দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুফতি পিয়ার মাহমুদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বিয়ে না করার কুফল ও ক্ষতি : ধর্মীয় ও পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে না করার ক্ষতি অনেক। প্রথমত সামর্থ্যবান পুরুষকে বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল। ফাযায়েলও বর্ণিত হয়েছে প্রচুর। যা আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। একজন মুমিনের জন্য আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের নির্দেশ লঙ্ঘন এবং তাদের তরফে বর্ণিত ফাযায়েল অর্জন না করার চেয়ে ক্ষতিকারক বিষয় আর কি হতে পারে? এতো ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে মাহরুম হওয়ার কারণ। সাহাবী আবু হুরায়রার বর্ণনা, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন- “দ্বীনদারী ও চারিত্রিক দিক বিবেচনায় তোমাদের পছন্দ হয়, এমন ব্যক্তি তোমাদের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দিলে (উপযুক্ত পাত্রীকে) তার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। যদি বিয়ে না দাও, তাহলে সমাজে বিরাট ফিতনা ও ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিবে। তিরমিযী:১/২০৭। উক্ত হাদীসের ভাষ্যমতে উপযুক্ত পাত্রপাত্রী পাওয়া সত্ত্বেও বিয়ে সম্পাদিত না হলে ভূখ-ে দেখা দিবে ফিতনা ও বিপর্যয়। কি সেই ফিতনা ও বিপর্যয়? তিরমিযী শরীফের অন্যতম ভাষ্যগ্রন্থ কুওতুল মুগতাযীতে উল্লেখ আছে- উক্ত হাদিসে ফিতনা ও বিপর্যয় দ্বারা উদ্দেশ্য হলো উপযুক্ত পাত্রপাত্রী থাকা সত্ত্বেও বিবাহ কার্য সম্পাদিত নাহলে অনেক নারী-পুরুষ অবিবাহিত অবস্থায় থেকে যাবে। ফলে যিনা-ব্যভিচার ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করবে। এতে অভিভাবকগণ শিকার হবেন অপমান ও লজ্জার। যার অনিবার্য ফল হিসাবে শুরু হবে দাঙ্গা ও খুনাখুনী। তিরমিযী:১/২০৭, টিকা নং-৪) এছাড়াও সামর্থ্যবান যুবকের বিয়ে না করাটা স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। ভেঙ্গে পড়ে শরীর। উড়ে যায় সুখনিদ্রা। মন্দা পড়ে কর্মস্পৃহায়। যুবসমাজ শিকার হয় কুচরিত্র ও অসভ্যতার। যার অনিবার্য প্রভাব আক্রমণ করে সমাজ জীবনকে। ফলে দূষিত হয় সমাজ ও রাষ্ট্র।
বিয়ের বিধান : এই বিয়ের হুকুম সর্বদা এক থাকে না। বরং বিয়ের হুকুম আবর্তিত হয় ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক অবস্থার বিবেচনায়। তাই বিয়ে ব্যক্তি বিশেষ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুআক্কাদা, হারাম, মাকরুহ, মুবাহ ও সুন্নাত বলে বিবেচ্য হয়। নিম্নে আমরা বিয়ের হুকুমগুলোর বিবরণ তুলে ধরলাম।
ফরজ : যদি কেউ বিয়ে না করলে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে বলে প্রবল আশংকা হয় আর বৈধ পন্থায় মোহর ও ভরণপোষণ করতেও সক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা ফরজ।
ওয়াজিব : যদি বিয়ে না করলে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার ভয় হয় কিন্তু ব্যভিচারে পড়েই যাবে এমন প্রবল আশংকা নেই। আবার বিয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণও আছে। হালাল অর্থে স্ত্রীর মোহর ও ভরণপোষণ করতেও সক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব।
সুন্নাতে মুআক্কাদা : বিয়ের প্রতি আকর্ষণ আছে। তবে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশংকা নেই। কিন্তু বিয়ে না করলে লঘু পাপের অধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হালাল অর্থে স্ত্রীর মোহর ও ভরণপোষণ আদায় করতে সক্ষম। স্ত্রী মিলনেও সামর্থ্যবান। এমন ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। এ অবস্থায় বিয়ে বর্জন করলে গুনাহ হবে। আর নিজেকে পাপমুক্ত রাখা ও বংশ বৃদ্ধির নিয়ত করলে সওয়াব হবে।
মুবাহ : বিয়ের প্রতি আকর্ষণ আছে। তবে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার কোন আশংকা নেই। হালাল অর্থে স্ত্রীর মোহর ও ভরণপোষণ আদায় করতে সক্ষম। এমন ব্যক্তি যদি পাপমুক্ত থাকা বা বংশ বৃদ্ধির নিয়ত না করে শুধু যৌন চাহিদা পূরণার্থে বিয়ে করে তাহলে এটা মুবাহ।
হারাম : যদি বদ্ধমূল বিশ্বাস থাকে যে, বিয়ে করলে স্ত্রী জুলুম ও নিপীড়নের শিকার হবে এবং স্ত্রীর যথাযথ হক আদায়ে ব্যর্থ হবে তাহলে এক্ষেত্রে বিয়ে হারাম।
মাকরুহ : বিয়ে করলে স্ত্রী জুলুম-নিপীড়নের শিকার হবে যদি এমন আশংকা হয়; বদ্ধমূল বিশ্বাস না থাকে তাহলে বিয়ে করা মাকরুহে তাহরীমী। (রদ্দুল মুহতার:৪/৬৩-৬৬; কিতাবুল ফিকহী-আলাল মাযাহিবিল আরকাআহ:৪/৬।
বিয়েতে অবহেলিত কিছু আমল :
অনেক সময় দেখা যায়। একপক্ষ অপরপক্ষকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। আলোচনাও পাকাপাকি। অথবা পাকাপাকি হয়নি কিন্তু আলোচনা চলছে। এ অবস্থায় তৃতীয় পক্ষ এসে বর কিংবা কনে পক্ষকে অন্য আরেক বিয়ের প্রস্তাব করে। অনেক সময় লোভে পড়ে বা অন্য কোন কারণে চলমান আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে প্রস্তাবকৃত বিয়ের আলোচনা শুরু করে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি নিষিদ্ধ কাজ। রাসূলুলাহ (সা.) ইরশাদ করেন- “তোমাদের কেউ যেন অপরের বিয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না করে।” (বুখারী:২/৭৭৩)। কেননা এতে পরস্পর সৃষ্টি হয় ঘৃণা ও দূরত্ব। দেখা দেয় সামাজিক অস্থিরতা। অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞা তখনই প্রযোজ্য হবে যখন প্রথম পক্ষ বিয়ের প্রস্তাব করার পর দ্বিতীয় পক্ষ তা আমলে নেয়। আর যদি আমলে না নেয় অর্থাৎ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কিংবা প্রস্তাবের পর হ্যাঁ-না কিছুই না বলে তাহলে অবশ্য অপর পক্ষের জন্য প্রস্তাব করার সুযোগ আছে। বিয়ের খুতবা : বিয়ের খুতবা পাঠ করা সুন্নাত আর নীরবতার সাথে শ্রবণ করা ওয়াজিব। এই খুতবা দাঁড়িয়ে দেয়া সুন্নত। বসেও দেয়া জায়িয আছে। (রদ্দুল মোহতার:২/৩৫৯; ফাতওয়া রহীমিয্যাহ:৮/১৪৭; মাহমুদিয়া:; ফাতওয়া:৫/৩৫)। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।