Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ভুট্টা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে সাতক্ষীরার কৃষক

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে : সাতক্ষীরা অঞ্চলে ভুট্টা চাষ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ফলে গত দুই বছরের ব্যবধানে জেলায় ফসলটির আবাদ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। লবণাক্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন জেলার কৃষক। জেলার কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন ভুট্টা চাষের। তাছাড়া জেলায় বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় এমনটি বেশি সৃষ্টি হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, গত ২০১৪-১৫ সালে জেলার সাতটি উপজেলাতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছিল ২২০ হেক্টর জমিতে। এর পরের বছর ২০১৫-১৬ সালে জেলায় ভুট্টা চাষ করা হয় ১৬৫ হেক্টর জমিতে। কিন্ত চলতি ২০১৬-১৭ মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে ভুট্টা চাষ হয়েছে ১১৫ হেক্টর জমিতে। ফলে গত দুই বছরের ব্যবধানে জেলায় ভুট্টার আবাদ প্রায় ৫০ শতাংশ। চলতি মৌসুমে ১১৫ হেক্টর আবাদের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৩১ হেক্টর, কলারোয়ায় ২৫ হেক্টর, তালায ২৩ হেক্টর, দেবহাটায় ৮ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১৯ হেক্টর, আশাশুনিতে ৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলাতে ৪ হেক্টর। বাংলাদেশ কৃষি গবেশনা ইন্সিটিটিউট বিনেরপোতাস্থ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় ভুট্টার আবাদ কমে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারণে হচ্ছে লবণাক্ততা বৃদ্দির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন। এর নেতিবাচক প্রভাবে ফসলটির আবাদ কমছে। তাছাড়া উৎপাদিত ভুট্টা সাতক্ষীরায় বিপণিন ব্যবস্থা না থাকা ও কৃষক পর্যায়ে বীজ সংরক্ষণ করতে না পারার কারণেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক। তিনি বলেন, যে সময়ে ভুট্টার আবাদ করবে কৃষক তখন তার আবাদি জমিতে জলবদ্ধতা থাকে। ফলে জলমগ্ন অবস্থায় জমিতে কৃষকরা বীজবপন করতে পারে না। যে কারণে বাধ্য হয়ে চলে যায় বোরো চাষে। অথচ ভুট্টা চাষে খরচ যেমন কম আবার বেশি উৎপাদন হয়। উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা চাষ করে ব্যাপক লাভবান হতে পারে। অন্যদিকে লবনসহিঞ্চু বারি-৯ এবং হাইব্রিড-১২ জাতের ভুট্টা বীজ উদ্ভাবন করা হয়েছে কৃষি গবেষণা থেকে। উপক‚লীয় জেলাতে এসব জাতের ভুট্টা চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে। তবে সাতক্ষীরা অঞ্চলের উৎপাদিত ভুট্টার বিপণিন ব্যবস্থা তেমন না থাকায় কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছে ফসলটি চাষ করতে। তাছাড়া সাতক্ষীরা অঞ্চলে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ হওয়ার কারণে কৃষকরা বীজ সংরক্ষণ করতে পারে না। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মিয়া ধুলিহর গ্রামের কৃষক মোমিন শেখ জানান, পরপর দুই বছর ভালো ফলন না পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষ করেননি। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে গত দুই বছর ভুট্টা চাষ করে লোকসান করেছেন। জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ভুট্টার ভালো ফলন পাননি। তিনি বলেন, গাছ বেড়ে উঠলেও থোড় বা মোচা চিকন হয়ে যায় এবং দানাও ছোট দেখা দেয়। ফলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায়নি। তাছাড়া যতসামান্য ফলন হলেও তা আবার বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয়েছে তার। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে না পেরে এক মৎস্য খামারির কাছে কম মূল্যে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি। যে কারণে এবার ভুট্টা চাষ করেননি বলে জানান। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পাঁচনল গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন। যা গত বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম পরিমাণ। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, গত বছর ৫ বিঘা পরিমাণ জমিতে চাষ করে সাড়ে ৫ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন করেন। কিন্ত উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রি করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তার। অবশেষে সাতক্ষীরাতে বিক্রি করতে না পেরে যশোরে নিয়ে ওই ভুট্টা বিক্রি করেন। এতে তার পরিবহন খরচ গুনতে হয়েছে অনেক টাকা। তাই এবার কম পরিমাণ জমিতে ফসলটি চাষ করেছেন। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় প্যাসিফিক, ডন, কোহিনুর ও বারি-৯ জাতের ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা অঞ্চলে ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ার পরও বিপণিন ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা তেমন আগ্রহ দেখায় না ফসলটি উৎপাদনে। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বছরে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এনজিও‘রা তাদের প্রকল্পের অধিনে কিছু কিছু কৃষকদের দিয়ে ভুট্টার আবাদ করাতো। কিন্ত গেল ২ বছর বা চলতি মৌসুমে এনজিওদের সেই প্রকল্প দেখা যাচ্ছে না। ফলে ভুট্টার আবাদ কমে যাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলায়। তাছাড়া জলাবদ্ধতার কারণেও ভুট্টার আবাদ কমছে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ