Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রায়গঞ্জে বিলুপ্তির পথে ঢেঁকিশিল্প

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : কালের আবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঢেঁকিশিল্প। এগুলো আর আগের মতো গ্রামের মধ্যে চোখে পড়ে না। ফজরের আযানের পর রাতের স্তব্ধতা ভেঙে ঢেঁকির শব্দ আর শোনা যায় না। চোখে পড়ে না বিয়ে-শাদির উৎসবে ঢেঁকি ছাটা চালের ক্ষির পায়েস। অথচ এমন একদিন ছিল যখন গ্রাম ছাড়া ঢেঁকি বা ঢেঁকি ছাড়া গ্রাম চিন্তা করা যেত না। কিন্তু আজ তা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থেকে মুছে যাচ্ছে। এই গ্রাম-বাংলায় ঢেঁকি নিয়ে কবি সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন কবিতা, গল্প, বাউল গান। আগে গ্রামের প্রায় বাড়িতেই ঢেঁকিতে ধান ভানা হতো। অনেকের জীবিকা অর্জনের মাধ্যমও ছিল ঢেঁকি। যুগের আবর্তনে আজ আর তা দেখা যায় না। অনেকেই এ পেশায় জড়িত ছিলেন। তারা এ পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এই পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের বলা হয় “ভারালী”। এরা সবাই বাধ্য হয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। এখন কেউ কাঁথা সেলাই, কেউবা দর্জির কাজ করেন। আর কেউবা ভিক্ষাবৃত্তি ও ঝিয়ের কাজ করছেন আবার করছেন হাঁস-মুরগি পালন। গ্রামের লোকেরা এখন আর আগের মতো ঢেঁকিতে ধান ছাটাই করেন না। প্রায় গ্রামে মিনি রাইচ মিল গড়ে উঠেছে। গ্রাম অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখেছে। তাই বড়দের এখন আর ঢেঁকিতে পার দিতে দেয় না। তাছাড়া মেয়েরা শ্বশুর বাড়িতে এসে ঢেঁকিতে ধান বানতে চান না। সেজন্য গ্রামে এখন ঢেঁকি দেখা যায় না। মানুষ শিক্ষিত হয়েছেন, রুচি গেছে বদলে। ফলে ঢেঁকির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির পথে। আগে তালাকপ্রাপ্তা, বিধবা ও গরিব মানুষের জীবিকা অর্জনের একমাত্র সম্বল ছিল ঢেঁকি। হয়তো এমন একদিন আসবে যখন ঢেঁকি আর কোথাও দেখা যাবে না। ঢেঁকি দেখার জন্য হয়তো জাদুঘরে যেতে হবে। সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আবির্ভাব হয়েছিল আবার গতিময় সভ্যতার সারাপথে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষই ঢেঁকি বিলুপ্তি করে দিয়েছে। ঢেঁকি কাঠের তৈরি। কুল, বাবলা, জামগাছ ইত্যাতি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাত দৈর্ঘ্য। আর পৌনে ১ হাত চওড়া। মাথার দিকে একটু পুরু এবং অগ্রভাগে সরু। এর মাথায় এক হাত কাঠের ওচা বা দস্তা থাকে। এর মাথায় লাগানো থাকে লোহার গুলা। গুলার মুখস্থানে পড়ে সে স্থানকে গড় বলে। ধান বানতে ন্যূনতম ২ জন লোকের প্রয়োজন পড়ে। একজন পাড় দেয় আর অন্যজন ঢেঁকিতে ধান দেয় গড়ের ভেতর। বর্তমান প্রজন্ম ঢেঁকির নাম শুনেছে কিন্তু দেখেনি। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম পর্যন্ত গান রচনা করেছেন। পায়ের পরশে পেয়েছে কাঠের ঢেঁকির প্রাণ। তাছাড়া ঢেঁকি নিয়ে যে প্রবাদ আছে তা আমরা অহরহ ব্যবহার করি। যেমন অনুরোধে ঢেঁকি গেলা, আমড়া কাঠের ঢেঁকি ইত্যাদি। আর অপদার্থের ক্ষেত্রেও ব্যবহার এই ঢেঁকি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ