্ধে ‘বিএনপির অতীতের লোক’ অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছে। তাকে সিইসি মেনে নেয়নি। বিএনপিও সে সূত্রেই নুরুল হুদাকে ‘আওয়ামী লীগের সাবেক লোক’ অভিযোগে মেনে নিতে চাইবে না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন ৫ জানুয়ারি মার্কা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আর দেখতে চাচ্ছেন না। তেমনি বিশিষ্টজনদের বক্তব্য হলো বিএনপির উচিত রাজনীতিতে কৌশলের পরিবর্তন। এখন ইচ্ছা করলেই সিইসির পরিবর্তন সম্ভব নয়। আর সিইসি পদও বিএনপির প্রয়োজন নেই। তাদের প্রয়োজন জনগণের ভোট দেয়া নিশ্চিত করা এবং সে ভোটের ফলাফল নির্বিঘেœ ঘোষণা দিতে পারে এমন নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য পরিবেশ। এ ধরনের নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা অপরিহার্য। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের উচিত আগে ইসিকে সহায়তার কৌশল নেয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনে যে ভুল করেছে; এবার সিইসির বিরোধিতা থেকে সরে না এলে একই ভুল করবে। ওই নির্বাচনে বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সকল প্রার্থীর মূল টার্গেট ছিল দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী। সবগুলো নির্বাচনী সভায় এমন বক্তব্য দেয়া হয় তাতে মানুষ মনে করে ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ নয়; তাদের মূল প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল সেনাবাহিনী। সে কারণে বিপুল ভোট পাওয়ার পরও বিএনপি মাত্র ৩২টি আসন পায়। এবার সেই কৌশলের মতো সিইসি’র বিরুদ্ধে শুধু প্রচারণা চালালে সেটা হবে আত্মঘাতী। বরং সিইসি দল নিরপেক্ষ থেকে কোমর সোজা রেখে কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারেন সে জন্য ইসিকে সহায়তা করা উচিত। বিএনপি কী সেটা করবে? নাকি মজ্জাগত রাজনীতি চর্চার সূত্র ধরেই বিরোধিতার জন্যই সিইসির বিরুদ্ধে বক্তৃতাবাজি করবে? সুজনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অনেকের মতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা খাদে পড়ে গেছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকে। গণতান্ত্রিক যাত্রা পথের সূচনা হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। এখন তো নির্বাচনে আর ভোট দিতে হয় না। নির্বাচনের ফলাফল আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হলে ইসিকে হারানো ইমেজ ফিরে আনতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। সব দলকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের সময় ই-ভোটিং সিস্টেম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। আমরা প্রস্তাবনাও করেছি। কিন্তু বর্তমান ইসি প্রয়োজন পরীক্ষামূলক ই-ভোটিং নয়; তাদের প্রয়োজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আগে ইসি’র কর্মকান্ডকে মানুষের আস্থায় নিয়ে আসা। তারপর অন্য চিন্তা।
‘জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো’ প্রবাদের মতোই যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন এবং যারাই নিয়োগ পান না কেন তারা কি কাজ করছেন সেটাই এখন আসল। ৩১টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বঙ্গভবনের সংলাপে ২৩টি দল সংবিধান অনুযায়ী আইনের প্রণয়ন করে ইসি নিয়োগের দাবি করেন। সরকার থেকে দাবি করা হয় সময়ের স্বল্পতার কারণে নতুন আইন প্রণয়ন ছাড়াই নির্বাচন কমিশন হচ্ছে। ফলে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হবে কিনা এ নিয়ে জনমনে নেয় নতুন শঙ্কার জন্ম। অন্যদিকে বিদেশি কূটনীতিকরা ইসির কর্মকান্ডের ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখছেন। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন প্রকল্পে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে একতরফা অবিহিত করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি দেশ ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার সার্টিফিকেট দেয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সেই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি; পর্যবেক্ষক মিশনও প্রত্যাহার করে নেয়। নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে যে অনুদান ইইউ দিত সেটাও কমিয়ে দেয়। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে ব্রাসেল্সে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। তারা চান বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিনস এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশনের কর্মকান্ড ইস্যুতে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইইউর কূটনীতিকর ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের সময় প্রেসিডেন্টের সাক্ষাতের চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদোন বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তারা বৈঠক করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ রাষ্টদূত মার্সিয়া বøুম বার্নিকাট সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা সব সময় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে উৎসাহিত করি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, শুধু ভোটের দিনে যা কিছু ঘটে সেটি নয়। বরং ভোটের আগেই দলগুলোর প্রতিদ্ব›িদ্বতা করা ও বিতর্ক করার অবাধ সুযোগ সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশের পূর্বশর্ত। পাশাপাশি গণমাধ্যম যেন স্বাধীনভাবে ভোটের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিবেদন করতে পারে, সে সুযোগও থাকতে হবে। বোঝা যায় আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যাপারে তৎপর। এখন ইসির উচিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সেটা করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দল ও মানুষের আস্থায় নিয়ে আসা। এজন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইসিকে সহায়তা করা। নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা এবং সরকারের আন্তরিকতা ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ইসির পক্ষ্যে সম্ভব নয়। এটা করতে চাইলে বিতর্ক বাদ দিয়ে একে অন্যের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া। সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে হলে আগে নির্বাচনী ‘মাঠ সমতল’ করতে হবে। এজন্য বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে যে ১০ থেকে একশ’টি পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়েছে সেগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। প্রয়োজনে ভোটের পর সেগুলো আবার সচল করা যেতে পারে। এটা হলে বিএনপি অন্তত নির্বাচনী প্রচারণা নির্বিঘেœ চালাতে পারবেন। একপক্ষ আদালতে দৌড়ঝাঁপ আর পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থাকবে অন্যপক্ষ নির্বিঘেœ প্রচারণা চালাবে সেটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র হতে পারে না। বি. চৌধুরীর এ যুক্তি যথার্থ। কাজেই বিএনপিকে যেমন সিইসিকে নিয়ে বিতর্কের বদলে ইসিকে সহায়তার কৌশলের দিকে ঝুঁকে পড়া উচিত; তেমনি ইসির উচিত নির্বাচনী মাঠ সমতল করতে অংশীজনদের মামলাগুলোর কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো। এতে নতুন ইসির প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। মনে রাখতে হবে আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে দেশের গণতন্ত্রের অস্তিত্বই শুধু বিলীনের পথে যাবে না; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশ নানা প্রকার বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হবে। বিশ্বের দেশে দেশে কাজ করা প্রায় এক কোটি প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্সে বাধা আসবে। গার্মেন্টস শিল্পের আমেরিকার জিএসপি স্থগিত আগেই হয়েছে; ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই পথ অবলম্বন করতে পারে। এ ছাড়াও দেশে বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়বে এবং সর্বত্রই অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে। যা কারো জন্য কাম্য নয়।
যারা নবগঠিত নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতে যাচ্ছেন কিংবা যারা হুদা কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন; তাদের উচিত হবে আগে নতুন ইসির কর্মকান্ড দেখা। হুদা কমিশনের কাজকর্ম না দেখে তাদের নিয়ে প্রশ্ন তুললে যারা নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন; তাদের কথা দেশের মানুষ আমলে নিতে চাইবে না। সব পক্ষের উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই ভাষার মাসে একুশের চেতনায় শাণিত হয়ে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে দেয়া; প্রয়োজনীয় সহায়তা করা। এটাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। বিতর্ক করে পরিবেশ নষ্ট করা যায়; মিডিয়ায় কভারেজ পাওয়া যায়; নির্বাচনী সমতল মাঠ সৃষ্টি করা যায় না। সাফল্য পেতে হলে একদিকে ইসিকে সহায়তা করতে হবে; অন্যদিকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই পথ অনুসরণ করবে সে প্রত্যাশা এখন সবার। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের পঙ্ক্তি ‘ফুল খেলার সময় নয়’ এর মতোই এখন ইসির পরীক্ষামূলক ই-ভোটিং এর সময় নয়; তলানিতে পড়ে যাওয়া ইমেজ রক্ষায় ইসির সামনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জরইর। রাজনৈতিক দলগুলোকেও সে লক্ষ্যে ইসিকে সহায়তা করা উচিত। সিইসি নুরুল হুদা ইতিহাসে নাম লেখালে জনগণ শুধু ভোটের অধিকার ফিরে পাবে তাই নয়; দেশও বাঁচবে।



 

Show all comments
  • Anisur Rahman ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:১৭ এএম says : 0
    বর্তমান ইসি প্রয়োজন পরীক্ষামূলক ই-ভোটিং নয়; তাদের প্রয়োজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আগে ইসি’র কর্মকান্ডকে মানুষের আস্থায় নিয়ে আসা।
    Total Reply(0) Reply
  • এম এ বাতেন ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:১৯ এএম says : 0
    এই পরীক্ষা ইসির উত্তীর্ণ হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Miraz ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:১৫ পিএম says : 0
    আশা করি ইসি বিষয়টি নিয়ে গভীর ভাবে ভেবে দেখবেন
    Total Reply(0) Reply
  • Dinar Mahmud ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:১৬ পিএম says : 0
    অত্যান্ত যৌক্তিক ও দিক নির্দেশনামুলক লেখা। লেখককে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Laboni ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:১৯ পিএম says : 0
    Notun EC er member ra jodi ai bisoyti bujte paren tahole desh o jatir jonno tara valo kisu korte parbe
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ