Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন কমিশন : আওয়ামী লীগের আস্থা বিএনপির সন্দেহ-সংশয়

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান : অনেকেই বলছেন, যেই লাউ সেই কদু। বলা বহুল্য, নবগঠিত নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে এই উক্তি। যেই পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ২০১২ সালে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল, এই ২০১৭ সালেও সেই একই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি অনুসারেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। তবে এবার ব্যতিক্রম হিসেবে নাগরিক সমাজের ১৬ জন প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশকৃত নামের তালিকা থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন। এবারও প্রেসিডেন্ট একইভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও একজন মহিলাসহ চারজন কমিশনার নিয়োগ করেছেন। কিছু আগে যে ব্যতিক্রমের কথা উল্লেখ করেছি, সেটা হতে পারে লোক দেখানো, কিংবা কৌশলও হতে পারে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় কোনো কাজে আসেনি।
বিগত সার্চ কমিটির প্রধানকে এবারও সার্চ কমিটির প্রধান করায় প্রশ্নটা শুরুতেই উঠেছিল। অনেকেই সন্দেহ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, আরেকটি রকিব কমিশনই আসছে। নতুন হুদা কমিশন রকিব কমিশন হবে কিনা এখনো বলার সময় আসেনি। যারা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করেন তারা রকিব কমিশনের মতো কোনো আজ্ঞাবহ কমিশন দেখতে চান না। হুদা কমিশন আজ্ঞাবহ কমিশন না হোক, এটাই তারা কামনা করেন।
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি, দলীয় সরকার সব সময়ই তার পছেন্দের নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চায়। এ জন্য সে নানা কৌশল অবলম্বন করে এবং অবশেষে দলীয় অনুগত ব্যক্তিদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করে। দলীয় সরকার চায় এমন ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশনের আসুন, যারা সরকারি দলের পক্ষে কাজ করে বিজয় ত্বরান্বিত ও নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। কোনো দলীয় সরকারই এ সুযোগ-সুবিধা হাতছাড়া করতে রাজি নয়। দলীয় সরকার দলনিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ ও সাহসী ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চায় না। এতদিনেও যে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন প্রণীত হয়নি তার পেছন এটি একটি বড় কারণ। সদ্য বিদায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে তা গঠন করা হয়েছে যারা প্রত্যেকেই সরকারি দলের অনুগত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কার্যক্ষেত্রেও তারা দলের বা সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে তাদের আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে গেছেন। ২০১৪ সালে যে ভোটারবিহীন, একতরফা, অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন ওই কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেরকম নির্বাচন কখনোই হতে পারত না যদি তার সদস্যরা দলানুগত না হতেন। তারা যদি দল নিরপেক্ষ ও সাহসী হতেন, প্রতিষ্ঠান ও নিজেদের পদমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হতেন, তাহলে ওই নির্বাচন করতেন না।
এ কারণেই এবার যখন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি সামনে আসে তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং ব্যাপক অর্থে জনগণের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে, আর রকিব কমিশনের মতো কমিশন নয়। তার বদলে এমন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক, যা হবে শক্তিশালী, সাহসী ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যার সদস্যরা হবেন দক্ষনিরপেক্ষ, দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং অনুরাগ-বিরাগের ঊর্ধ্বে। এই প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে, তা অস্পষ্ট নেই। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর যে প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন মহল থেকে পাওয়া গেছে তার মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই বেশি। ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া কেবল সরকারি দল ও মহল থেকেই পাওয়া গেছে।
নতুন নির্বাচন কমিশনে দারুণ খুশি আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট। তারা মনে করছে, তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়েই কমিশন গঠিত হয়েছে। পাঁচজনের কমিশনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চারজনই এসেছেন ক্ষমতাসীন দল ও তার শরীক দলের নামের তালিকা থেকে। তাদের উচ্ছ্বসিত হওয়া তাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে সংসদে সরকারঅনুগত বিরোধী দল হিসেবে বিবেচিত জাতীয় পার্টি নতুন নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার কথা জানিয়েছে। খবরে জানা গেছে, সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নামের তালিকা প্রেসিডেন্টকে দিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট তার মধ্যে থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চারজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ওই পাঁচটি নামের চারটিই এসেছে ১৪ দলীয় জোটভুক্ত বিভিন্ন দলের নামের তালিকা থেকে। ওই চারজনের নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ও গণতন্ত্র পার্টি। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের পাঁচজন সদস্যের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তালিকা থেকে একটি করে নাম নেয়া হয়েছে। আর ১৪ দলীয় জোটের শরিক তরীকত ফেডারেশনের পাঁচজনের তালিকা থেকে তিনজন এবং গণতন্ত্রী পার্টির পাঁচজনের তালিকা থেকে দুজনকে নেয়া হয়েছে। একই নাম বিভিন্ন দলের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
অনেকেই বলছেন, এখানে সরকার বা আওয়ামী লীগ একটি কৌশল অবলম্বন করেছে। দলের তরফে যে নামগুলো দেয়া হয়েছে তা মূলত নামকাওয়াস্তেই দেয়া হয়েছে। তার পছন্দের নামগুলো দেয়া হয়েছে শরিক দলগুলোর মাধ্যমে। আর নাম ঠিক করার সময় সেই নামগুলোই বেছে নেয়া হয়েছে। দলের দেয়া পাঁচজনের তালিকা থেকে একজন এবং বিএনপির দেয়া পাঁচজনের তালিকা থেকে একজন নিয়ে একটা সমতা বিধান করা হয়েছে, যাতে কেউ বলতে না পারে আওয়ামী লীগের তালিকা থেকেই বেশি কমিশনার নেয়া হয়েছে।
এই কৌশলটি সার্চ কমিটি হয় ধরতে পারেনি আর না হয় কৌশলটি বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করেছে। সার্চ কমিটির দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের সদস্য হওয়ার যোগ্য ১০ জন ব্যক্তির নাম প্রেসিডেন্টের কাছে পেশ করা, যারা মূলত হবেন দলনিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। তার এ কাজ সহজ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ৩১টি দলের কাছে পাঁচজন করে নাম প্রস্তাব করতে বলেছিলেন। সে মোতাবেক চারটি বাদে বাকি দলগুলো পাঁচজন করে নামের প্রস্তাব করে। সার্চ কমিটি, মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবকৃত নামগুলোকেই অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে এবং সম্ভবত যাদের নাম বিভিন্ন দলের তালিকায় সবচেয়ে বেশি এসেছে তাদেরই চূড়ান্ত তালিকায় স্থান দিয়েছে। ফলে বিভিন্ন ছোট দলের নামের তালিকাই অধিক গুরুত্ব পেয়ে গেছে। সার্চ কমিটি হয়তো ‘গণতন্ত্রকে’ মূল্য দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করেছে। কিন্তু তার ‘গণতন্ত্রমনস্কতা’ মার খেয়েছে সরকার বা সরকারি দলের কৌশলের কাছে। আর সেটা যদি না হয়, তাহলে বলতে হবে, সার্চ কমিটি সরকার বা সরকারি দলের ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে।
বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা তাদের হতাশা ও ক্ষোভের কথা জানিয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে বলা হয়েছে, একজন বাদে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি বিএনপিবিদ্বেষী এবং ‘জনতার মঞ্চের’ লোক। চাকরি জীবনে তিনি আওয়ামী লীগের অন্ধ সমর্থক ছিলেন এবং সরকারি চাকরির আচরণবিধি লংঘন করে সচিবালয় থেকে মিছিল করে রাজনৈতিক আন্দোলন মঞ্চে শামিল হন। ওদিকে ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জোটের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে। নির্বাচন কমিশনে কাদের রাখা হবে এটা শাসক মহলের ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ‘রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা তা মেনে নেব’, শাসক দলের তরফে এই বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী যেহেতু দুটি বাদে অন্যসব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য সুতরাং সঙ্গতকারণেই আমরা বলতে পারি, নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
জানা গেছে, খোদ সার্চ কমিটিও নির্বাচন কমিশন নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্টি হতে পারেনি। কমিটির তরফে যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল তার মধ্যে তিনজন ছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। তাদের কাউকেই নির্বাচন কমিশনে রাখা হয়নি। এতে সার্চ কমিটির কোনো কোনো সদস্য ক্ষুব্ধ ও বিব্রত হয়েছেন। সার্চ কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘নাগরিক সমাজের অন্তর্ভুক্তি চেয়েছিলাম। কারণ তাদের জ্ঞান নির্বাচনের সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে পারতো। আস্থার জায়গা তৈরি করতে তারা ভূমিকা রাখতে পারতেন।’ সার্চ কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, তারা যেসব ব্যক্তির কথা ভেবেছিলেন চূড়ান্ত তালিকায় তাদের সংখ্যা কম। এ জন্য তাদের কেউ কেউ বিব্রত। একজন সদস্য বলেছেন, ‘আমরা যা করতে চেয়েছিলাম তা করতে পারিনি। এমনও হয়েছে যে, কমিটির ছয় সদস্য একমত হয়ে যে নামটি প্রস্তাব করেছেন, সেটিও বাদ পড়েছে।’ সার্চ কমিটির এসব সদস্যের অভিযোগপূর্ণ বক্তব্যের কি জবাব হতে পারে আমাদের জানা নেই। বুঝহ সুজন যে জান সন্ধান।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে সার্চ কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম বদিউল আলম মজুদার অভিযোগ করেছেন, সার্চ কমিটি বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে যে বৈঠক করেছিল তাতে সুস্পষ্ট মানদ-ের ভিত্তিতে সিইসি ও কমিশনার পদে নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। তাদের সুপারিশ ছিল জনগণকে আস্থায় রেখে নেয়া, স্বচ্ছতার চর্চা করা এবং গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিহার করার। এ ছাড়া কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে সিইসি ও কমিশনারদের নেয়া হলো তা প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়েছিল নাগরিক সমাজ। প্রকৃতপক্ষে তাদের এসব মতের কিছুই রাখা হয়নি।
তাহলে নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা, সার্চ কমিটি গঠন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ গোটা প্রক্রিয়া কি লোক দেখানো ছিল? এক ধরনের আইওয়াশ ছিল? কর্তার ইচ্ছাতেই যদি কীর্তন হবে, তাহলে এত আয়োজন, এত কথাবার্তা কেন? বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের পুরো প্রক্রিয়া লোক দেখানো ছিল কিনা, সেই প্রশ্ন তোলার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তা ছাড়া যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে সব কিছু হয়ে গেল সেটিও স্বাভাবিক ছিল না।
আওয়ামী লীগের লক্ষ্য আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন। শুধু নির্বাচনই লক্ষ্য নয়, নির্বাচনে জিতে আরও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করা। এ জন্য তার পছন্দ মতো একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা ছিল খুবই দরকার। সম্ভবত সে উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়েছে। তার মনপছন্দ ও কাক্সিক্ষত নির্বাচন কমিশনই হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের পথে এটা তার একটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য অর্জন। সব চেয়ে বড় কথা, তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হলেও তাকে প্রত্যাখ্যান করেনি। অন্যান্য বিরোধী দলের তরফেও এ নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য নেই। অবশ্য কোনো কিছু বলে বা করে কোনো লাভও নেই। নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা, সেটি সম্পন্ন হয়েছে। সরকার অনেকটা অনায়াসেই কাজটি করে ফেলেছে। এটা সরকারের জন্য বড় একটি স্বস্তির ব্যাপার বৈকি ! তবে সরকার, সরকারি দল ও মহল বাদে বিরোধীদল ও মহল যে এ নির্বাচন কমিশনে সন্তুষ্ট নয় তা তাদের প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট। সম্ভবত তারা অপেক্ষা করতে চাইছে, নির্বাচন কমিশনের আচরণ ও ভূমিকা কী হয়, সেটা দেখতে চাইছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কয়েকজন নির্বাচন কমিশনারের যেসব বক্তব্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে এ রকম একটা ধারণা তারা দেয়ার চেষ্টা করেছেন যে, কমিশন অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে বদ্ধপরিকর। তারা অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হবেন না। কোনো দলবাদী ভূমিকা নেবেন না। তারা সততা, নিষ্ঠা, নিরপেক্ষতা, দক্ষতা ও বিবেকবোধ সমুন্নত রেখে দায়িত্ব পালন করবেন। তারা কোনো মহল দ্বারা প্রভাবিত হবেন না এবং তাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা থাকবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করার। তারা তাদের এসব অঙ্গীকার কতটা পরিপূরণ করতে পারবেন সামনের দিকগুলোতেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। তবে তাদের এসব কথা ইতিবাচক। যেহেতু এই নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো একাদশ সং সদ নির্বাচন পরিচালনা, সুতরাং সেই নির্বাচনেই তার পরিচয় এবং দক্ষতা, যোগ্যতা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতার পরীক্ষা হয়ে যাবে। এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, রাজনৈতিক দল ও জনগণের একাংশের আস্থার অভাব রয়েছে এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি। তাই তার দায়িত্ব পালনকে সহজ ও সফল করার জন্য সকল দল মতের মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। সকলের আস্থা, সমর্থন ও সহযোগিতা পেলেই কেবল তার পক্ষে সফল হওয়া সম্ভবপর হতে পারে। নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্টেকহোল্ডার হলো রাজনৈতিক দলসমূহ। তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। জনগণের আস্থাও অর্জন করতে হবে। এটা নির্বাচন কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য। অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়াই হতে হবে নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য এবং তা বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে খুব সহজ কাজ নয়। স্বীকার করতেই হবে, সাংবিধানিক যে ব্যবস্থা এখন রয়েছে, রয়েছে সরকারের প্রতি নির্বাচন কমিশনের মুখাপেক্ষতা, তাতে সরকারের সদিচ্ছা ও সহযোগিতা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করা দুরূহ। সরকার যদি সত্যি সত্যিই প্রশ্নহীন, বিতর্কহীন প্রত্যাশিত নির্বাচন কামনা করে তাহলে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে ও হস্তক্ষেপমুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সকল ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূতভাবে সহযোগিতা দিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ