Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ের সুবিধা মিলছে অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদেরও

আলোচিত বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল সংসদে উত্থাপন

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের পাশাপাশি এবার অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদেরও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ বিয়ের বৈধতা এনে বাল্য বিবাহ নিরোধ বিলের চূড়ান্ত করা রিপোর্ট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে খসড়া আইনটি পরীক্ষা করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থাপন করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি রেবেকা মমিন।
বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে ওঠে গত ৮ ডিসেম্বর। বিলে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’
এখানে সংসদীয় কমিটি ‘কোনো নারীর’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ এবং ‘মাতা-পিতা’র সঙ্গে ‘প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের’ সম্মতির শব্দটি যোগ করেছে। অর্থাৎ বিলটি পাসের সময় সংসদে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হলে, নারীর পাশাপাশি পুরুষের ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রেক্ষাপটের বিধান প্রযোজ্য হবে। একই সঙ্গে ওই বিধানে বাবা-মা বা যেখানে প্রয়োজন সেখানে অভিভাবকের সম্মতির বিধান রাখা যুক্ত হবে। এছাড়া ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে, যা সংসদে উত্থাপিত খসড়া আইনে উল্লেখ ছিল না।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে তিনি সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের সম্মুখীন হতে হবে। আগের আইনে এই অপরাধে নারীর কারাদ-ের বিধান মওকুফ থাকলেও এবার তা নেই। তবে সংসদীয় কমিটি ১৫ দিনের পরিবর্তে এক মাসের কারাদ- এবং পাঁচ হাজারের বদলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদ-ের বিধান রাখার সুপারিশ করেছে।
ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়ে। প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এই বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ে উৎসাহিত হবে আশঙ্কা করে তা বাতিলের দাবি তুলেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এর জবাবে বিলটি সংসদে তোলার একদিন আগেই সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ‘অজ্ঞান’। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচেনায় রেখেই এই আইন করা হচ্ছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বলেন, বাল্যবিবাহ সারা বিশ্বের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ সমস্যাটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গার্লস সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নীচে বিয়ের হার শূন্যে, ১৫-১৮ বছর বয়সীদের বিয়ের হার এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি যুগোপযোগী আইন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশের মানুষ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানেন কিন্তু মানেন না। বাল্যবিবাহ বন্ধে সংসদে উত্থাপিত আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ