Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হায়দারাবাদ রঙ্গ

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রথম জয়টি উদযাপন করেছে যে ভেন্যুতে, হায়দারাবাদের সেই লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামটি এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে। ২০০৪ সালে রাজিব গান্ধী স্টেডিয়াম নির্মিত হওয়ার পর থেকেই এই ভেন্যুটি হায়দারাবাদের ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দর্শনের একমাত্র অবলম্বন। যে ভেন্যুতে বাংলাদেশ পেয়েছে প্রথম জয়ের স্বাদ, ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট আতিথ্য পেয়েছে সেই হায়দারাবাদেই! ১৯ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের দু’টি ইতিহাসের সাক্ষী এই হায়দারাবাদ। 

এক সময়ে ভারতের ক্রিকেটে অক্সিজেন সরবরাহ করতো হায়দারাবাদ। ষাট-সত্তর দশকে ভারত টেস্ট দলে প্রতিনিধিত্ব করতো এক সঙ্গে চার-পাঁচজন হায়দাবাবাদি। ভারতের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক সি কে নাইডু মুম্বাইয়ের ক্রিকেটার হয়েও হয়ে গিয়েছিলেন হায়দারাবাদি। মধ্য প্রদেশের জমিদার হয়েও ভারতের আর এক অধিনায়ক মনসুর আলী খান পতৌদির ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বড় অংশ কেটেছে হায়দারাবাদে। আজহার উদ্দিন, ভি ভি এস লক্ষনরা তো ছিলেন খাঁটি হায়দারাবদি। শিবলাল যাদব, নরসিমা রাও, অজিত ওয়াদেকাররা বাংলাদেশের ক্রিকেটেও রেখেছেন অবদান। অথচ, সেই হায়দারাবাদে এখন ক্রিকেট ক্রেজ নেই আগের মতো।
২০০৩ সালে উইম্বলডনের গার্লস ডাবলসের শিরোপা জিতে হৈ চৈ ফেলে দেয়া ড্রিম গার্ল সানিয়া মীর্জার সাফল্যে মেয়েদের টেনিসে বিপ্লব হয়েছে হায়দারাবাদে। সেই টেনিস ক্রেজ ছাড়িয়ে গেছে ক্রিকেটকে। সেকান্দারাবাদের জিমখানায় হায়দারাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের একাডেমি মাঠে ক্ষুদে ক্রিকেটারদের যতোটা না টানছে, নুতন প্রজন্মের স্পোর্টস ম্যানদের তার চেয়ে বেশি টানছে টেনিস। হায়দারাবাদের মেয়ে সানিয়া তার উত্তরসূরীর খোঁজে নিজে স্থাপন করেছেন টেনিস একাডেমি! ৮টি কোর্টে চলছে আগ্রহী ক্ষুদে টেনিস খেলোয়াড়দের অনুশীলন। বাংলাদেশ-ভারতের টেস্টকে সামনে রেখে সানিয়া মীর্জার হায়দারাবাদ আগমন ফেলেছে ব্যাপক সাড়া, নিজের একাডেমিতে তার হাজির হায়দাবাদের সকল দৈনিকের শিরোনাম হয়েছে।
হায়দারাবাদে সকল উত্তাপ ছাড়িয়ে গেছে ব্যাডমিন্টনে। ২০০১ সালে অল ইংল্যান্ড ওপেনে গোপীচাঁদ নামের এক হায়দারাবাদি শাটলারের শিরোপা জয়ের ক্রেজ গোটা ভারতে গেছে ছড়িয়ে। ২০০৮ সালে সরকারের কাছ থেকে জমি পেয়ে সেই জমিতে বিশাল ব্যাডমিন্টন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন গোপীচাঁদ। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত এই একাডেমিই এখন ভারতের ব্যাডমিন্টকে দেখাচ্ছে স্বপ্ন। সাবেক ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান সাইনা নেহওয়াল, ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে রৌপ্যজয়ী পি ভি সান্ধু এই একাডেমিরই আবিস্কার। বর্তমানে ব্যাডমিন্টনে ছেলে এবং মেয়েদের বিশ্ব র‌্যাকিংয়ে সেরা ৩০ জনে ৯ জন ভারতীয়’র সবাই গোপীচাঁদ একাডেমিরই আবিস্কার।
কালে-ভদ্রে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় বলে এখানে দর্শকের চাহিদা একটু বেশিই হওয়ার কথা। রাজিব গান্ধি স্টেডিয়ামে বড় পার্কিং পয়েন্ট, স্টেডিয়ামের বাইরে সাইকেলের উপর স্ট্রিট ফুড সাজিয়ে রাখার পেছনে কারণ এটাই। কিন্তু হায়দারাবাদে একটু অবাকই হতে হলো। হায়দারাবাদ টেস্ট আয়োজনে বিসিসিআই যখন সন্দিহান, তখন হায়দারাবাদ অ্যাসোসিয়েশন দিয়েছে ভরসা। যেনো অনেকটা অপ্রস্তুতই মনে হয়েছে হায়দারাবাদকে। শেষ মুহূর্তে এসে প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। প্রস্তুতির গলদটা তাই ছিল পরিস্কার।
প্রতিদিন ৩ বার মাইক্রোফোনে দর্শক হাজিরার সংখ্যা ঘোষিত হয়েছে। ৯ হাজার থেকে শুরু, ২৩ হাজারে স্পর্শ করেছে সংখ্যাটি ! কে বলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিপনন মূল্য নেই ভারতে। যে অজুহাতে বাংলাদেশ দলকে ১৬ বছর ২ মাস করা হয়েছে উপেক্ষা, ভারতে সেই দলটির খেলা দেখতে টেস্ট ক্রিকেটে দর্শক সংখ্যা এমন শুনে মাথায় হাত উঠবে যে কারো। বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম ফ্যানক্লাব বেঙ্গল টাইগার্সের একদল সদস্য নিজেদের গাঁটের টাকায় হায়দাবাদে এসে বাংলাদেশ দলকে দিয়েছে উৎসাহ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আর এক ফ্যানক্লাব বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সড়ক এবং রেলপথ হয়ে এসেছেন হায়দারাবাদে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ক্রেজের আদর্শ সমর্থক হয়ে যাওয়া শোয়েব আলী প্রতিদিনই ছিলেন স্থানীয় দৈনিকসমুহের ফ্রেমে বন্দি। ভারত ক্রিকেট দলের ফ্যান সুধীরের সঙ্গে তার ছবি দু’শের ক্রিকেট ক্রেজের পাশাপাশি ক্রিকেট ভ্রাতৃত্বও করেছে প্রকাশ। একসঙ্গে দুই সমর্থক ক্লাব এক কাতারে, এক ফ্রেমে। আরিফ, তপু, অনিমেষ, বাবু’র সঙ্গে তানভীর, আলমগীর, নাসির, বুলুÑএকই হোটেলে আবাসন, বিরল ছবিই বটে।
হায়দারাবাদের নাম শুনলে হায়দারাবাদি বিরিয়ানির প্রসঙ্গ আসবে সবার আগে। অথচ, ঢাকায় বসে যে বিরিয়ানির নাম শুনলে জিবে পানি আসে, সেই হায়দারাবাদি বিরিয়ানী কিন্তু দিল্লিকা লাড্ডুর মতোই অবস্থা। এখানকার সব বিরিয়ানীকেই হায়দারাবাদিরা হায়দাবাদি বিরিয়ানি বলে চালায়। শহরের একমাত্র রেস্টুরেন্ট প্যারাডাইস ছাড়া অন্য কোথাও হায়দারাবাদি বিরিয়ানি রসনা তৃপ্ত করবে না কারো। জানেন, ভারতের দক্ষিণের প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিতি হায়দারাবাদের মিষ্টির কদর খুব বেশি, মিঠাওয়ালা নামের এক মিষ্টির দোকানে রকমারি মিষ্টির কেজি ১২০০ ভারতীয় রূপী গেছে ছাড়িয়ে! রাতে শহরের সব সড়কগুলোতে বসে আইসক্রিমের ভ্রম্যামাণ দোকান। রাতের খাবারের পর আইসক্রিম তাদের রসনার একটা অংশ। হায়দারাবাদ শহরটিতে ছেলে- মেয়ে, বুড়ো-বুড়ি সাবার প্রধান বাহন মোটরসাইকেল, স্ক্রুটি। মুখে নেকাব লাগিয়ে শা শা করে ছুটে চলছে মেয়েরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন