Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বগুড়া থেকে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে বাসদের রোড মার্চ শুরু

বগুড়া অফিস | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৩:০২ পিএম

বগুড়া অফিস : তিস্তা সহ ৫৪ টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বাসদ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের উদ্যোগে দুইদিনব্যাপী রোড মার্চ বগুড়া থেকে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে রওয়ানা হয়েছে ।

বুধবার বেলা ১১ টায় বগুড়ার সাতমাথায় বাসদ বগুড়া জেলা শাখার আহ্বায়ক অ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক পথ সভার পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে রোড মার্চের উদ্বোধন করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান কর্তৃক উদ্বোধনের পরপরই রোড মার্চ এর যাত্রা শুরু হয় ।

রোড মার্চের উদ্বোধন কালে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, “নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ মরুকরণের হুমকির মুখে। উজানে একতরফা পানি সরিয়ে নেয়ার ভারতীয় আগ্রাসী তৎপরতা ও দেশের ভিতরে সরকারের নতজানু, ভ্রান্ত নীতি ও দখল-দূষণে ১ হাজার ২শ নদীর সংখ্যা কমে ২শ’৩০ এ নেমে এসেছে এবং বড় বড় নদনদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তি¯তায় এবারে শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই পানি প্রবাহ আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। চলতি বছর ২০ জানুয়ারি তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল ইতিহাসে সর্বনিম্ন মাত্র ৪শ’ কিউসেক।

তিনি আরও বলেন, “বিগত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। তিস্তা ব্যারেজের বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে যে সেচ সুবিধা প্রদান করা হত তা কমতে কমতে ইতিমধ্যে বন্ধ হওয়ার পথে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবার কারণে বিকল্প সেচ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “শুধু তিস্তা নয় ভারত থেকে আগত ৫৪টি নদীতে ভারত এক তরফা বাঁধ দিয়ে সকল প্রকার আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে পানি প্রত্যাহার করছে। ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার কথা সকলের জানা আছে। সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীর উজানে বরাক নদীর টিপাই মুখে বাঁধ দিয়ে ভারত জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে কার্যত সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আন্তঃনদী সংযোগের খড়গ মাথায় ঝুলছে। ভারতের এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে এবং ভারতের আগ্রাসী পানি প্রত্যাহার নীতি নদীমাতৃক সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ অনিবার্য ভাবে মরুভূমিতে পরিণত হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ভারতের শাসকগোষ্ঠী তাদের হীন স্বার্থে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে কখনো পানি সমস্যাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। কখনো সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার নামে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। একই ভাবে বর্তমান সরকারসহ অতীতের সকল সরকার নির্লজ্জভাবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের প্রতি নতজানু থেকে কার্যত ভারতের আগ্রাসী পানি নীতিকে সমর্থন যুগিয়েছে। শাসক শ্রেণির একাংশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র এবং আরেকাংশ হিন্দু রাষ্ট্র বলে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়। ভারত একের পর এক নদীর পানি প্রত্যাহার করলেও বাংলাদেশের সরকার কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাসদসহ বিভিন্ন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলসমূহের পক্ষ থেকে বার বার দাবি জানানো সত্যেও ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কেউই কর্ণপাত করছে না। জোট-মহাজোটের ভোটের রাজনীতির কাছে দেশ, জনগণ, নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ কোন কিছুই গুরুত্ব পায় না।”

সমাবেশে বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, “শুধু তিস্তার পানিরই সমস্যা নয়, ফারাক্কার প্রভাবে গোটা উত্তরবঙ্গ মরুভূমি হওয়ার পথে। ভারতের সাথে পদ্মা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ অভিন্ন ৫৪ নদীসহ ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে এবং অভিন্ন নদীর পানি সমন্বিত ও যৌথ ব্যবস্থাপনা-ব্যবহার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং এ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সাথে যৌথ অববাহিকা কর্তৃপক্ষ গঠন করা প্রয়োজন।”

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নওগাঁ জেলা বাসদ সমন্বয়ক কমরেড জয়নাল আবেদিন মুকুল, বাসদ সিরাজগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক কমরেড নব কুমার কর্মকার, বাসদ রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক কমরেড দেবাশীষ রায় প্রমুখ। উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে রোড মার্চটি তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে সাতমাথা থেকে শহর প্রদক্ষিণ করে মাটিরডালি পর্যন্ত মিছিল করে যায়। পথিমধ্যে রোডমার্চ মহাস্থানগড়, মোকামতলা, ফাঁসিতলা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, শঠিবাড়ীতে সমাবেশ করে রংপুরে রাত্রিযাপন করবে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় রংপুর প্রেসক্লাব থেকে মেডিকেল মোড়, পাগলাপীর, তারাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জলঢাকায় তিস্তা ব্যারেজ গিয়ে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এবং সমাপনী সমাবেশ থেকে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ