Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগে কেন হলো না?

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইমরান মাহমুদ : অপেক্ষার অবসান হলো। ১৭ বছর প্রতীক্ষার পর ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলে এলো বাংলাদেশ। আরেকটু পরিস্কার করে বললে সময়টা ১৬ বছর ২ মাস ২৯ দিন। যে ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক, তাদের বিপক্ষেই তাদেরই মাটিতে টেস্ট খেলতে এত্ত লম্বা সময় নিয়ে অপেক্ষা নিয়ে আক্ষেপের শেষ ছিলো না এতদিন। গত ১৬ বছরে ভারতের বিপক্ষে ৫টি সিরিজে ৮টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এর সবকটিই বাংলাদেশের মাটিতে! আইসিসি’র প্রথম ফিউচার ট্যুর প্রজেক্টে (এফটিপি) (২০০১-০৬) ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। ২০০৬ সালে পূর্ব নির্ধারিত সেই সিরিজটি দিওয়ালী উৎসবের অজুহাতে বাতিল করে বিসিসিআই। ভারত ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে সর্বশেষ ২টি তে ভারতের মাটিতে খেলার আগ্রহের পরিবর্তে বিসিসিআই’র প্রস্তাবে বাংলাদেশ বরং দিয়েছে ভারতকে আতিথ্য। বাংলাদেশ দলকে আতিথ্য দিয়ে আর্থিকভাবে লাভের সম্ভাবনা তেমন নেই বলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিতে এতোদিন কম বাহানা করেনি বিসিসিআই। চলমান ৯ বছর মেয়াদী এফটিপিতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ বরাদ্দ পেয়েছে মাত্র ২ টেস্ট, ৬ ওয়ানডে। ২০১৪ সালে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পর ২০১৫ সালে ৩ ওয়ানডে, ১ টেস্ট ম্যাচের সিরিজ। ওই সিরিজে যে একটি টেস্ট অবশিষ্ট ছিল, সেই টেস্টটি গড়াচ্ছে অবশেষে, ৩ বছর পর।

গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারত সফর নির্ধারিত থেকেও বিসিসিআই দেয়নি বিসিবিকে গ্রীন সিগন্যাল। সফরটি ৬ মাস পিছিয়ে এ বছরের ফেব্রæয়াফরতে তা আয়োজনের ঘোষণা বিসিসিআই’র সর্বশেষ সভাপতি অনুরাগ ঠাকুর দিয়েও অনিশ্চয়তার আবর্তে পড়েছিল একমাত্র টেস্টটি! সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বিসিসিআই’র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অনুমতি ছাড়া অর্থ উত্তোলন করা যাবে না বলে হায়দারাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন টেস্ট আয়োজনে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান চেয়ে বিসিসিআই’কে চিঠি দিয়ে পড়ে বিপত্তিতে। পরবর্তীতে এই টেস্ট আয়োজনে হায়দারাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আগ্রহ প্রকাশ করলে ৮ ফেব্রæয়ারির পরিবর্তে ৯ ফেব্রæয়ারি টেস্ট আয়োজন চূড়ান্ত হয়।
অবশেষে ভারতের মাটিতে শেষ হলো ‘ঐতিহাসিক’ সেই টেস্ট। স্পন্সর পাওয়া যাবে না বা মাঠে দর্শকদের সায়া মিলবে না - এই সব যুক্তিতে তা এখন মুলতুবি হয়ে গেছে। কিন্তু হায়দারাবাদ টেস্ট কি সেই সব আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করতে পারল? বাণিজ্যিক ও ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণে কতটা সফল হল এই টেস্ট?
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেমন উন্নতি করেছে তাতে ভারতীয় দর্শকরাও মুগ্ধ- এবং তাদের বলতে কোনও দ্বিধা নেই বাংলাদেশকে আরও অনেক আগেই ভারতে খেলতে আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল। লাঞ্চের ঠিক আগে মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির রহমান যেভাবে খেলছিলেন মুক্তকণ্ঠে তারও প্রশংসা করছিলেন তারা। বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরা আফসোস করতেই পারেন! ইশ, দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিক-সাকিব-সাব্বির-মাহমুদউল্লাহরা যদি নিজেদের ইনিংসটা আরেকটু লম্বা করতে পারতেন! তারপরও হায়দারাবাদ টেস্টে টাইগারদের প্রাপ্তি কম নয়।
রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে দুই ইনিংসেই একশ’ ওভারের বেশি ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। ২০০০ সালের পর ভারতে এসে চতুর্থ ইনিংসে সফরকারী দলের সর্বোচ্চ স্কোরের পরিসংখ্যানে নিউজিল্যান্ডের পরেই বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত আহমেদাবাদ টেস্ট ড্র হওয়ার আগে কিউইদের সংগ্রহ ছিল ১০৭ ওভারে ছয় উইকেটে ২৭২।
প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ৬৮৭ রানের বিশাল স্কোরই মূলত পার্থক্য গড়ে দেয়। ম্যাচ বাঁচাতে অধিনায়ক মুশফিকের ১২৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসটি ছিল চোখে পড়ার মতোই। শেষ রক্ষাটা আর হলো না! ইশান্ত-অশ্বিন-জাদেজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২০৮ রানের জয় পেয়েছে টেস্টের নাম্বার ওয়ান টিম ইন্ডিয়া। ৪৫৯ রানের লক্ষ্যে পঞ্চম ও শেষ দিনের দ্বিতীয় সেশনের শেষদিকে ২৫০ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। ২৫ ওভারের মতো খেলা বাকি ছিল। সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি টানতে ব্যর্থ মুশফিক (২৩)।
আরেকটি কথা না বললেই নয়, ৯ নম্বরে নেমে পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি আবারো ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের প্রমাণ রাখেন। ৭০ বল খেলে মাত্র ৩ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। দুই ইনিংসেই নটআউট টেলএন্ডার রাব্বি। নিউজিল্যান্ড সফরের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৬৩ বলে ২। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব মেলানোর সাথে সাথে এরই মধ্যে আরেকটি ভারত সফরের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। আবার এমনটিও বলছেন কেউ কেউ, আরো আগে কেন হলো না ভারত সফর?

হায়দারাবাদ টেস্টে বাংলাদেশ

ব্যাটিং ইনিংস রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
মুশফিক ২ ১৫০ ১২৭ ৭৫.০০ ৪৯.০১ ১/০
সাকিব ২ ১০৪ ৮২ ৫২.০০ ৬৭.৯৭ ০/১
রিয়াদ ২ ৯২ ৬৪ ৪৬.০০ ৪৪.৬৬ ০/১
মিরাজ ২ ৭৪ ৫১ ৩৭.০০ ৪৪.০৪ ০/১
সৌম্য ২ ৫৭ ৪২ ২৮.৫০ ৫৮.৭৬ ০/০
মুমিনুল ২ ৩৯ ২৭ ১৯.৫০ ৫৮.৭৬ ০/০
সাব্বির ২ ৩৮ ২২ ১৯.০০ ৩৯.৫৮ ০/০
তামীম ২ ২৭ ২৪ ১৩.৫০ ৪২.১৮ ০/০
তাইজুল ২ ১৬ ১০ ৮.০০ ২৫.৮০ ০/০
তাসকিন ২ ৯ ৮ ৪.৫০ ২১.৪২ ০/০
রাব্বি ২ ৩ ৩* - ৩.৭৫ ০/০

বোলিং ইনিংস উইকেট ইনি.সেরা ম্যাচসেরা গড় ইকো.
তাসকিন ২ ৩ ২/৪৩ ৩/১৭০ ৫৬.৬৬ ৫.৩১
তাইজুল ২ ৩ ৩/১৫৬ ৩/১৮৫ ৬১.৬৬ ৩.৪৯
সাকিব ২ ২ ২/৫০ ২/১৫৪ ৭৭.০০ ৪.৬৬
মিরাজ ২ ২ ২/১৬৫ ২/১৯৭ ৯৮.৫০ ৪.২০
*কমপক্ষে একটি উইকেট পাওয়া বোলার বোলার


৪র্থ ইনিংসে বাংলাদেশের দীর্ঘতম ইনিংস (কমপক্ষে ১০০ ওভার)
ওভার প্রতিপক্ষ ভেন্যু স্কোর ফল সাল
১৪২.০ জিম্বাবুয়ে বঙ্গবন্ধু ২৮৫/৫ ড্র’ ২০০৫
১২৬.২ শ্রীলঙ্কা মিরপুর ৪১৩ হার ২০০৮-৯
১২৪.০ ইংল্যান্ড চট্টগ্রাম ৩৩৩ হার ২০১০

ভারতের মাটিতে ৪র্থ ইনিংসে প্রতিপক্ষের সর্বোচ্চ ৫ স্কোর

ওভার দেশ ভেন্যু ফল সাল
১৪৩.১ দ.আফ্রিকা দিল্লি হার ২০১৫
১৩৫.০ নিউজিল্যান্ড মোহালী ড্র’ ১৯৯৯
১৩৪.০ ইংল্যান্ড মুম্বাই ড্র’ ১৯৬৪
১১৭.০ নিউজিল্যান্ড নাগপুর ড্র’ ১৯৭৬
১১৬.২ ইংল্যান্ড কলকাতা হার ১৯৬১
১০৭.০ নিউজিল্যান্ড আহমেদাবাদ ড্র’ ২০০৩
১০৫.১ উইন্ডিজ কলকাতা ড্র’ ১৯৭৮



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন