Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপনারা বিচার বিভাগকে ফেলে রেখেছেন

ষোড়শ সংশোধনীর শুনানিতে আপিল বিভাগ

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১২ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ : ৭ মার্চ ফের শুনানি
মালেক মল্লিক : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে আপিল বিভাগ বলেছেন, দেশের বিচার বিভাগের জন্য আইন থাকবে না? আইন করার জন্য (অ্যাটর্নি জেনারেল) আপনারাইতো অস্থির হয়ে গেলেন। এখন আবার পিছনে চলে যাচ্ছেন। সময় চাচ্ছেন। আপনারা কি ২০১৭ পার করতে চান? একটি দেশে বিচার বিভাগ এভাবে থাকবে? আপনারা আমাদের জুডিশিয়ারিকে (বিচার বিভাগ) ফেলে রেখেছেন। একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না। আমরা এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি। আমরা এটি বেশিদিন শুনবো না। লিখিতভাবে যুক্তি-তর্ক দাখিল করতে হবে। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের আট বিচারপতির বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
শুনানিতে আদালতকে সহযোগিতার জন্য সুপ্রিমকোর্টের ১২ জন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
১২ অ্যামিকাস কিউরি হলেনÑ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ ভুইয়া, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, এএফ হাসান আরিফ, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকী।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের করা ৮ সপ্তাহ সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন ধার্য করা হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিট আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেয়া রায় প্রকাশের পর তা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য রিট আবেদনকারীর পক্ষে গত বছর ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। পরদিন আপিল বিভাগ ওই আবেদনের ওপর ৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ছিল। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষ চার সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করে। আদালত ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। এ অবস্থায় গতকাল নির্ধারিত দিনে রাষ্ট্রপক্ষ আবারো সময়ের আবেদন করে।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের রায় অনেক বড়। মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে অনেক আইনি বিষয় জড়িত। তাই শুনানির প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন। এজন্য আট সপ্তাহ সময় প্রয়োজন।
আদালত বলেন, দেশের বিচার বিভাগের জন্য আইন থাকবে না? আইন করার জন্য আপনারাইতো অস্থির হয়ে গেলেন। এখন আবার পিছনে চলে যাচ্ছেন। সময় চাচ্ছেন। আপনারা কি ২০১৭ পার করতে চান? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমাদের প্রস্তুতির জন্য সময় দরকার। এ পর্যায়ে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তির কোনো আইন নেই। তাই এটা তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আমরা এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি। আমরা এটি বেশিদিন শুনবো না। লিখিতভাবে যুক্তিতর্ক দাখিল করতে হবে।  
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আট সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। প্রস্তুতির জন্য সময় দরকার। এক সপ্তাহে হবে না। আদালত বলেন, হাইকোর্টে আপনারা শুনানি করেছেন। সব আপনার জানা। তাই আপনি লিখিতভাবে যুক্তিতর্ক দাখিল করবেন। আপনারা এক ঘণ্টা করে শুনানি করবেন। আর আমরা অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্য শুনবো। ১২ জন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছি। তারাও লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য দাখিল করবেন। তাদের বক্তব্য ১০ মিনিট করে শুনবো। এ পর্যায়ে আদালত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল আপত্তি জানিয়ে বলেন, আমি আট সপ্তাহ সময় চেয়েছি। আর আপনারা দিচ্ছেন দুই সপ্তাহ।
আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষে কোনো কিছু আটকে থাকে না। আপনারা হাইকোর্টে বিস্তারিত শুনানি করেছেন। আপনি সব জানেন। আপনি সব বিষয়ে দক্ষ। আপনি অনেক বড় মাপের আইনজীবী। সরকারের আস্থাভাজন। আট বছর ধরে এ পদে আছেন। আমাদের কোনো সমস্যা হলে আমরাও আপনাকে ডাকি। আপনার ওপর আস্থা রয়েছে। আপনি যুদ্ধাপরাধের মামলা, জমিজমা সংক্রান্ত মামলা, ডেথ রেফারেন্স, সাংবিধানিক মামলাÑ সবই করেন। আপনি একজন দক্ষ আইনজীবী। এরপর আদালত ৭ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করেন।   
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে অর্পণ করা হয়। পরবর্তীতে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। আপিল বিভাগের রায়ে ৫ম সংশোধনী বাতিল হলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ব্যবস্থা রেখে দেয়া হয়। এরপর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই বছরের গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নয়জন আইনজীবী রিট আবেদন করেন। এ আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে নাÑ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। গত বছর ৫ মে আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ১৬তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচার বিভাগ

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ