Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশনই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে না

উপ-সম্পাদকীয়

| প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর : বেকারের কাছে চাকরি, সেই চাকরি থেকে বেতন আর সেই বেতনে পরিবার-পরিজনের জীবন নির্বাহ যে কতটা পরিতৃপ্তির সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের মানুষ অনেক দিন থেকে একটি ভোট না দিতে পারার বেকারত্বে ভুগছে। তাদের কাছে ভোট প্রদানের নিশ্চয়তাই এখন সবচেয়ে বড় চাওয়া। কেন এবং কীভাবে ভোট দেয়ার অধিকার হারিয়ে গেছে সে আলোচনা নতুন করে না করলেও এতটুকু বলা যায় এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দায়ই সর্বাধিক। মাঝেমধ্যে সরকারি দলের কেউ কেউ বলে থাকেন, বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেয়াই সব অনিষ্টের মূল। যারা এসব কথা বলছেন, তারা ঠিক না বুঝেশুনে বলছেন তা বলা যাবে না। তবে যা বলছেন, তাতে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কোনো পরিচয় নেই। কথা যাই হোক, এটা সকলেই জানেন, কেন এবং কোন বাস্তবতায় ২০১৪ সালে বিএনপি এবং সমমনারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ব্যাপারটি যদি এমন হতো যে, বিএনপির অভিযোগ এবং যুক্তি অর্থহীন তাহলে যে নির্বাচনটি নির্বাচন কমিশন করেছে সেটি নিরপেক্ষ করতে সমস্যা কোথায় ছিল? প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন না করে যারা নির্বাচন করতে চেয়েছিল তাদের মধ্যেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যেত। আসলে যারা নির্বাচন করেছেন তাদের মনে এক ধরনের চিন্তা ও ভীতি কাজ করেছে। সেই নির্বাচন পরিচালনাকারী নির্বাচন কমিশন অর্থাৎ রকিব কমিশন এখন অতীত। বিদায়ের সময় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করা ছাড়া উপায় ছিল না। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এ নির্বাচন করা প্রয়োজন ছিল। বিনা ভোটে রেকর্ড সংখ্যক এমপি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেছেন, প্রতিপক্ষ মাঠ ছেড়ে দিলে এমনটি হবেই। এটি ছিল রাজনৈতিক খেলা। মূলত তার বক্তব্যও রাজনৈতিক চাল। তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, দেশে কথায় কথায় মারামারি বেড়ে গেছে। এটা এক ধরনের সামাজিক অবক্ষয়। মানুষের মধ্যে সহিষ্ণুতার অভাবের কারণে হানাহানি বেড়েছে। তার কথা, নতুন নির্বাচন কমিশনের সবাই অভিজ্ঞ, তারা সফল হবেন, এটাই আমরা আশা করি।
বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বাস্তবতার কথা তুলে ধরে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তার দায় থেকে তিনিও মুক্ত নন এবং এর ব্যাপ্তিও অনেক দূর বিস্তৃত। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। এখানে যারা নিয়োগ পান তাদের মূল কাজ সংবিধানের চেতনাকে তুলে ধরা। সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করা। এ যাবৎকাল যারা এ পদে থেকেছেন তারা প্রায় সকলেই বিদায়ের সময়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন। বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার তো একজন সাবেক আমলা ছিলেন। এমনিতেই আমলাদের সম্পর্কে বলা হয় দায়িত্বে থাকাকালে তারা বিড়াল আর অবসরে গেলে একেকজন বাঘে পরিণত হন। সে যাই হোক, এখন বাংলাদেশে যত ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিরতা, হানাহানি, অসহিষ্ণুতা চলছে এসবই মূলত ২০১৪ সালের নির্বাচনের সূত্র ধরে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেখানে সাংবিধানিক নির্দেশনা সেখানে প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন পরিচালনা করেও বিষয়টিকে তিনি যেভাবে সময়ের প্রয়োজনীয়তা বলে উল্লেখ করেছেন তা মূলত তার শপথের সাথে মেলে না। কী করা যেত তা নিয়ে তিনি যদি জাতির কাছে জানতে চাইতেন অথবা সংবিধানের নির্দেশনার বাইরে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাতেন তাহলে হয়তো তিনি নিজেই টের পেতেন কীভাবে জাতির ইতিহাসে একজন সাহসী এবং দেশপ্রেমিক সিইসি নন্দিত হওয়া যায়। এখন আর সে কথা বলে লাভ নেই। এ কারণে এটা বলা যে, দায়িত্ব পালন করতে না পারলে পদে থাকার চেয়ে না থাকাই উত্তম। এখানে আপস বা কৌশলের কথা বলে কোনো লাভ নেই। কার্যত বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এ ধরনের কলঙ্কজনক নির্বাচন যেহেতু আর হয়নি তাই তিনি এর রূপকার হিসেবেই নির্ধারিত স্থানে থাকবেন। এর দায় গণতন্ত্রীদের ওপর চাপিয়ে পার পাবার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেছেন, যারা আসছে তারা অভিজ্ঞ এবং তারা সফল হবে। ব্যাপারটি অবশ্যই ভাববার। কারণ, রকিব কমিশনের কারণে দেশের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে সফলতার বিকল্প কিছু নেই। আর এই সফলতার অর্থ হচ্ছে, যে নির্বাচনের ওপর জনগণ আস্থা হারিয়েছে তা পুনরুদ্ধার করা। আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু না হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তার দু-একটি আলামত গত কিছু দিনে পাওয়া গেছে। বিগত কমিশনের করা ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনে নির্বাচিত একজন পৌর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিজ হাতে সাংবাদিককে গুলি করে মেরে ফেলার অভিযোগে উঠেছে। সে অভিযোগে ব্যাপক জনমতের চাপে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেকজন উপজেলা চেয়ারম্যান স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঘাড়ের ওপর দিয়ে হেঁটে গেছেন। কতটা অশিক্ষিত হলে কেউ এমন কাজ করতে পারে তা বোধহয় ভাবাও যায় না। সাধারণভাবে একজন মুসলমান এটা বিশ্বাস করেন যে, মানুষের ভালো-মন্দ লেখার ফেরেশতা কাঁধে থাকে। এদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে মানুষ ফেরেশতার সম্মান করতে গিয়ে ঘাড়ে বোঝা বহন করে না। ওই নির্বাচনে বিজয়ী অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে তো সরকারিভাবেই নেশার পণ্য বহনও সরবরাহসহ নানা গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সুতরাং দেশ উচ্ছন্নে যাবার যে প্রক্রিয়া-প্রবণতা সক্রিয় তার নাটের গুরু হচ্ছে রকিব কমিশন। অবস্থা যদি আরো এগোয় তাহলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বোধকরি লিখে বুঝানোর দরকার নেই। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সকল মহলই আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয় সেজন্য সাধ্যমতো প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রাখার জন্য সংলাপ-সমঝোতার আহ্বান জানানো হয়। সেই আহ্বান অথবা রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে গত ডিসেম্বর মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু হয় বিএনপিকে দিয়ে। এরপর ৩১টি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কমিশন গঠন উপলক্ষে তার পূর্বসূরির পথ ধরে সার্চ কমিটি গঠন করেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথেও একান্ত বৈঠক করেন। গঠন করে দেয়া সার্চ কমিটি এবার বেশ খানিকটা ব্যতিক্রমী অবস্থান নেয়। কমিটি দেশের বিশিষ্টজনদের সাথেও মতবিনিময় করেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে পেশাদারি ও মানবিক গুণাবলী বিবেচনা করে অনুসন্ধান কমিটিকে নাম সুপারিশ করার পরামর্শ দেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা আশা করেন, সার্চ কমিটির সুপারিশ ধরে দলনিরপেক্ষ বিবেকবান, সাহসী, প্রজ্ঞাবান, পরিশ্রমী ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে ইসি গঠন করা হবে, যাদের মেরুদ- থাকবে শক্ত। কোন হুমকিকে পরোয়া করবে না। তাদের এই প্রত্যাশার সাথে জাতির প্রত্যাশা ছিল সঙ্গতিপূর্ণ। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার পরে প্রেসিডেন্ট জাতিকে আশ্বস্ত করেন, প্রস্তাব ও মতামত বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
অবশেষে প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে ১২তম নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে এই নিয়োগ-আদেশ জারি করা হয়েছে। শপথ গ্রহণের তারিখও নির্ধারিত হয়েছে। নিয়োগ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকেই তাদের নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রস্তাবিত তালিকা থেকে দুজন করে নাম সুপারিশ করেছে সার্চ কমিটি। এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মাহবুব তালুকদার ও ড. তোফায়েল আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবদুল মান্নান ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীর নাম সুপারিশ করা হয়েছে। এবারের কমিশনে ব্যতিক্রম রয়েছে। প্রথমত এটা বলতে হবে, রাজনৈতিক সুপারিশকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত এই প্রথম একজন নারী কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। তবে মজার ব্যাপার হলো, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণ অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আরো দুজন এসেছেন প্রায় অনুল্লেখযোগ্য একটি দলের প্রস্তাব থেকে। ১৪ দলের শরিক দল এই তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব তার দল থেকে আলোচ্যদের মনোনয়ন দেয়া সম্পর্কে বলেছেন, তাদের কারো সঙ্গে তাদের দেখা বা কথা হয়নি। তাদের তারা চেনেন না। তারাও তাদের চেনেন না। তবে তারা নাকি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন কর্মক্ষেত্রে তারা সৎ ও দক্ষতার সঙ্গে দয়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। ৭৩ ব্যাচের ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের চাকরিচ্যুতির ঘটনাটি ঘটেছিল শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে। তখন তিনি কুমিল্লার ডিসি ছিলেন। আদালত সে বিষয়টি যথেষ্ট মনে করেনি বিধায় আদালতের রায়ে তিনি চাকরি ফেরত পেয়েছিলেন। তবে সে চাকরি তিনি মাত্র একদিন করেছিলেন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একটি রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা থেকে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম আরো দু-একজনের সাথে। ওয়ার্ড কমিশনারের এক ধরনের খেয়ালিপনা ও আরো কিছু বিষয়ের কারণে তার সাথে দেখা করতে হয়েছিল। তিনি কথা রেখেছিলেন, রাস্তাটি করে দিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি সিইসি নির্বাচিত হওয়ার পর তার পরিচিতজনদের সাথে এ নিয়ে আলাপকালে তারা জানালেন, দেখুন বিএনপি আমলে তার চাকরিচ্যুতি ঘটেছিল। তবে তার সাথে যে ২৪ জনের চাকরি গিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল তাদের চাকরি ফেরত দেয়ার পর তিনি মাত্র একদিন চাকরি করে ইস্তেফা দিয়েছেন। ওই সরকারের সাথে তিনি চাকরি করেননি। তার পেশাগত জীবনের সততা নিয়ে কখনো কেউ প্রশ্ন তোলেনি। মনে করা হয়, তিনি ভাঙবেন কিন্তু মচকাবেন না। মূলত ৭৩ ব্যাচ কেবলমাত্র মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিল। এরপর তাদের সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে কয়েক মাসে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। দেশের বর্তমান প্রশাসনে সোভিয়েত প্রশিক্ষিত এবং সেখান থেকে ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা ও প্রভাব দুটোই কম নয়। যাইহোক, সঙ্গত বিবচনা থেকেই এবারের নতুন নির্বাচন কমিশনের আলোচনা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্তৃতি লাভ করেছে। সেই সাথে বিএনপি আমলে চাকরিচ্যুত একজন কর্মকর্তাকেই কেন বেছে নেয়া হয়েছে সে প্রশ্নও উঠে এসেছে। অনেকে বলছেন, সরকারি দল আনুষ্ঠানিকভাবে নাকি সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। এর আগের বারও তার নামই প্রস্তাব করা হয়েছিল। সে জায়গায় সার্চ কমিটি দিয়েছিল রকিবউদ্দীনকে। এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রচন্ড দলীয়করণের অভিযোগ রয়েছে। সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রয়োজনে দলনিরপেক্ষ দক্ষ ও মেরুদ-সম্পন্ন কমিশনের প্রয়োজন। নতুন কমিশন গঠনের পরও বিভিন্ন মহল থেকে সে কথাই বলা হচ্ছে। তারা মনে করে কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ করা দরকার কে কতটা সফল। সফলতার প্রাথমিক সূচকে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনের ব্যাপারটি। এ আস্থা অর্জনের ব্যাপারটি মূলত নির্ভর করে কমিশনের কাজের ওপর। নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তিনি সাংবিধানিক দায়িত্ব সততার সাথে পালন করবেন। সেক্ষেত্রে তার কাছে ভোট একটি আমানত। এটি সাংবিধানিক আমানত। জনগণ যাতে তাদের ভোট দিতে পারে সে কাজটির পরিবেশ তৈরি করতে পারাই প্রাথমিক কাজ।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে ধরনের জনবল প্রয়োজন তা নির্বাচন কমিশনের নেই। আইনগতভাবে নির্বাচনকালীন সবকিছু নির্বাচন কমিশনের আওতায় থাকলেও এর কোনো প্রভাব নেই। কারণ সকলেই জানে, এই ক্ষমতা মাত্র কদিনের। বর্তমানে প্রশাসন যেভাবে সাজানো রয়েছে সে প্রশাসন দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কার্যতই কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, সর্বশেষ তিন বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার ওপর জনগণের মনে এক ধরনের অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নষ্ট, নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থার সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ না করার অভিযোগ রয়েছে বিগত কমিশনের বিরুদ্ধে। তারা মনে করেন, অতীত অভিজ্ঞতা মতে, দলীয় সরকারের অধীন সব নির্বাচনে দলীয় সরকারই জয়ী হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ করতে হলে শুধু কমিশন নয়, সরকারের ভূমিকাও মুখ্য থাকবে। প্রকৃত প্রস্তাবে নির্বাচনের জন্য লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করাই হচ্ছে মূল বিষয়। এ জন্য কাজ শুরু করা না গেলে কেবল কমিশন বা অন্য ব্যবস্থাপনা কোনো সুফল দেয়ার কথা নয়। এটি তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক যে অবস্থা চলছে তাতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রবণতা চলছে। এক সময়ে বিএনপি জোটে থাকা এখন বেরিয়ে যাওয়া একজন নেতা সরকারের একটি ফন্দির কথা বলেছেন। তার মতে, বেগম জিয়াকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ঐক্য হচ্ছে। এটা কোনো রাজনৈতিক ফর্মুলা নয়, হতে পারে না। কারণ যেখানে বেগম জিয়া বা তার সমর্থন নেই সেটি বিএনপি নয়। অন্যদিকে এটি অনেক পুরনো ফর্মুলা। আবার কেউ কেউ বলছেন, গোপনে গোপনে বিএনপিকে সুনির্দিষ্ট কিছু আসন দিয়ে খায়ের খা সরকার গঠনই মূল কৌশল। যেসব বা যত ধরনের কৌশলের কথাই বলা হোক না কেন, এসবই প্রমাণ করে আগামী নির্বাচন বিএনপি ছাড়া অসম্ভব এবং এটাও ঠিক যে, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বেগম জিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এসব এখনো অনেক পরের কথা। প্রাথমিক কথা হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। অবশ্যই এটা মনে রাখতে হবে, নির্বাচনে জনগণই শেষ কথা। সে কারণেই জনগণ যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে এবং সেই ভোটের সঠিক গণনা হতে পারে সে জন্যই নির্বাচনী ব্যবস্থায় সব ধরনের ভারসাম্য নিশ্চিত করা জরুরি। এ দায়িত্ব সরকারের, দেশের রাজনৈতিক দলের, সকলের। সংশ্লিষ্ট সকলে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভাবনায় থাকবে- এটাই প্রত্যাশিত।
[email protected]




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ