Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে উপক‚লবাসী

নেই পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাসুদুল হক, বাগেরহাট থেকে : প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে ওঠে উপক‚লীয় জেলা বাগেরহাটের মানুষ। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানে সবচেয়ে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান জেলার সহ¯্রাধিক মানুষ। বেসরকারি হিসাবে নিহতের এ সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। বিধ্বস্ত হয় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা। মারা যায় লক্ষাধিক গবাদিপশু। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা মনে করেন, সিডরের সময়ে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে উপক‚লীয় এই জেলায় এত বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই উপক‚লবাসীর অন্যতম প্রধান দাবি ছিল পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ। জানা গেছে, সিডরের পর সাউথখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার হলেও এতে ধারণক্ষমতা অনেক কম। একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬-৭শ’ লোকের ধারণক্ষমতা থাকলেও সেখানে আশ্রয় নিতে হয় ২ থেকে আড়াই হাজারের অধিক। ঘূর্ণিঝড় সতর্ক সংকেত ঘোষণা হলে এই শেল্টারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। অনেকে শেল্টারে জায়গা পান না। একই স্থানে একাধিক শেল্টার রয়েছে, আবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শেল্টার নেই। অনেকগুলো আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী। অনেক স্থানে শেল্টারে যাওয়ার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খারাপ। সিডরের পর শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নে বেশকিছু স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে রাস্তাঘাট। সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য ট্যাঙ্কি, টিউবওয়েল, বাথরুম টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। ওই সকল সাইক্লোন সেল্টারে পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। উদ্বিগ হয়ে পড়েছে অভিভাবকেরা। মধ্য সাউথখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাব্বির, ডালিয়া, নাজমুল বলেন, এতবড় ভবনে টিউবওয়েল আছে পানি নেই। আমরা স্কুলে আসার পর টয়লেটে যেতে পারি না। অন্যের বাড়ির টয়লেটে যেতে হয়। তারপর খাবার পানি খেতে পারি না। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলকিস জাহান বলেন, পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে প্রতিনিয়ত দুইশ’ শিক্ষার্থী নিয়ে আমরা বিড়ম্বনায় পড়ছি। অনেক সময় দূর থেকে বালতিতে পানি এনে ভবনের দোতালায় উঠাতে হয়। এরপর বাথরম পরিষ্কার করতে হয়। এই ভবন নির্মাণের তিন বছর পার হলে বিদ্যুৎ না থাকায় আলো, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যায় আছি। পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করা সাউথখালীতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জেজেএস-এর মহড়া প্রকল্প কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, আমরা ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে কাজ করছি। সাউথখালী ইউনিয়নে মাত্র ৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যা অপ্রতুল। এছাড়া জনসংখ্যার দিক থেকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র কম। লাকুড়তলা সাইক্লোন শেল্টার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল আলী খান বলেন, সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলায় প্রয়োজনের তুলনায় সাইক্লোন শেল্টার এখনো অনেক কম। দ্রæত এই এলাকায় নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা দরকার। পানির অভাবে বাথরুম নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রলোকে সংস্কার করা জরুরী। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় বর্তমানে ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। চলতি অর্থবছরে নতুন করে আরো ১৯টি নির্মাণ করা হচ্ছে। জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যায়ক্রমে জেলায় আরো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে যেতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ গৃহপালিত পশু-পাখি রাখার সুব্যবস্থা থাকে এখন থেকে এমন ডিজাইনে অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ