রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় অন্তত ২৫টি গ্রামে প্রায় ৫ হাজার শীতল পাটি শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারের চরম দুর্দিন চলছে। গ্রীষ্মকালে এই শীতল পাটির চাহিদা থাকে সর্বাধিক। তবুও শীত, বর্ষা, শরতে ও নিরন্তর ক্ষুধাকে চেপে রেখে এ পরিবারগুলোকে বাঁচতে হচ্ছে। এই সময় এই ক্ষুধা ও অভাবের সুযোগ নিয়ে পাটি শিল্পের সাথে জড়িত মহাজন কম দামে পাটি কিনে মজুদ করে মৌসুমে বিক্রয় করে আর্থিক ফায়দা নেয় কিন্তু পাটি শিল্পের শ্রমিকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারেই দিন কাটাতে হয়। ক্রেতাদের কাছে চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিত মাঝারি শ্রেণীর একটি পাটি ১ হাজার টাকায় বিক্রয় হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় পাইকারদের কাছ থেকে পাটি বুননকারীদের বিক্রয় করতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মীরসরাই এর এই শীতল পাটি শিল্পের চাহিদা ও কদর ব্যাপক। তবে প্রচার না থাকায় এ অঞ্চলের পাটি শিল্পের বাজার নড়ে বসতে পারছে না। উপজেলার মিঠাছরা হাটে সপ্তাহে দুদিন এর হাটবার রবি ও বৃহস্পতিবার এখানে পাটির হাট বসে ভোর ৪টা থেকে। মুয়াজ্বিনের ফজর আযানের সময় জমজমাট পাটির হাট। আবার ভোরের আলো ফুটে উঠার পর থেকে হাটে কমতে থাকে ক্রেতা-বিক্রেতা। ৭টার মধ্যেই সব শেষ। ভোরের হাটে পাটি উঠা এখানকার আদিকাল এর ঐতিহ্য। কিন্তু তা দিনের আলোয় কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয় না কেন তা নিতান্তই রহস্যজনক। দূর দূরান্ত থেকে অন্তঃত ১৫- ২০ কিলোমিটার দূর থেকেই পাটি বিক্রেতা নারী পুরুষরা ভোর ৩টায় রওনা হয় বাড়ী থেকে। ততোক্ষনে দূরের পাইকাররা এসে পৌছায় ও না। স্থানীয় কিছু পাইকার সিন্ডিকেট এর কারসাজি কিনা এটি তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন অনেকে। ভোরের মৃদূআলোতেই এই হাট না সেরে কিছুক্ষন সময় নিয়ে বিক্রেতারা ও কিছু দাম হয়তো বাড়তি পাবার সুযোগ ও হতে পারে। কিছুটা বিলম্ব হয়ে গেলে ও সেদিন ভোরে এই পাটির হাটের রহস্য জানতে গেলে অনেক ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে পাওয়া গেল পেয়ারা বেগম নামের ৫৮ বছরের এক বৃদ্ধ মহিলা। ৩টি পাটি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন বাজারে । কতো বিক্রি করলেন জানতে চাইলে পেয়ারা বেগম বললেন ২ টা ৬০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। আর একটার দাম ৬০০ টাকা দিতে চাইছে না। তাই দেরী হচ্ছে। কতো দিন লাগলো আর খরচ বাদে আয় কতো হলো জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেয়ারা বেগম বললেন এক পাটিতে এক পন করে পাটি পাতা লাগে। ১ পন পাতা ২০০টাকা দিয়ে কিনে পাতা বেত করা ও রং করা মিলিয়ে ৩টি পাটি বননে সময় লেগেছে ১ সপ্তাহ। আবার খেটেছে মেয়ে নাতিনরা সহ ৪-৫ জন। আবার বাজারে আসা যাওয়ায় ও খরচ আছে ১০০ টাকা। সব মিলিয়ে খাটুনি আর খরচ মিলিয়ে কোন ভাবে জীবন যুদ্ধ। তাও ডাল ভাত জোগাড় করতেই মুশকিল হয়। কিন্তু অভাবের সংসারে কি করবে আর। এভাবেই চলছে উপজেলার মিঠানালা, মঘাদিয়া, মায়ানী, দুর্গাপুর, কাটাছরা, তেমুহানি, হিঙ্গুলী, খৈয়াছরা, আমবাড়িয়া, তালবাড়িয়া সহ অন্তঃত ২৫টি গ্রামে প্রায় ৫ হাজার পাটি বুননকারী জীবন চক্র। মিঠাছরা হাটবার ভোরবেলায় হাটে গিয়ে বিক্রি ৫০০- ৬০০ টাকা পাটি হিসেবে আয় তাদের। এর চেয়ে আর লাভের মুখ কি দেখবে না তারা ? অথচ মধ্যত্বভোগি পাইকাররা বহন করে নিয়েই লাভ করছে প্রতি পাটিতে কয়েকশত টাকা করে। কোন কোন পাটি বিক্রি করছে দ্বিগুনও। এমন লাভের মুখ দেখছে না হাঁড় ভাঙ্গা খাটুনি করা সেই পাটি শিল্পীরা। তবে হাটের জনৈক পাটি পাইকার শাখাওয়াত বেপারী বলেন আমাদের ও প্রতি পাটিতে যাতায়াত ও আড়ৎ খরচ গিয়ে প্রতি পাটিতে ১০০ টাকাই টিকে। তবে আগত পাইকারদের অধিকাংশই স্থানীয় দেখা গেছে। জনৈক বিক্রেতা বললেন দূরের পাইকারদের এরাই সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে পাটি সরবরাহ করে। কিন্তু ওইসব পাইকাররা হাটে আসলে হয়তো দাম আরো বেশী পাওয়া যেত। সপ্তাহে দুই দিন মিঠাছড়া বাজারে ২০ লক্ষাধিক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এরপর ও কয়েকজন আগের দিন বারইয়াহাট আবাসিক হোটলে এসে অবস্থান নিয়ে অনেক কষ্টে আসেন এখানে। এতো ভোওে না হয়ে হাট একটু পরে হলে পাইকারদের আসায় অনেক সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এই বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসার বুলবুল আহমেদ বলেন এইসব পাটি বুনন কারী শিল্পীরা আমাদের মনিটরিং এর আওতার বাহিরে । তবে এদের সুযোগ সুবিধার বিষয়ে ও আমরা বিশেষ উইং করার কথা ভাবছি। আর এতে অন্তঃত পাকি কৃষক ও বুননকারীদের মৌলিক অধিকার বিষয়েই আমরা বিশেষ সহযোগিতার আওতায় আনা সম্ভব উঠবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।