Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডোমারের মডেল শিল্প কেঁচো সার প্রান্তিক কৃষকের আয় বৃদ্ধির নতুন উৎস

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ময়নুল হক, ডোমার (নীলফামারী) থেকে : ষাটের দশকের সবুজ বিপ্লব বাংলাদেশের কৃষি রাসায়নিক সার, কীটনাশক, হাইব্রিড বীজ, কলের লাঙ্গল পেলেও হারিয়েছে বাংলার আদি কৃষির অনেক উপকরণ। মাটির উৎপাদনশীলতার জন্য ক্ষতিকারক উপকরণগুলো কৃষকের জন্য এখন গলার কাঁটা। ভূমি হতে উৎপাদিত সকল ফসল এখন বিষযুক্ত। কারণ ভূমিকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে মৃতপ্রায় করা হয়েছে। এই সমস্যা বিজ্ঞানীরা অবগত থাকলেও কৃষকরা ততটা ভাবেন না। এই দায়ভার কার? কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বিক্রেতা, নাকি কৃষকদের নিজের? উত্তর পাওয়া যাবে একটাই আমাদের সবার। আমরা সবাই কৃষি ভূমিকে মৃতপ্রায় ভাবি এবং কেবলমাত্র উদ্ভিদ কেন্দ্র করেই কৃষি উপকরণ ব্যবহার করি। কিন্তু এখানেই গলদ। একটি উদ্ভিদের আঁধার হচ্ছে ভূমি যার মুখ্য উপাদান জৈব পদার্থ। এই জৈব পদার্থে বসবাসকারী অনুজীব গাছের জন্য রাঁধুনীর কাজ করে এবং গাছকে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। কিন্তু এখন এই জৈব পদার্থ বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্থানে ১ শতাংশেরও নিচে। এটা একটি অশনিসংকেত। অনেক সংস্থার একাধিক প্রকল্প ও প্রযুক্তি এর উন্নয়নে যথেষ্ট নয়। তাই এর উদ্যোগ কৃষকদেরই নিতে হবে। এমন ভাবনা ভাবা ও তাদের জন্য কাজ করা মানুষের সংখ্যা খুব কম। এমনই একজন মানুষ রামনিবাস আগরওয়ালা। নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার অধিবাসী এ উদ্যোক্তা দীর্ঘ ১৯ বছরের অধিক সময় ধরে জৈবসার উৎপাদান, কৃষকদের মাঝে ব্যবহার সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরবরাহ নিজে কাজ করছেন। এ উদ্যোক্তা প্রথম চিন্তা করেছিলেন বাংলাদেশের বাণিজ্যিকভাবে জৈবসার উৎপাদনের প্রয়োজন আছে এবং দীর্ঘ গবেষণার পরে ২০০০ সালে জৈবসার বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার জন্য প্রথম রাষ্ট্রপতি অনুমোদন লাভ করেন। এর পরবর্তীতে তিনি ২০০৬ সালে সার অধ্যাদেশ পরিবর্তন হলে প্রথম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়ে জৈবসারের বাজারজাতকরণ আরো বৃদ্ধি করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের জৈব বর্জ্য যেমনÑ গোবর, কচুরিপানা, খৈল, হাড়চূর্ণ, সিংচূর্ণ, কাষ্টচূর্ণ হাস-মুরগির বিষ্টা ইত্যাদি বিশেষ ধরনের অনুজীবের ব্যবহার করে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈবসারের উৎপাদন শুরু করেন এবং কেঁচো সারের একটা অংশ তার এই সারে যোগ করেন। তার মিশ্রণকৃত কেঁচো সারের প্রায় ৫০০ টনের বেশি অংশ তিনি সংগ্রহ করেন তারই সৃষ্ট ও প্রশিক্ষিত প্রান্তিক সরবরাহকারী অংশীদার প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে। এ জেলায় তিনি ৩০০-এর অধিক কৃষক পরিবারকে এ কাজের জন্য উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে তাদেরই গৃহস্থালি বর্জ্যরে ব্যবহার করে কিভাবে উন্নত মানের জৈবসার তৈরি, ব্যবহার ও ব্যবসা করা যায় তা শিখিয়ে মাইল ফলক সৃষ্টি করেছেন। এসব কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যেকে কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই গৃহস্থালি বর্জ্য দিয়ে কেঁচো সার তৈরী করে প্রতি মাসে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করছেন। তার এই জৈবসার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র্র দেবীগঞ্জ-পঞ্চগড়, সরেজমিন গবেষণা বিভাগÑ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, রংপুর, কৃষি গবেষণা কেন্দÑবাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বুড়িরহাট, রংপুর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামার, সোনারায়, ডোমার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আইএপিপি, আইএফএমসি প্রকল্পে, ব্র্যাক আলু বীজ উৎপাদন কর্মসূচি-বিরল, দিনাজপুর, ফেরদৌস বায়োটেক-ঢাকা, সুপ্রিম সীডসহ রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে সাধারণ কৃষকেরা ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাচ্ছেন। রামনিবাস আগরওয়ালার এ ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক কৃষি উপদেষ্টা ড. সিএস করিম, সুইজারল্যান্ড সরকারের রাষ্ট্রদূত ড. ডোরা রেপল্ড, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তিনজন মহাপরিচালক, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের ভিসি আব্দুর সাত্তার ম-ল ও মৃত্তিকা গবেষণা বিভাগের অধ্যাপকবৃন্দ, আইএফডিসি, এসডিসি, ডিএফআইডি, ড্যানিডা, সুইচকন্টাক্ট ক্যাটালিস্ট, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একজন মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন জেলার উপ-পরিচালক ও উপজেলা কৃষি অফিসারবৃন্দ এবং রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্যসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্থানীয় সরকারের অনেক কর্মকর্তাবৃন্দ। বিবিধ কারণে দেশে কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ফসলের নিবিড়তা ও বহুবিধকরণ দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিবেশ ঠিক রেখে সুষম কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে অন্নপূর্ণা জৈবসার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রামনিবাস আগরওয়ালার এই অবদান অক্ষুণœ থাকবে যদি তার মতো আরো অনেকে এ কাজে এগিয়ে আসে এবং সরকারসহ সকল পক্ষ এর গুরুত্ব বুঝে এর উন্নতিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ