Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিষাক্ত তামাক চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রতন বৈষ্ণব, রামগড় (খাগড়াছড়ি) ত্রিপুরা থেকে : খাগড়াছড়ি রামগড় উপজেলায় লাচারী পাড়া, বৈদ্যপাড়া, অভ্যা, লক্ষীছড়া, পাতাছড়া, দাতারাম পাড়া, হাজাছড়া, অংতুপাড়া গ্রামে অবাদে চলছে ৩টি তামাক চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোর ধুম। পাহাড় থেকে কচি কাঠ সংগ্রহ করে উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় শত শত একর ফসলি জমি নষ্ট করে দিয়ে বিষাক্ত তামাক শুকানোর কাজে বিপুলসংখ্যক কাঠ পোড়ানো হচ্ছে তামাক চুল্লিতে। রামগড় উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের কচি গাছ নির্বিচারে কাঁটার ফলে ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, রামগড় উপজেলা প্রাণ কেন্দ্র থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাহাড়ি এলাকায় শত শত একর ফসলি জমি লিজ নিয়ে ব্যাপকহারে বিষাক্ত তামাক চাষ করা হচ্ছে। কাঁচা তামাক পাতা শুকানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় এক ধরনের চুল্লি নির্মাণ করা হয়। এসব চুল্লিতে হাজার হাজার মণ কচি কাঠ পোড়ানো হয় জ্বালানি হিসাবে এক তামাক চাষি জানান, এক লোডিংয়ে দুইশ কেজি কাঁচা তামাক পাতা শুকানোর জন্য ৯০ থেকে ১শ মণ কাঠ পোড়াতে হয়। বিষাক্ত তামাক চাষ গত কয়েক বছর থেকে শত শত একর ফসলি জমিতে চাষ করা হচ্ছে। এসব এলাকায় বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ও আবুল খায়ের গ্রুপের পক্ষে চাষিরা নির্বিচারে তামাক চাষ ও শুকানোর কাজে কাঠ পোড়ানোর উৎসবে ব্যস্ত রয়েছে। এখন প্রতিমণ ৫৫-৬০ টাকার বিনিময়ে এলাকার দরিদ্র জনগণ তামাক কোম্পানির কাছে বিক্রি করে থাকে এসব কাঠ। তামাক চাষিদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সুবিধাভোগী একশ্রেণির মহাজন ও প্রভাবশালী দাদন ব্যবসায়ীর পাশাপাশি অনেক টোব্যাকো কোম্পানি পার্বত্য এলাকার সহজ-সরল ও অজ্ঞ চাষিদের বোকা বানিয়ে সহজ শর্তে সরবরাহকৃত ঋণ এবং কীটনাশকের নামে সুকৌশলে চড়া সুদ আদায় করে নিচ্ছে। এছাড়াও সময় মতো টোব্যাকো কোম্পানিগুলোর চাহিদা মাফিক তামাক সরবরাহ করতে না পারলে বা কোনো কারণে ফসল ভালো না হলে দাদনের টাকা দ্বিগুণ হিসাব করে পুনরায় পরবর্তী বছরের জন্য দাদন প্রদান করছে। এতে করে কৃষকের কষ্টার্জিত অর্থ ব্রিটিশ নীলকরদের কায়দায় ট্যোবাকো কোম্পানি, দাদন ব্যবসায়ী ও মহাজনদের হাতে চলে যাচ্ছে। কয়েকজন তামাক চাষিরা আরো জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভ ও তামাক কোম্পানি থেকে অগ্রিম নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। ১ একর জমিতে অন্য ফসল আবাদ করলে যেখানে ১৫-২০ হাজার টাকার ফসল উৎপাদিত হয় সেখানে তামাক চাষের মাধ্যমে ৫০-৬০ হাজার টাকার তামাক উৎপাদন করা যায়। তবে তারা হতাশা প্রকাশ করে জানান, তামাক চাষের ফলে স্থানীয় হাটবাজারে তরিতরকারীর চরম সংকট দেখা দিয়েছে। রামগড়ে পরিবেশ বাদীগণ মনে করেন, তামাকের চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা কাঠ পোড়ানোর দরুণ একদিকে যেমন পাহাড় অঞ্চল ন্যাড়া হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, ফলে ধানসহ বিভিন্ন শাকসবজির চাষাবাদ দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। রামগড় পাহাড়ঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক র্কমকর্তা ড. জলফিকার আলী ফিরোজ-মৃত্তিকাবিদদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিষাক্ত তামাক চাষের ফলে মাটি উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। ঐ জমি আর কোন ফসল উৎপাদন দূরের কথা বিষাক্ত তামাক চাষ পর্যন্ত হয় না। রামগড় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা কাছে এ  বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তা জানান, রামগড়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিষাক্ত তামাকের চাষ হচ্ছে বলে জানেন তবে তামাকের চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে এটা অবগত নন। এখন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-মামুন মিয়া বলেন, রামগড়ে বিভিন্ন এলাকায় তামাক চাষ হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে সুনির্দ্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় তামাক চাষ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে লোকজনদের এ ব্যাপারে সচেতন ও নিরুৎসাহী করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তামাক চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে বন বিভাগের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ