Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দড়িয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জীর্ণ ভবনে পাটিতে বসিয়ে পাঠদান

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের দড়িয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই পাটিতে বসে চলছে পাঠদান। পর্যাপ্ত বসার জায়গা না থাকার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। দড়িয়াকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ৩টি ভবন রয়েছে। ১৯৬৫ সালে স্থাপিত হওয়া ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ার পর ২০০৭ সালে এটি পুননির্মাণ করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবন পুননির্মাণের ২০ বছর যেতে না যেতেই ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনে ফাটল ধরার পরও কোনো উপায় না পেয়ে শিক্ষকদের এ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণী কক্ষেই ক্লাস করতে হচ্ছে। এ বিদ্যালয়টিতে ৩৩২ জন শিক্ষার্থী ও ৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ৯০ ভাগই হতদরিদ্র। অভিভাবাবকদের মধ্যে প্রত্যেকেই কোনো না কোনো শিল্প-কারখানায় কাজ করে। তাই দারিদ্র্যতার তাড়নায় অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও এখানে পড়াতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের দুটি ভবনে সর্বমোট ৬টি কক্ষ রয়েছে যার মধ্যে দুটি ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর বাকি ৪টি কক্ষে দেয়ালে বিভিন্ন অংশে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, এ বিদ্যালয়টিতে কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ময়লা পানি পান করতে হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এব্যাপারে প্রশাসন ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের জানানোর পর তারাও কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করেননি। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের গুরুত্বপুর্ণ খুঁটিতে ফাটল ও ছাদের ভিমে ও মূল অংশে ফাটল দেখা দেয়ার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বাধ্য হয়েই ভবনের মধ্যেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এরকমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাস চলতে থাকলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে বাউন্ডারি না থাকার কারণে শ্রেণীকক্ষের ফ্যান, জানালাও চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। ফ্যান না থাকার কারণে গ্রীষ্মকালে শিক্ষার্থীদেরকে গরমের মধ্যে ক্লাস করতে হয়। হালিমা নামে এক অভিভাবক জানান, তিনি স্বল্প বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অভাবের সংসারে ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়ানোর মতো সামর্থ্য তার নেই। তার ছেলে সয়াম চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। প্রায় সময়ই শ্রেণী কক্ষে জায়গা না থাকার কারণে সিয়ামসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাস করতে হয়। এছাড়া বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের ২০ বছর হতে না হতেই বিদ্যালয়ের ভবনের দুরাবস্থা। ওই অভিভাবক আরো জানান, সামর্থ্য না থাকার কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়েই তিনি তার ছেলেকে এখানে পড়াচ্ছেন। তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক নতুবা যেকোনো সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মেহেরুন্নেসা জানান, সবগুলো ভবনেই ফাটল ধরার কারণে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে হয়। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে কোনো মানসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের আশপাশের মানুষের বাড়িতে গিয়ে পায়খানা ও প্র¯্রাব করতে হয়। এছাড়া স্কুলের নির্দিষ্ট কোনো বাউন্ডারি না থাকার কারণে বাহিরের লোকজন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারে। এতে করে অপহরণকারীরা যেকোনো শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারবে। তিনি আরো জানান, উপর মহলের কর্মকর্তারা বিদ্যালয়টি প্রত্যেক মাসে দু’বার করে পরিদর্শন করে যান। তাদের এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীম বলেন, ভবনগুলো ফাটল ধরায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপর মহলের কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার জানানো হলেও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। অথচ উপর মহলের কর্মকর্তারা বিদ্যালয়টিতে প্রতি মাসে দু’বার করে পরিদর্শনে আছেন। আব্দুল আলীম কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরো বলেন, এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানি ও মানসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসে থাকতে হচ্ছে। যদি দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় যেকোনো সময় মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি বিউটি আক্তার বলেন, এব্যাপারটি কয়েকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানোর পরও এব্যাপারে তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এব্যাপারে শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, শিগগিরই বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধান করতে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ