Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বহুল আলোচিত ‘নটিক্যাল আলিয়া’ চট্টগ্রাম বন্দরে

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মজলুম রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার ত্রাণ সাহায্য
চট্টগ্রাম ব্যুরো : মিয়ানমারের সেনা ও মগদস্যুদের বর্বরতম নির্যাতনে বাংলাদেশ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণ সাহায্য নিয়ে মালয়েশিয়ার জাহাজ ‘নটিক্যাল আলিয়া’ এখন চট্টগ্রাম বন্দরে। গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যার পর জাহাজটি বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছে।
আজ (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিকতা শেষে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী খালাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এসব ত্রাণসামগ্রী সড়কপথে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য পাঠানো হবে। পরে সেগুলো রেড ক্রিসেন্ট ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
গত বছরের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের আরাকানে মুসলমানদের উপর সে দেশের সেনা ও মগদস্যুদের বর্বরতম নির্যাতন শুরু হয়। মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় হানা দিয়ে সেনা ও বৌদ্ধ দস্যুরা নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। নারী ও শিশুদের পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। গুলি করে হত্যা করা হয় যুবকদের। অগণিত নারীকে ধর্ষণ করে সেনা ও মগদস্যুরা। জীবন বাঁচাতে অন্তত ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
মিয়ানমারে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ উঠে। মালয়েশিয়া সরকার মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে। তার অংশ হিসেবে ত্রাণ বোঝাই নটিক্যাল আলিয়া চট্টগ্রামে এলো। জাহাজটি মিয়ানমারের একটি বন্দরে ভেড়ার কথা থাকলেও মিয়ানমার সরকার জাহাজটিকে সেদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। এমনকি এ জাহাজ আগমনের খবরে সেখানে বিক্ষোভ করে বৌদ্ধরা। অবশেষে জাহাজটির গতি পরিবর্তন করে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত হয়।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে জাহাজটি কক্সবাজার উপক‚লে পৌঁছায়। বেলা দুইটার দিকে ত্রাণবাহী জাহাজটি মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলের কাছে নোঙর করে। এরপর ছোট আকৃতির ট্রলার নিয়ে জাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী খালাসের চেষ্টা চালায় জেলা প্রশাসন। তবে এখানে ক্রেন না থাকাসহ নানা সমস্যায় বিকেল চারটার দিকে জাহাজটি আবার চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে রওনা দেয়।
জানা যায়, মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজটির মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হয়ে সোনাদিয়া উপক‚লে ত্রাণ খালাসের সিদ্ধান্ত ছিল। এ জন্য সব প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। তবে সোনাদিয়ায় ত্রাণসামগ্রী খালাসে নানা সমস্যা দেখা দেয়ায় জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে পাঠানো হয়।
এ জাহাজে আছে আট লাখ ডলার মূল্যের খাদ্যসামগ্রী, ৫০ লাখ ডলার মূল্যের কাপড়চোপড় এবং সাড়ে তিন লাখ ডলার মূল্যের অন্যান্য জিনিসপত্র রয়েছে। এই জাহাজে অবস্থান করছেন ১৩টি দেশের দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক, চিকিৎসক দল ও সংবাদকর্মী। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছেÑ কাপড়চোপড়, কম্বল, ওষুধ-পথ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী।
৬৫ হাজার রোহিঙ্গার চলবে দেড় মাস
কক্সবাজার অফিস জানায়, এদিকে, শুরু থেকে নীপিড়ন ও হত্যা যজ্ঞের কড়া প্রতিবাদ করে আসছিল মালয়েশিয়া সরকার। এ ব্যাপারে একসাথে প্রতিবাদ জানাতে বিশ্বমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রতিও আহবান জানান মালয়েশিয়া রাষ্ট্রপ্রধান নাজিব রাজ্জাক। মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব আব্দুল রাজ্জাক। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতির নির্দশন সরূপ ত্রাণবাহি এ জাহাজটি পাঠানো হয় বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে বিবিসি সূত্রে মতে, মালয়েশিয়ার পাঠানো ওই জাহাজে করে আসা ত্রাণ সামগ্রী সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৬৫ হাজার রোহিঙ্গাদের দেড় থেকে দুই মাসের খাবারের সংস্থান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ত্রাণের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী ছাড়াও নানা ধরনের সামগ্রী রয়েছে। খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে বিস্কুট, চাল, চিনি, ময়দা এবং ভোজ্য তেলও রয়েছে।
এছাড়াও পাশাপাশি বাথ টাওয়েল, স্যানিটারি প্যাড, টুথব্রাশ, ডেটল ইত্যাদি সামগ্রীও রয়েছে বলে জানাগেছে।



 

Show all comments
  • মোমিনুল ইসলাম ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০৮ পিএম says : 0
    মালয়েশিয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • নিজাম ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০৯ পিএম says : 0
    মানবাধিকার ব্যাপারীদের মালয়েশিয়ার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • hassan m chy ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৫:৫৪ পিএম says : 0
    জাহাজটির গতি পরিবর্তন করে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত হয়---reporter ei part sotik noy. yangoon ey thilwa port ey jahajti 500 ton unload korey plan onusharey bangladesh eshechey
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গাদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ