বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্টাফ রিপোর্টার : সালিহা বিন আলী। প্রথম ইউরোপীয় নারী, যিনি ছেলের জঙ্গিবাদে জড়িত হওয়া নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত সালিহা বেন আলী বেলজিয়ামের নাগরিক। সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেয়ার পর তার ছেলে সাবরির মৃত্যুর পর তিনি লজ্জায় লুকিয়ে থাকেননি। বরং তিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করেন। তিনি জানান, ২০১৩ সালের এক ভোরবেলা। সবে ঘুম থেকে উঠেছেন। সাড়ে ১৮ বছরের ছেলে সাবরি বেন আলীর ঘরে উঁকি দিয়ে তিনি দেখলেন বিছানা শূন্য। ধক করে উঠল সালিহার বুক। তিনমাস পর অপরিচিত কেউ একজন ফোনে জানাল, আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে সে ‘শহীদ’ হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে উগ্রবাদ নিয়ে সালিহা বেন আলী তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, ভুল সময়ে ভুল মানুষের খপ্পরে পড়েছিল তাঁর সাড়ে ১৮ বছরের ছেলে সাবরি। সোসাইটি অ্যাগেইনস্ট ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজমের (সেভ) প্রতিষ্ঠাতা সালিহা। সালিহা বেন আলীর বয়ানে সাবরি বেন আলীর পরিবর্তন ও আইএসে যোগ দেয়ার গল্পটা ছিল এমন।
সাবরি আর দশটা কিশোর তরুণের মতোই স্বাভাবিক ছিল। নিয়মিত স্কুলে যেত। তার মাথায় সারাক্ষণ নানা প্রশ্ন কিলবিল করত। এমন এমন প্রশ্ন, যার উত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গান ভালোবাসত। খেলাধুলাও করত নিয়মিত। ছবি তুলতে তো খুব ভালোবাসত। এই যে দেখুন ছবিগুলো। আমার সঙ্গে তুলেছে। মিলান যাওয়ার আগে এই ছবিটা তুলেছিল। স্কুলের ছবি এটা, এটা ওর বন্ধু। এই ছবিটায় বলছে, জাস্ট বি কুল ম্যান।
একসময়ে সে স্কুলে বিরতি নিয়ে কাজে যোগ দিতে চাইল। মনে করল, সে কাজ পাবে না, পেলেও যা পাবে তা চাকর-বাকরদের কাজ হবে। ভাবল, সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। সুযোগ পেল না। ফায়ার ফাইটার হতে চাইল, সেখানেও সাবরিকে কেউ নিল না। বলল, লেখাপড়া শেষ করে আসতে।
সাবরির মাথায় তখন নানা চিন্তা, নানা প্রশ্ন। যেমন, আমি তিনটি ভাষা জানি, কিন্তু কাজ পাই না। আচ্ছা আমাদের সব সময় নজরদারিতে রাখা হচ্ছে কেন? পুলিশ এত চেক করে কেন? বাসে ওঠার সময় তো বটেই, বান্ধবীকে নিয়ে সিনেমা থেকে ফেরার পথেও। এত কি দেখে ওরা? কিছু শিক্ষক সা¤প্রদায়িক। আমাকে আমার মতো যারা, তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
সাবরির মাথায় ঢুকেছিল যে সারা বিশ্বের মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আরব দেশগুলোর এ অবস্থা। সরকার কী করছে, সাবরি ও তার পরিবারই বা কী করছে?
সালিহা বেন আলী বলছিলেন, তখন থেকেই সে ধর্ম নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু মসজিদের ইমাম তাকে খুব একটা সহযোগিতা করেননি। তিনি ডাচ বা ফ্রেঞ্চ বলতে পারতেন না। এদিকে সাবরি আরবি বোঝে না। এ সময়ই সে ভুল মানুষের খপ্পরে পড়ে। মসজিদের কাছে, খেলার মাঠের কোনায় দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিছু লোক সাবরিকে ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে শুরু করল। তাঁরা ছিলেন ডাচ ও ফ্রেঞ্চ ভাষাভাষী।
সালিহা বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার যে শর্ত বেলজিয়ামে মানা হয়, তার অপব্যবহার করত ওই লোকগুলো। তারা অন্য ধর্মের নামে বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলত। সাবরিকে সিরিয়ায় যাওয়ার জন্য উস্কানি দিত। তারা সব ঘটনার পেছনেই ষড়যন্ত্র খুঁজত। ঘটনাগুলো কিন্তু পুলিশের সামনেই ঘটছিল। কিন্তু ওই যে অধিকার ক্ষুণœ হবে, তাই পুলিশ কখনো এ ধরনের আলোচনায় হস্তক্ষেপ করেনি। একপর্যায়ে সাবরি আর মসজিদে যেত না। বলত, মসজিদে ঠিকভাবে নামাজ পড়ানো হয় না।
আগস্টে সাবরি চলে যাওয়ার পর ফেসবুকে মাকে উদ্দেশ করে লিখে, ‘আমাকে মাফ করে দাও মা। আমি সিরিয়ায় এসেছি।’ সালিহা উপর্যুপরি অনুরোধ করেন ছেলেকে ফিরে আসতে। ছেলে জানায়, এমন অনুরোধ করলে আর কেউ তা দেখে ফেললে সে আর কথা বলার সুযোগ পাবে না। ছেলের জীবন বাঁচাতে থেমে যান সালিহা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তিন মাস পর একটা ফোন আসে। সাবরির বাবাকে অপরিচিত কেউ জিজ্ঞেস করে, আপনি আবু তোরাবের বাবা বলছেন? উত্তরে তিনি বলেন, না আমি সাবরি বেন আলীর বাবা। অপরপ্রান্ত থেকে অচেনা কণ্ঠস্বর জানায়, এইমাত্র আপনার ছেলে শহীদ হয়েছে।
সালিহার এই অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগাবে বাংলাদেশ? বৈষম্যসহ আরও নানা অনুযোগের ব্যাপারে কিশোর-তরুণদেরই বা কী জবাব দেবেন অভিভাবকেরা। এমন প্রশ্নের জবাবে সালিহা বলেন, আমি স্কুল-কলেজে যাই। যেসব পরিবারের ছেলেদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলি। কখনো ধর্মীয় কোনো বিষয়ে কথা বলি না। আমি তাদের কাছে গিয়ে সন্তানহারা মায়ের কষ্টের কথা বলি। মা ও সন্তানের যে সম্পর্ক, তা এতই নিখাদ যে সেখানে আর সবকিছু গৌণ হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।