Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জেলার গন্ডি পেরিয়ে ঢাকাসহ যাচ্ছে অন্যান্য জেলায়

বাম্পার ফলনে সাতক্ষীরার কুল চাষিদের মুখে ফুটছে হাসি

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : সাতক্ষীরা জেলার নামকরণে গাণিতিকভাবে যে সাতটি জিনিস প্রসিদ্ধ তার মধ্যে কুল একটি অন্যতম ফল। জেলার প্রসিদ্ধ সাতটি জিনিস হলো, কুল, ওল, আম, ঘোল, সন্দেশ, মাদুর ও গাছের কলম। তাই, সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতের কুল। চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হচ্ছে এই কুল। চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে কুল চাষ করা হয়েছে। এবার উৎপাদনও বাম্পার হয়েছে বলে জানান চাষীরা। স্বল্পসময়ের অধিক লাভজনক এ ফসলটি চাষে কৃষকদের মধ্যে খুবই আগ্রহ বাড়িয়েছে বলে জানায়, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সাতক্ষীরার বাউ, নারকেল, গাব, বিলেতি ও আপেলকুলসহ বিভিন্ন প্রকার কুলের সুনাম রয়েছে দেশে-বিদেশে। বর্তমানে হাইব্রিড এসব কুল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ শুরু হওয়ায় ও লাভজনক বেশি হওয়ায় জেলায় এর চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্বল্পখরচ ও ঝুঁকি কম থাকায় জেলার বেকার যুবসমাজ ও চাষিদের একটি বিরাট অংশ এ কুল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কুল চাষ করে এ জেলার অনেকেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে দূর করেছে বেকারত্ব, সৃষ্টি করেছে নতুন কর্মসংস্থানের। জানা গেছে, গত বছর এ জেলায় সর্বমোট ৪৯০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৪৩০ মে.টন বিভিন্ন প্রজাতের কুল উৎপাদন হয়েছে। কুল উৎপাদন হয়েছিল হেক্টরপ্রতি ৭ টন। চলতি বছরে এ জেলায় ৫শ’ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। এবারে হেক্টরপ্রতি সাড়ে সাত থেকে আট টন কুল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর। কুল চাষ করে এ জেলার বহু বেকার যুবক ও চাষিরা তাদের বেকারত্ব দূর করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক পরিবার। কুল মৌসুমে এখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক মণ কুল ঢাকা বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। অত্যন্ত সু’স্বাদু এ মৌসুমী ফলটি দেশে-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। জেলায় সাধারণত বাউ, নারকেল,গাব, বিলেতি ও আপেল কুলের চাষ বেশি হয়। কুল চাষ করেই জেলার সহস্রাধিক পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। ব্যক্তিগত উদ্যোগেই চাষিরা তাদের জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কুল চাষ করে থাকেন। তবে সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় কুল চাষিরা তাদের উৎপাদিত কুলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। সরকারিভাবে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিস থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় চাষিরা কুল চাষে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়ছে বলে কুলচাষিরা অভিযোগ করেছেন। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উজ্জ¦ল সম্ভাবনাময়ী মৌসুমী এ ফলের চাষ করে একদিকে যেমন এলাকায় নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতে পারে তেমনি দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কুলচাষি আইয়ুব হোসেন জানান, পরীক্ষামূলভাবে প্রথমে এক বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেন। পরিক্ষামূলক হলেও প্রথম বছরে সব খরচ বাদ দিয়ে তার ৬৫ হাজার টাকা লাভ হয়। কৃষক আইয়ুব হোসেন আরো জানান, ফসলটি লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য ফসল উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে ৫ বিঘার একটি বাগান করে তাতে বাউকুল চাষ করছেন গত তিন বছর যাবত। এতে তার প্রতি মৌসুমে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লাভ হয়। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, সাতক্ষীরার মাটি কুল চাষের জন্য উপযোগী। স্বল্পখরচে অধিক লাভজনক এ ফসলটি চাষে এ জেলার কৃষকদের মধ্যে খুবই আগ্রহ বাড়ছে। তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৫শ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতের কুল উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও তালা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কুল চাষ হয়েছে। আগামী বছর কুল চাষ এ জেলায় আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আরো জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ